খাদ্যমূল্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে-আবার লাইসেন্স প্রথা?

ভরা মৌসুমেও কেন চালের দাম বাড়ছে, সে বিষয়ে সরকার অনুসন্ধানের কথা বলেছে। তদন্তে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেলে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াই উচিত। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজসহ খাদ্যদ্রব্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য এটা প্রয়োজন।


কিন্তু আমদানি ও মজুদ নিয়ন্ত্রণের জন্য যদি আবার লাইসেন্স প্রথা চালু, মজুদের পরিমাণ ও সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়, তাহলে খাদ্যপণ্যের সরবরাহ কমে দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। এটা কাম্য নয়। শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, সরকার ৫৮ বছর আগের এ-সংক্রান্ত একটি আইন সংশোধন করে আবার চালু করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা মনে করেন, এ ধরনের ব্যবস্থা সরকারের জন্য আত্মঘাতী হবে।
লাইসেন্স প্রথা বিগত সত্তর-আশির দশকে ব্যাপক দুর্নীতির জন্ম দেয়। বিশেষত সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের আমলে লাইসেন্স নিয়ে দলীয়করণ, ঘুষ-দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা তুঙ্গে ওঠে। বাজারদরে দেখা যায় অস্থিরতা। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯১ সালে লাইসেন্স প্রথা বাতিল করা হয়। বাজারদরে এর সুফলও পাওয়া যায়। লাইসেন্সের নামে আসলে খাদ্যপণ্যের ব্যবসায় সরকারের অযাচিত হস্তক্ষেপ কায়েম ও খাদ্য বিভাগের কিছু আমলার উদরপূর্তির ব্যবস্থা হয় মাত্র।
অন্যদিকে সরকারকে মনে রাখতে হবে, মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য যেমন ব্যবসায়ীদের আমদানির ও মজুদের ওপর নজরদারি রাখতে হবে, তেমনি আবার বাজারে বিকল্প সরবরাহের ব্যবস্থাও করতে হবে। সরকার সুবিধাবঞ্চিত গরিব মানুষের মধ্যে ভিজিডি-ভিজিএফ কর্মসূচি পরিচালিত করছে, ফেয়ার প্রাইস কার্ড করেছে। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। কিন্তু যদি ব্যবসায়ীদের খাদ্য আমদানির পরিমাণ ও গুদামে রাখার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয় এবং এ নিয়ে কড়াকড়ির নামে এমন কিছু করা হয়, যা ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক কাজে বাধা সৃষ্টি বলে প্রতীয়মান হতে পারে, তাহলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কিছু গুদাম সিল করে দিয়ে সুফল পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীরা আলাদাভাবে আমদানি না করে অনেক সময় একাধিক ব্যবসায়ী একসঙ্গে বেশি পরিমাণে পণ্য আমদানি করেন এবং সেগুলো একসঙ্গে কোনো গুদামে রেখে পরে নিজেরা বিভিন্ন অংশে ভাগ করে নেন। সুতরাং মজুদের পরিমাণ ও সময়সীমার বিষয়ে বাস্তবতা বিবেচনায় রাখতে হবে। আধুনিক যুগে নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা কোনো সুফল দেয় না। বরং বাজারের ওপর কঠোর নজরদারি এবং ওএমএস পদ্ধতি প্রয়োজন অনুযায়ী চালানোর ওপরই বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

No comments

Powered by Blogger.