বাংলাদেশের একটি ডিসি-১০ চায় বোয়িং, জাদুঘরে রাখবে by আবুল কাশেম

বিশ্বের বৃহত্তম বিমান নির্মাতা কম্পানি বোয়িং বাংলাদেশের কাছে একটি বিমান চেয়েছে। গবেষণার জন্য নয়, আকাশে ওড়ানোর জন্যও নয়; বাংলাদেশ থেকে বিমানটি নিয়ে জাদুঘরে রাখবে তারা। যে বিমানটি চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছে বোয়িং, সেটি একটি ডিসি-১০ বিমান। বোয়িং কম্পানিই এটি নির্মাণ করেছে।
পুরনো এই বিমান পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। আছে শুধু বাংলাদেশে। অন্যান্য দেশে এ বিমানকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে অনেক আগেই।
সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি লিখে একটি ডিসি-১০ বিমান চেয়েছে বোয়িং কম্পানি। যুক্তরাষ্ট্রের এ কম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট নিজে এ আবেদন করেছেন।
ওই মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আতহারুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বোয়িং কম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট আমাদের কাছে চিঠি লিখে একটি ডিসি-১০ বিমান অনুদান হিসেবে চেয়েছেন। পুরনো মডেলের এই বিমান পৃথিবীর আর কোনো দেশে এখন আর নেই। ওই বোয়িং কর্মকর্তা চিঠিতে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ তাঁদের একটি ডিসি-১০ বিমান দিলে তা যত্নসহকারে জাদুঘরে রাখবেন তাঁরা।'
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, স্বাধীনতার পর ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ বিমানকে শক্তিশালী করার কাজ শুরু হয়। তার অংশ হিসেবে ১৯৮৩ সালে ম্যাকডোনেল-ডগলাস কম্পানির কাছ থেকে ডিসি-১০-৩০ মডেলের (সাধারণ্যে ডিসি-১০) তিনটি বিমান কিনে বাংলাদেশ। ১৯৮৯ সালে আরো একটি নতুন ডিসি-১০ মডেলের বিমান কেনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। ১৯৮৩ সালে কেনা তিনটি ডিসি-১০-এর বয়স প্রায় ৩০ বছর। আর ১৯৮৯ সালে কেনা ডিসি-১০-এর বয়স প্রায় ২৩ বছর। এই চারটির মধ্যে এখনো তিনটি চালু রয়েছে বিমানের বহরে।
বোয়িং কম্পানির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের দুই বিমান নির্মাতা কম্পানি ম্যাকডোনেল এয়ারক্রাফট করপোরেশন ও ডগলাস এয়ারক্রাফট কম্পানি একীভূত হওয়ার পর প্রথম ডিসি-১০ বিমান নির্মাণ করে। ১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিমানের জন্ম। ১৯৯০ সালে ম্যাকডোনেল-ডগলাস ও বোয়িং কম্পানি একীভূত হয়। তার আগে ১৯৮৯ সালে সর্বশেষ ডিসি-১০ নির্মাণ করে ম্যাকডোনেল-ডগলাস কম্পানি। ওই সময় পর্যন্ত ৩৮৬টি ডিসি-১০ যাত্রীবাহী বিমান নির্মাণ করে বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয় এবং ৬০টি সামরিক ডিসি-১০ বিমান যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীকে সরবরাহ করা হয়। ৩৮৬টি যাত্রীবাহী ডিসি-১০-এর মধ্যে এখন মাত্র তিনটি বিমান চালু আছে এবং সেগুলো রয়েছে বাংলাদেশ বিমানের বহরে। অন্যসব দেশ এ বিমান পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে অনেক আগেই।
বাংলাদেশ বিমানের বহরে থাকা পুরনো এসব ডিসি-১০ ঘন ঘন দুর্ঘটনায় পড়ছে। এসবের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের নামে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের অর্থ আত্মাসাৎ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের কারণেই এখনো সচল রাখা হয়েছে ডিসি-১০। ২০১০ সালের ১২ জানুয়ারি আবুধাবিতে আগুন লাগে ডিসি-১০ উড়োজাহাজের একটি ইঞ্জিনে। অথচ ইঞ্জিনটি ছয় মাস আগে তিন কোটি টাকা খরচ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়েছিল। পরদিন রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-মাস্কাট রুটের আরেকটি ডিসি-১০ চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিকল হয়ে পড়ে।
ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে বিশেষজ্ঞরা বারবার এয়ারলাইনসের বহর থেকে ডিসি-১০ সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দিলেও তা আমলে নেওয়া হচ্ছে না। এখন ডিসি-১০-এর খুচরা যন্ত্রাংশও বাজারে পাওয়া যায় না। যাত্রীর নিরাপত্তা বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই উড়োজাহাজের অবতরণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
বিমান কর্মকর্তাদের মতে, একটি নতুন উড়োজাহাজের পরিচালনা ব্যয় ঘণ্টায় প্রায় চার হাজার ডলার। তুলনায় পুরনো উড়োজাহাজের খরচ প্রায় ১২ হাজার ডলার। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো উড়োজাহাজের পরিচালনা ব্যয় আট হাজার ডলারের বেশি হলে সেটিকে বাণিজ্যিকভাবে টিকিয়ে রাখা প্রায় অসম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.