এবিসি রেডিও-প্রথম আলো জবস ‘হতে চাই পেতে চাই’-মেডিকেল প্রমোশন অফিসারদের পরিশ্রমী হওয়া জরুরি

এবিসি রেডিওর স্টুডিওতে প্রথম আলো জবস ‘হতে চাই পেতে চাই’ অনুষ্ঠানে ২৯ মে এসেছিলেন গ্ল্যাক্সো স্মিথ ক্লাইন বাংলাদেশ লিমিটেডের ফার্স্ট লাইন সেলস ম্যানেজার সুজন কুমার দে। কথা বলেছেন কথাবন্ধু ব্রতীর সঙ্গে। মেডিকেল প্রমোশন অফিসার (চিকিৎসাবিষয়ক পেশা) পদের চাকরির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি


কথাবন্ধু: মেডিকেল প্রমোশন অফিসারদের মূলত কী ধরনের কাজ করতে হয়?
সুজন কুমার দে: মেডিকেল প্রমোশন অফিসাররা সাধারণত চিকিৎসক ও ফার্মেসিগুলোর কাছে কোম্পানির বিভিন্ন ওষুধ সম্পর্কে তথ্য নিয়ে যান। তাঁরা কোন ওষুধ কাদের জন্য এবং কী কাজ করবে বা কীভাবে দেওয়া উচিত এসব তথ্য দেন। যাতে চিকিৎসকেরা (ডাক্তার) ওই ওষুধ সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেন। আর যেহেতু মেডিকেল প্রমোশন অফিসারদের ওষুধ বিক্রির জন্য কাজ করতে হয়, সেহেতু তাঁদের চিকিৎসাবিষয়ক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও ফার্মেসিগুলোর (ওষুধের দোকান) সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। এ ছাড়া তাদের খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে হয়। সেলস টার্গেট বা বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হয়।
কথাবন্ধু: আমাদের এক ফেসবুক বন্ধু উজ্জ্বল সাহা জানতে চেয়েছেন, এ পেশায় শুরুর দিকে সাধারণত বেতন কত হয়ে থাকে?
সুজন কুমার দে: মেডিকেল প্রমোশন অফিসারদের বেতন শুরুতেই ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা ধরা হয়। তবে প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বেতনের ভিন্নতা থাকতে পারে। এ ছাড়া মেডিকেল প্রমোশন অফিসারদের যেহেতু ওষুধ বিক্রির সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয় তাই বেতন ছাড়াও তাঁদের আরও কিছু আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়। যেহেতু তাঁরা মাঠপর্যায়ে কাজ করেন তাই তাঁদের এ জন্য অ্যালাউন্সেরও ব্যবস্থা থাকে। এটা বিভিন্ন কোম্পানি দৈনিক বা মাসিক ভিত্তিতে দিয়ে থাকে। এ ছাড়া বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ওপরও কমিশনের ব্যবস্থা থাকে।
কথাবন্ধু: মেডিকেল প্রমোশন অফিসার নিয়োগে কী ধরনের শিক্ষাগতযোগ্যতার প্রয়োজন হয়? আমাদের আরেক ফেসবুক বন্ধু নাজমুস নায়হান জানতে চেয়েছেন সায়েন্সে লেখাপড়া ছাড়া কি এই পদের জন্য দরখাস্ত করা যায় না?
সুজন কুমার দে: সাধারণত মেডিকেল প্রমোশন অফিসার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্নাতক পাস নেওয়া হয়। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই সায়েন্স বা বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক পাস প্রার্থীদেরই বেশি প্রাধান্য দেয়। কারণ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস করলে মেডিকেল প্রমোশন অফিসার পদে কাজ করতে সুবিধা হয়। এই বিভাগে পড়াশুনা করার সুবাদে তাঁদের আগে থেকেই বিভিন্ন রোগ ও রোগের চিকিৎসা সংক্রান্ত শব্দগুলো জানা থাকে। যা কর্মক্ষেত্রে সহায়ক হয়। তবে বিজ্ঞান ছাড়া অন্যান্য বিভাগ থেকে পাস করলেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে থাকে।
কথাবন্ধু: এটি কি সম্পূর্ণ মাঠপর্যায়ের কাজ না কি অফিসে বসেও কাজের সুযোগ রয়েছে?
সুজন কুমার দে: মেডিকেল প্রমোশন অফিসারদের মূলত মাঠপর্যায়ে কাজ করতে হয়। সরাসরি চিকিৎসক এবং ফার্মেসিগুলোর (ওষুধের দোকান) সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। এখানে আয়েশ করেই কাজ করা যায়। ৯-৫টা অফিস করার কোনো নিয়ম নেই। তবে অফিসে এসে রিপোর্ট করতে হয়। সেলস নিয়ে রিপোর্ট করতে হয়। মেডিকেল প্রমোশন অফিসারদের কাজের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ যেমন আছে তেমনি সুযোগ-সুবিধাও রয়েছে।
কথাবন্ধু: এই পেশায় সফলতা পেতে কী ধরনের চারিত্রিক গুণাবলি থাকা জরুরি বলে আপনি মনে করেন?
সুজন কুমার দে: বিশেষ কোনো গুণাবলির দরকার নেই। মেডিকেল প্রমোশন অফিসারদের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো যা আশা করে তা হচ্ছে তাঁদের স্মার্ট হতে হবে। প্রেজেন্টেশন ভালো হতে হবে। সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলার দক্ষতা ও বিক্রয় লক্ষ্য পূরণে নানা ধরনের কৌশল নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। চিকিৎসক (ডাক্তার) ও ফার্মেসিগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। এসব গুণ থাকলে একজন মেডিকেল প্রমোশন অফিসার সহজেই সফল হতে পারেন।
কথাবন্ধু: বাংলাদেশে এই কাজের সুযোগ কতটুকু? বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করে বিদেশে কাজের সুযোগ রয়েছে কি?
সুজন কুমার দে: অবশ্যই দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। একেক দেশে একেক রকম মেডিকেল প্রমোশন অফিসাররা মার্কেটিং বা বিপণনের কাজ করে থাকেন। তবে আমাদের দেশে বড় সুবিধা হচ্ছে, এখানে ওষুধের বাজার অনেক বড়। বাংলাদেশ থেকে অনেক প্রতিষ্ঠান এখন বিদেশেও ওষুধ রপ্তানি করছে। তাই দেশে যারা ভালো করবেন প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁদের দেশের বাইরে পাঠাবে।
কথাবন্ধু: পেশাগত মানোন্নয়নের ক্ষেত্রে এ পেশায় কোনো প্রশিক্ষণ বা কোর্সের সুযোগ রয়েছে কি?
সুজন কুমার দে: প্রতিষ্ঠানগুলো তার কর্মীদের শুরুতেই এক বা দেড় মাসের প্রশিক্ষণ দিয়েই দক্ষ ও যোগ্য করে তোলে। তার পরই তারা মাঠপর্যায়ের কাজের জন্য উপযুক্ত হয়। এই প্রশিক্ষণে কীভাবে ওষুধ বিপণন তথা বিক্রি করতে হয় এবং প্রোডাক্ট বা পণ্য সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। এ ছাড়া পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো কাজের প্রয়োজন এবং কর্মীদের আরও বেশি দক্ষ করে তোলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
শ্রোতাবন্ধু সাইফ (খুদেবার্তা থেকে) জানতে চেয়েছেন মেডিকেল প্রমোশন অফিসার এবং মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ—এ দুটি একই কাজ কি?
সুজন কুমার দে: প্রথম দিকে একে মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ বলা হতো। এখন কাজের ধরন ও বিভিন্ন রকম কাজের কারণে পদবিটা শুধু মেডিকেল প্রমোশন অফিসার হয়েছে। তবে পদবি মেডিকেল প্রমোশন অফিসার হওয়ার কারণে কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা বেড়েছে। আগের চেয়ে আরও বেশি প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা বাড়াতে হয়।
কথাবন্ধু: আমাদের আরেক বন্ধু রিয়াদ জানতে চেয়েছে— তার দেশের বাড়ি বিক্রমপুর—থানা পর্যায়ে এ কাজের সুযোগ আছে কি না।
সুজন কুমার দে: বাংলাদেশে ওষুধের বাজার এখন অনেক বড়। এ জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য থানাপর্যায়ে কাজ করছে। কেউ যদি চান তাহলে এ জন্য নিজের এলাকায় থেকেও এ কাজ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
কথাবন্ধু: নতুনদের জন্য আপনার দিকনির্দেশনা কী হবে?
সুজন কুমার দে: মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে হবে। ধৈর্য থাকতে হবে। এ জন্য চিকিৎসক এবং ফার্মেসিগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে হবে। সৎ থাকতে হবে। একই সঙ্গে পরিশ্রমী হতে হবে।
গ্রন্থনা: সুদীপ দে

No comments

Powered by Blogger.