শিল্পের স্বার্থেই খুনি শনাক্ত হওয়া প্রয়োজন-শ্রমিকনেতা আমিনুল হত্যা

তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকনেতা আমিনুল হত্যার ২২ দিন গত হলেও কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি পুলিশ। একজন শ্রমিকনেতার মৃত্যু জাতীয় অঙ্গনে কোনো সাড়া না তুললেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচিত হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘অপহরণ’ ও গুম-হত্যার মতো ঘটনা কোন পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে, এটা তারও একটা নমুনা।


৪ এপ্রিল আশুলিয়া থেকে আমিনুল নিখোঁজ হন। ৫ এপ্রিল টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঘাটাইল এলাকায় তাঁর ক্ষতবিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। ৯ এপ্রিল সেই খবর বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ইংরেজি পত্রিকা নিউইয়র্ক টাইমস-এ ছাপা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা ও শ্রমিক সংগঠনগুলো আমিনুলের ব্যাপারে উদ্বেগও প্রকাশ করে। ১৮ এপ্রিল আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা তথা পশ্চিমা দুনিয়ার প্রভাবশালী ১১টি ক্রেতা ও মালিক সংগঠন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এক চিঠিতে হত্যার কারণ উদ্ঘাটনে যথাযথ তদন্তের অনুরোধ জানায়। তাদের এই অনুরোধ সরকারের প্রতি চাপ হিসেবেই গণ্য হবে। আমিনুল হত্যার ঘটনা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের শোচনীয় মানবাধিকার পরিস্থিতিকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল।
আমিনুলের স্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁর স্বামীর প্রধান ভয় ছিল পুলিশকেই। ২০১০ সালের ১৮ জুন তাঁকে ঢাকার শ্রম ভবন থেকে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যায় সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এ বছরের ৯ মার্চ পুলিশ তাঁকে তাঁর কার্যালয় থেকে নিয়ে যায়। প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদে শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, শ্রমিকদের মধ্যকার কোনো ঘটনা বা দ্বন্দ্বে তাঁকে হত্যা করা হয়নি।’
শ্রমিকের অধিকার এবং শ্রমিকনেতাদের জীবনের নিশ্চয়তা না থাকলে এ শিল্পে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসবে না। এ ধরনের ঘটনা বিদেশে আমাদের ক্রেতাদেরও বিমুখ করে তুলতে পারে। তৈরি পোশাকশিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির সোনার হাঁস। যেখানে আমাদের চীন ও ভিয়েতনামের মতো দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে, সেখানে এ ধরনের ঘটনায় বাজার হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অতএব সরকারের কর্তব্য হবে আমিনুল হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দেওয়া।

No comments

Powered by Blogger.