তিন বাঘশিশু-বাঘমাতার কোলে ফিরে যাক শিশুরা

টাকা থাকলে নাকি বাঘের দুধও মেলে। এমন প্রবাদ বহুকাল ধরে প্রচলিত। তবে সত্যিকার অর্থে কেউ বাঘের দুধ সংগ্রহ করতে গিয়ে সাফল্য অর্জন করেছে কি-না সন্দেহ। টাকা থাকলে বাঘের দুধ মিলুক না মিলুক বাঘের বাচ্চা যে মিলতে পারে তা এখন নিশ্চিত করে বলা যায়।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গত সোমবার রাজধানীর শ্যামলীর একটি বাসা থেকে তিনটি বাঘশিশু উদ্ধার করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, পাচারের উদ্দেশ্যে বাঘশিশুগুলোকে সুন্দরবন থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল। মহামূল্যবান রয়েল বেঙ্গল টাইগারের এ শিশুরা বিক্রি হতে যাচ্ছিল সামান্য অর্থে। বাঘশিশুদের পাচার করার জন্য ঢাকা পর্যন্ত এদের নিয়ে আসার ঘটনা বিস্ময়কর। কেননা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাঘমাতা নিজের শিশুদের ব্যাপারে খুবই সংরক্ষণশীল। ফলে কোনো বাঘমাতাকে না মেরে তার শিশুদের কব্জা করা কঠিন। কিন্তু অর্থলোভী ব্যক্তিরা এ অসাধ্য কাজটিই করেছে। কোনো কোনো সূত্রে জানা গেছে, বাঘশিশুদের কব্জা করতে গিয়ে বাঘের হাতে প্রাণও দিয়েছে এক অপহরণকারী। কিন্তু তাতেও তারা নিবৃত্ত হয়নি। বরং জীবিত সদস্যরা বাঘশিশুদের নিয়ে পাচারকারীদের হাতে তুলে দিয়েছে। কিন্তু এই অসাধ্য সাধনের জন্য অপহরণ ও পাচারকারীদের বাহবা দেওয়ার কোনো উপায় নেই। কারণ, তারা যে অপরাধ করেছে তা গুরুতর। বাঘ শুধু সুন্দরবনের সৌন্দর্য নয়, সেখানকার জীববৈচিত্র্যের অনিবার্য অংশ। বলা হয়, বাঘই সুন্দরবনের রক্ষক। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই বাঘের জীবন সেখানে বিপন্ন। মানুষ ও বাঘের মধ্যে চলছে বসতি নিয়ে লড়াই। একের পর এক প্রাণ হারাচ্ছে বাঘ। এখন যদি বাঘশাবকদের ধরে আনার প্রবণতা তৈরি হয় তবে বাঘ যে অচিরেই নির্বংশ হবে তা বলাই বাহুল্য। আশার কথা, পাচারের একটি পর্যায়ে বাঘশিশুরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে এসেছে। পাচারকারীদের দুই সদস্য গ্রেফতার হয়েছে এবং ম্যাজিস্ট্রেটের রায়ে তাৎক্ষণিক সাজাও পেয়েছে। কিন্তু এরা পাচার চেইনের একটি অংশমাত্র। সুন্দরবন থেকে ঢাকায় আনা পর্যন্ত একটি শক্তিশালী চক্র এর সঙ্গে জড়িত ছিল। সে চক্রটিকে শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। শ্যামলীর বাসা থেকে বাঘশিশুরা কোথায় যেত তাও নিশ্চিত হওয়া দরকার। এর সঙ্গে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতার যে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে সে বিষয়ে বিশদ তদন্ত হওয়া দরকার। সবচেয়ে বড় কথা, উদ্ধারকৃত বাঘশিশুদের স্বাস্থ্যগত বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে। সুন্দরবনের মহামূল্যবান এ বাঘ সুন্দরবনে ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব কি-না সেটিও ভাবা যেতে পারে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ দিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে। যে বাঘমাতার কোল খালি করে এ শিশুদের অপহরণ করা হয়েছে সে বাঘমাতার পরিস্থিতিও তদারক করা দরকার। এ ক্ষেত্রে সুন্দরবন তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষের গাফিলতি আছে কি-না সেটিও বনের স্বার্থে খতিয়ে দেখা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.