এসব অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করুন-টিআরের গম আত্মসাৎ

দেশের বিভিন্ন উপজেলায় টেস্ট রিলিফের (টিআর) আওতায় গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা গম আত্মসাতের খবর প্রায়ই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক খবরে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় এ রকম ৭৮টি প্রকল্পের গম আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেল।


প্রকল্পের কাজ হয়নি, কিন্তু বরাদ্দ করা গমের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে, এমন অভিযোগ করে লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৭৮টি প্রকল্পের সভাপতিদের অর্থ ফেরত দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন।
টিআর বা টেস্ট রিলিফের ইতিহাস প্রাচীন, ব্রিটিশ আমলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অতিদরিদ্র অংশের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে ত্রাণের ব্যবস্থা করা ছিল এর লক্ষ্য। ইন্ডিয়ান ফেমিন কোড ও বেঙ্গল ফেমিন কোডে টেস্ট রিলিফের উল্লেখ পাওয়া যায়। স্বাধীন বাংলাদেশেও টেস্ট রিলিফের সেই উদ্দেশ্য প্রাসঙ্গিক রয়ে গেছে। এর মধ্য দিয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঘটে: এক. গ্রামাঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ; এবং দুই. এর সুবাদে যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়, তা দিয়ে দরিদ্রতম গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ন্যূনতম খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সুতরাং, টেস্ট রিলিফের আওতায় কোনো প্রকল্পের কাজ যখন করা হয় না, তখন একদিকে গ্রামীণ অবকাঠামো প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অন্যদিকে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। উপরন্তু যখন প্রকল্পের কোনো কাজ না করে বা আংশিক কাজ করে বরাদ্দ করা অর্থ আত্মসাৎ করা হয়, তখন গরিব মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়া হয়। এটা অবশ্যই দুর্নীতি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কাজ হয়নি, তাই প্রকল্পের টাকা ফেরত চেয়ে প্রকল্পের সভাপতিদের চিঠি লেখার অর্থ অপরাধটি লঘু করে দেখা। আসলে উচিত এ ধরনের দুর্নীতির বিচার করে শাস্তি নিশ্চিত করা।
টেস্ট রিলিফের আওতায় প্রকল্পগুলোর জন্য গম বরাদ্দ করা হয় সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলো যেসব নির্বাচনী এলাকার আওতায়, সেগুলোর সাংসদদের নামে। প্রকল্পের গম আত্মসাৎসহ এ নিয়ে নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ তাই বর্তায় সংশ্লিষ্ট সাংসদদের ওপরও। জনগণ তাঁদের কাছে অধিকতর দায়িত্বশীলতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রত্যাশা করে। টেস্ট রিলিফ নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.