বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর প্রকল্প বাতিল! by আশরাফুল হক রাজীব

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের স্থান নির্বাচনের জন্য পরামর্শক নিয়োগ প্রস্তাবে সম্মতি দেননি প্রধানমন্ত্রী। এতে পুরো প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে গেল। বঙ্গবন্ধুর নামে বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্প ছিল বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি।


প্রকল্পের স্থান নির্বাচন ও পিপিপির আওতায় প্রাইভেট পার্টনার নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদনের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে গত ৯ এপ্রিল একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হয়। শেখ হাসিনা সেই প্রস্তাবে সম্মতি না দিয়ে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠান। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান সারসংক্ষেপে জানান, 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উৎসে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।'
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রকল্পটি বাতিল হয়ে গেছে, এমন নয়। এ বিষয়ে আমরা তাঁর সঙ্গে কথা বলব।'
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের আন্তর্জাতিক মানের একমাত্র বিমানবন্দর। বিদেশ থেকে আসা এবং বাংলাদেশ থেকে বিদেশে যাতায়াতকারী ৮০ শতাংশ যাত্রীই এ বিমানবন্দর ব্যবহার করেন। তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। এ ছাড়া প্রায় ৬০ লাখ টন পণ্য বিমানপথে পরিবহন করা হয়। আগামী ২০২০ সাল নাগাদ যাত্রীর সংখ্যা এক কোটি এবং পণ্য পরিবহনের পরিমাণ এক কোটি টন ছাড়িয়ে যাবে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সমীক্ষা অনুযায়ী, আগামী ২০২০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হবে। একই সঙ্গে পণ্য পরিবহনের পরিমাণও দ্বিগুণ হবে। তবে এ বর্ধিত যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের মতো প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান বিমানবন্দরে নেই। এ ছাড়া সেনাবাহিনী ও আবাসিক এলাকা দ্বারা পরিবেষ্টিত হওয়ায় এ বিমানবন্দর সম্প্রসারণেরও সুযোগ সীমিত। এই রাজধানীতে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার।
প্রথম পর্যায়ে বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য ময়মনসিংহের ত্রিশালকে বেছে নেওয়া হয়। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের আপত্তির মুখে তা ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার আড়িয়ল বিলে স্থানান্তর করা হয়। সেখানেও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিপত্তি দেখা দেওয়ায় নতুন স্থান খুঁজে বের করা হয়। ঢাকা থেকে দূরত্ব, জমির পর্যাপ্ততা, সড়ক, রেল ও নদীপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভবিষ্যতের সম্প্রসারণের সম্ভাবনা- এসব বিবেচনায় রাজধানীর পার্শ্ববর্তী কেয়াইন, লতব্দী, চরবিলাশপুর এবং চরজানাজাতকে উপযুক্ত স্থান হিসেবে সুপারিশ করা হয়। বিবেচনায় রাখা হয় আড়িয়ল বিলকেও।
এই অবস্থায় পরামর্শক নিয়োগ করে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে। প্রধানমন্ত্রী সে প্রস্তাব অনুমোদন না দেওয়ায় প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ল বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.