স্মরণ-শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক by মো. জাহাঙ্গীর হোসেন অরুণ

বরিশাল জেলার রাজাপুর থানার সাতুরিয়া গ্রামে ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর মামার বাড়িতে একটি শিশু জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ ও মা সাইদুন্নেসা খাতুন। তিনি মা-বাবার একমাত্র ছেলে। সে শিশুই একদিন বড় হলেন। এতটা বড় হলেন যে ভালোবেসে সবাই তাঁকে ডাকলেন শেরেবাংলা।
১৮৮১ সালে বরিশাল জিলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে তিনি ভর্তি হন। ১৮৮৬ সালে তাঁর মেধার প্রথম স্বীকৃতি মিলে অষ্টম শ্রেণীর বৃত্তি লাভের মাধ্যমে। ১৮৮৯ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি তৎকালীন ঢাকা বিভাগে মুসলমানদের মধ্যে প্রথম হন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৯১ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফএ পরীক্ষায়ও প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তিনি গণিত, রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় অনার্সসহ বিএ পাস করেন। এটিও প্রথম শ্রেণীতে। পরে তিনি এমএ ভর্তি হয়েছিলেন ইংরেজিতে, কিন্তু পরীক্ষার মাত্র ছয় মাস আগে তাঁর এক বন্ধু ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন যে মুসলমান ছাত্ররা মেধাবী না, তাই তারা অঙ্ক নিয়ে পড়ে না। পরীক্ষার মাত্র ছয় মাস আগে তিনি অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করে প্রথম শ্রেণীতে এমএ পাস করে তার জবাব দিয়েছিলেন।
এই মেধাবী মানুষটির কর্মজীবনেও তার স্বাক্ষর রেখেছেন। সেই আইন ব্যবসা দিয়ে শুরু, পরে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে শুরু করেন সরকারি চাকরি। ১৯০৮ সালে এসডিওর পদ ছেড়ে তিনি সমবায়ের সহকারী রেজিস্ট্রারের পদ গ্রহণ করেন। এ সময় তিনি গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষক-শ্রমিকের বাস্তব কষ্ট নিজের চোখে দেখেন। সরকারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ১৯১১ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি আবার কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসায় চলে যান।
বরিশাল পৌরসভার চেয়ারম্যান অশ্বিনীকুমার দত্ত এ কে ফজলুল হককে কমিশনার পদে প্রার্থী হতে আহ্বান জানান। এতে সাড়া দিয়ে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। আর এ দিয়েই তাঁর রাজনৈতিক জীবন শুরু।
১৯০৫ সালে যখন বঙ্গভঙ্গ নিয়ে বাংলার জনগণ বিভক্ত হয়ে পড়ে, তখনই নবাব স্যার সলিমুল্লাহর একান্ত প্রচেষ্টায় ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায় গঠিত হয় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। ১৯১২ সালে এতে যোগ দেন এ কে ফজলুল হক। নিজের যোগ্যতায় তিনি এর প্রেসিডেন্ট হন ১৯১৯ সালে। একে একে তাঁর মেধা ও মননের ফল তিনি পেতে শুরু করেন। রাজনৈতিক বহু পদে তিনি আসীন ছিলেন। এর মধ্যে কলকাতার মেয়র (১৯৩৫), অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী (১৯৩৭-১৯৪৩), পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী (১৯৫৪), পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (১৯৫৫) এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর (১৯৫৪-১৯৫৮) অন্যতম।
পারিবারিক জীবনে পর পর দুবার তাঁর স্ত্রী বিয়োগের পর তিনি তৃতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৬২ সালের ২৭ মার্চে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঢাকা মেডিক্যালে প্রায় এক মাস তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে এ কে ফজলুল হক ৮৬ বছর ছয় মাস বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাঁকে সমাহিত করা হয়। তাঁর পাশেই শুয়ে আছেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও খাজা নাজিমুদ্দিন। তাঁদের তিনজনের সমাধিই তিন নেতার মাজার নামে বিখ্যাত।
মো. জাহাঙ্গীর হোসেন অরুণ

No comments

Powered by Blogger.