সরকারি সংস্থার শীতলক্ষ্যা দখল-সরকারের শীর্ষ মহলের হস্তক্ষেপ চাই

ক্রমাগত নদী দখল ও ভরাট হওয়ার কারণে বাংলাদেশে রীতিমতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। বন্যা ও জলাবদ্ধতার কারণে বহু এলাকায় নিয়মিতভাবে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্বিপাক।


বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে নদী রক্ষার কোনো বিকল্প নেই বলে দেশীয় গবেষকদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গবেষকরাও মত দিয়েছেন। এই লক্ষ্যে দেশের সুধীজন ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন। সরকারেরও অনেকেই বিভিন্ন সময়ে তাঁদের বক্তব্যে এ দাবির যথার্থতা স্বীকার করেছেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই লক্ষ্যে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। নদীগুলোর সীমানা নির্ধারণ করে নদীতে যেকোনো হস্তক্ষেপ ঠেকানোর কথা বলা হয়েছে। জনদাবি এবং উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকারি সংস্থাই যদি সেই দাবি ও নির্দেশনা অমান্য করে তাহলে কে রক্ষা করবে এ দেশের নদীগুলোকে? প্রকারান্তরে বলা যায়, কে রক্ষা করবে এই দেশকে?
কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, পাওয়ার গ্রিড কম্পানি বাংলাদেশ (পিজিসিবি) চরসৈয়দপুর ও মদনগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে এরই মধ্যে ২৬টি পিলার-টাওয়ার নির্মাণ করেছে এবং আরো টাওয়ার নির্মাণের কাজ চলছে। এ কাজে তারা উচ্চ আদালতের নির্দেশ যেমন অমান্য করেছে, তেমনি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা শীতলক্ষ্যা নদীর সীমানা চিহ্নিত করে যে লাল পিলার দিয়েছে, সেগুলো অতিক্রম করে নদীর মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে এই পিলার-টাওয়ারগুলো। স্থায়ী অবকাঠামোর ওপর স্থাপিত এই টাওয়ারগুলো নদী ভরাট প্রক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করছে। আর এরই মধ্যে দখলদাররা অবৈধভাবে নদী দখলের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। বেশ কিছু ব্যক্তিগত স্থাপনাও গড়ে উঠেছে নদীতে। পাশাপাশি নদী দখলের অব্যাহত আয়োজন চলছে। স্থানীয়দের অভিমত, পিজিসিবির টাওয়ারগুলোই দখলদারদের উৎসাহী করেছে অবৈধভাবে নদী দখলের কাজে। এসব পিলার-টাওয়ারের কারণে দুটি লঞ্চঘাট ও একটি ফেরিঘাটও বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে। প্রকাশিত খবরে পিজিসিবির একজন পরিচালকের যে উক্তি পাওয়া যায়, তা উচ্চ আদালতের প্রতি চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ। তিনি বলেছেন, 'আমরা উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করেই করছি। ১৯১০ সালের বিদ্যুৎ আইন অনুযায়ী আমি যেকোনো পাবলিকের ঘরের মধ্যেও বিদ্যুতের খুঁটি পুঁততে পারি।' পিজিসিবির মনে রাখা প্রয়োজন, ক্ষমতার যথেচ্ছ প্রয়োগ কখনো সুফল বয়ে আনে না। দেশের স্বার্থে যেখানে নদী রক্ষা করা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে, সেখানে ১৯১০ সালের আইনে প্রদত্ত ক্ষমতার অপপ্রয়োগ কখনো কাম্য হতে পারে না। তার ওপর উচ্চ আদালতের রায়ও বিচারিক আদালতে আইনের মর্যাদায় গৃহীত হয়। তাকে অবজ্ঞা করা কোনো সুস্থ বিচারবুদ্ধির কাজ নয়। আমরা আশা করি, সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
« পূর্ববর্তী সংবাদ
       

No comments

Powered by Blogger.