লোকাল বাস যখন-তখন সিটিং কেন? by শাহানুর আলম

প্রতি বছরের মতো এবারও পবিত্র রমজান মাস আমাদের দোরগোড়ায়। লক্ষণীয়, রমজান শুরু হলেই ঢাকায় চলমান বিভিন্ন রুটের লোকাল বাসগুলো অফিস সময় শুরু ও শেষ হলে সিটিং করে ফেলে। ফলে দুর্ভোগে পড়ে হাজার হাজার রোজাদার।


রোজাদারদের দীর্ঘ সময় ধরে বাসের অপেক্ষায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা দেখেও বাসের হেলপার-কন্ডাক্টরদের কিছু আসে-যায় না। তাদের এ অনিয়ম রাস্তায় থাকা পুলিশ সার্জেন্ট ও কনস্টেবলরা দেখলেও কিছুই বলেন না। অভিযোগ করেও পাওয়া যায় না কোনো প্রতিকার। তাহলে রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন দেখভালের দায়িত্ব কাদের? আজব দেশ, আজব তার আইন ও আইন রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিরা, যেখানে অভিযোগ করলে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না, বরং লজ্জিত হতে হয় তাদের ব্যবহারে। রাস্তায় কর্তব্যরত এসব পুলিশ সার্জেন্ট ও কনস্টেবলের কাজ কি শুধু কাগজ দেখার নামে নিজেদের উদ্দেশ্য
হাসিল করা?
লোকাল বাস সিটিং করার এ প্রতিযোগিতায় গাবতলী থেকে সায়েদাবাদগামী ৮ নম্বর বাস ও মিরপুর-পল্লবী থেকে গুলিস্তান-মতিঝিলগামী রুটে চলাচলকারী লোকাল বাসগুলোর দৌরাত্ম্য সর্বাধিক। এরা অফিস সময় শুরু হলে এবং অফিস সময় শেষে ইচ্ছামতো সিটিং করে বীরের বেশে চলতে থাকে। যাত্রীরা সকালে অফিসে আসার সময় এবং বিকেলে ঘরে ফেরার সময় বাসের অপেক্ষায় যেভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, তা দেখলে যে কারোরই মনে হতে পারে, কোনো মিছিল কিংবা সমাবেশ ঘটেছে। রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্তান, শাহবাগ থেকে ফার্মগেট এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মূলত মিরপুর-পল্লবী থেকে গুলিস্তান-মতিঝিলগামী রুটে চলমান বাসগুলোর ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, হেলপাররা যাত্রীদের জিম্মি করে যখন যেভাবে খুশি সেভাবে গাড়ি চালানোর ফলে এ রুটের যাত্রী দুর্ভোগ কিছুতেই কমছে না। তারা লোকাল বাসগুলোকে দিনের অন্যান্য ভাগে লোকাল হিসেবে চালালেও অফিসে আসার সময় এবং অফিস শেষে ঘরে ফেরার সময় হলেই ইচ্ছামতো লোকাল বাসগুলো সিটিং হিসেবে চালায়। অন্যদিকে গাবতলী-সায়েদাবাদগামী বাসগুলোর গায়ে লোকাল-সিটিং লিখে যেভাবে খুশি সেভাবে ফায়দা লুটছে। এদের কি প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা নেই? অবশ্য লোকাল বাস ও সিটিং বাসের ভাড়া ভিন্ন ভিন্ন নির্ধারণ করা এবং সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণই বাসচালকদের খামখেয়ালিভাবে বাস চালনায় উৎসাহ জুগিয়েছে।
সরকারকে অনুরোধ করছি, ঢাকা শহরে চলাচলকারী বাসগুলোর রুট পারমিট যেভাবে নেওয়া, সেভাবেই যেন চালনা করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পবিত্র রমজানে কোনোভাবেই যেন এর ব্যত্যয় না ঘটে। সে সঙ্গে রাস্তায় নিয়োজিত ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্টদের এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশ ও তা বাস্তবায়নে বাধ্য করা এবং এ লোকাল-সিটিং বাস চালনা প্রতিরোধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাও জরুরি। লোকাল বাস ইচ্ছামতো সিটিং করা হলে তা প্রতিহত করতে কয়েকটি সুপারিশ পেশ করছি_ ১. ড্রাইভারের লাইসেন্স বাতিল; ২. হেলপার ও কন্ডাক্টরের বিরুদ্ধে শাস্তি ও অথবা জরিমানার ব্যবস্থা নেওয়া; ৩. বাসের রুট পারমিট বাতিল; ৪. ট্রাফিক সার্জেন্ট ও পুলিশকে এ ব্যাপারে কঠোর হতে নির্দেশ দেওয়া এবং এর ব্যত্যয় ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া; ৫. অনিয়মের বিরুদ্ধে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে অভিযোগ সেল গঠন, শুধু তা-ই নয়, এ ব্যাপারে মিডিয়ায়ও সতর্ক বাণী প্রচার করা; ৬. প্রতিটি লোকাল বাসে 'লোকাল' এবং সিটিং বাসে 'সিটিং' কথাটি বড় অক্ষরে লিখে রাখা; ৭. বাসভাড়া নির্ধারণে কিলোমিটার হিসাবে সিটিং ও লোকাল ভাড়া আলাদা না করে একই ভাড়া নির্ধারণ করা, এতে লোকাল বাস সিটিং করার প্রবণতা কমবে; ৮. ডাইরেক্ট সিটিং তুলে দেওয়া এবং শুরু থেকে শেষ গন্তব্যের মাঝে স্টপেজ রেখে ভাড়া নির্ধারণ করা। এ পদ্ধতিতে স্বল্প দূরত্বের জন্যও পুরো দূরত্বের ভাড়া নেওয়া বাতিল হবে। আশা করি, এতে সংশ্লিষ্ট পরিবহন ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও নৈরাজ্য কমবে। তবে যানবাহন নৈরাজ্য নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে সরকারের সদিচ্ছাই বড় প্রয়োজন।
হ শেরেবাংলা নগর, তালতলা, ঢাকা
 

No comments

Powered by Blogger.