ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-হাতেকলমে শিক্ষা by খাদিজা ফাল্গুনী

ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে চেপে ময়মনসিংহের মাসকান্দা। ঘণ্টা তিনেকের পথ। মাসকান্দায় নেমে রিকশায় চেপে ১০ মিনিটে পৌঁছে গেলাম গন্তব্যে, ময়মনসিংহের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। ১৯৬৩ সালে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে যাত্রা শুরু হয় ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের।


২৯ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোর ফাঁকে ফাঁকে পাহারায় থাকা ঘন সবুজ গাছগুলো চোখ জুড়িয়ে দেবে আপনার। দেখতে দেখতেই অপুর সঙ্গে পা বাড়ালাম মূল প্রশাসনিক ভবনের দিকে।
কথা হলো ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানালেন, প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী পড়ে এখানে। মোট আট সেমিস্টারে চার বছরেই শেষ হয় ডিপ্লোমা কোর্সের পড়া। পুরকৌশল, তড়িৎকৌশল, যন্ত্রকৌশল, শক্তিকৌশল, ইলেকট্রনিক্স, কম্পিউটার, ইলেকট্রো মেডিকেল—এসব বিভাগ নিয়ে চলছে ময়মনসিংহের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষা কার্যক্রম। সম্পূর্ণ সেশনজটমুক্ত শিক্ষাবর্ষসহ প্রতিবছর সন্তোষজনক পাসের হারের কারণে জাতীয়ভাবে বেশ কয়েকবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুরস্কার লাভ করেছে ময়মনসিংহের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। ক্যাম্পাসের বাগানের পাশেই আড্ডা দিচ্ছিলেন পুরকৌশল চতুর্থ সেমিস্টারে পড়ুয়া মামুন, মানছুরা, হুমায়ুন আর সাবিকুন নাহার। তাঁরা বলেন, ক্লাসের ফাঁকে নিয়মিত আড্ডা ছাড়াও নবীনবরণ, শিক্ষাসফর, ভলিবল, ক্রিকেট খেলা কিংবা লাইব্রেরির ২৯ হাজার বইয়ের মধ্যে বিনোদন খুঁজে ফেরেন কেউ কেউ। হল-জীবনের ক্লান্ত অবসরে কেউ বা ঘুরতে চলে যান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অথবা ময়মনসিংহের কোলঘেঁষে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে। বলে রাখা ভালো, ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে আছে ছেলেদের দুটি ও মেয়েদের একটি আবাসিক হল।
পারিবারিক সমস্যার কারণে শিক্ষাজীবনে এক বছর পিছিয়ে পড়েছিলেন তড়িৎকৌশল পড়ুয়া মাসুদ। তাঁর বন্ধু পারভেজ বেসরকারি একটি কলেজে কিছুদিন পড়েই বুঝতে পারছিলেন, পড়ালেখার সাধারণ ধারায় চাকরির আশা-দুরাশা বৈ কিছু নয়। বড়দের পরামর্শে দুজনই ভর্তি হয়েছেন এখানে। আসিফ আর চন্দন জানালেন, উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ কম ছিল, দুজনই ভেঙে পড়েছিলেন। কিন্তু এখন তাঁরা নিশ্চিন্ত নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে। এখান থেকে পাস করে গাজীপুরের ডুয়েটে (ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) স্নাতক পড়ার সুযোগ থাকছে তাঁদের। দেশে তো বটেই, বিদেশেও কারিগরি বিদ্যার কদর বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
সারা দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শুরু হয়েছে ভর্তি কার্যক্রম। সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোয় ভর্তির জন্য স্বীকৃত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সালে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা সাধারণ গণিতে জিপিএ-৩ সহ কমপক্ষে ৩.৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা এ বছর (২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে) ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবে। বেসরকারি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানের জন্য জিপিএ লাগবে ২.৫। আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে ভর্তি-ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠান থেকে। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য পাবেন www.techedu.gov.bd এই ওয়েবসাইটে।

No comments

Powered by Blogger.