বাদশার মেওয়া বাগান-সম্ভাবনার আবাহন

নগদ লাভের প্রতি অনেকেরই নজর থাকে। দীর্ঘদিন ধৈর্য ধরে নিজের শ্রম, অর্থ ও মেধা ক্ষয় করে এ সংসারে ক'জনাই-বা নতুন সম্ভাবনাকে আবাহনের জন্য প্রস্তুত থাকে! এ কারণে অনেক পুরনো সম্ভাবনাময় প্রত্যাশার সমাধি রচিত হয়।


কিন্তু ধৈর্য ও কর্মকুশলতা গুণে যে বিরাট অর্জন সম্ভব তা ঈশ্বরদীর কৃষক শাহজাহান আলী বাদশা আমাদের বাস্তবে দেখিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়, বাদশার মেওয়া বাগান এখন এলাকার অনেক চাষির চোখেই নতুন স্বপ্নের রঙ ধরিয়ে দিয়েছে। পাঁচ বছর আগে করা তার বাগানে প্রথমবার ফলন কম হলেও গত দুই-তিন বছরে মেওয়ার আশাতীত ফলন দেখে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেকেই। সাধারণত কতবেল, সফেদা, বেলসহ এ ধরনের গাছের চারা রোপণের পর ফল আসতে অনেক সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় বলে চাষিরা এ ধরনের ফল আবাদে আগ্রহী হন না। কিন্তু বাদশা বাণিজ্যিকভাবে মেওয়া বাগান করে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ফল বিক্রির অর্থ ঘরে তুলে প্রমাণ করেছেন 'সবুরে সত্যিই মেওয়া ফলে'। একজন কৃষক তার শ্রমের সঙ্গে বুদ্ধি ও অর্থ খাটিয়ে নিজেও এ ধরনের ফল গাছ লাগিয়ে পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে পারেন। সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ ধরনের ফলের চাষে সহায়তা দিয়ে দেশের মানুষের পুষ্টি-ভিটামিন চাহিদা পূরণে এগিয়ে আসতে পারে। একই সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরও তাদের আলসেমি ঘুচিয়ে এ ধরনের উৎপাদনমুখী কর্মকাণ্ডে কৃৎকৌশলগত ও উন্নত জাতের বীজ সহায়তা নিয়ে কৃষকদের ফল উৎপাদনে উৎসাহিত করতে পারে। কৃষিবিজ্ঞানীদের সরকার বিভিন্ন ধরনের ফলের উন্নত জাত আবিষ্কারে উৎসাহ জোগাতে পারেন। ইতিমধ্যে আমাদের কৃষিবিজ্ঞানীরা পাটের জিনম এবং বন্যা ও খরার সঙ্গে যুঝে টিকে থাকতে সক্ষম ধানের বীজ আবিষ্কারে সাফল্য পেয়েছেন। বিভিন্ন প্রচলিত ও অপ্রচলিত ফলের বীজ আবিষ্কারেও তারা সাফল্যের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হবেন বলে আমরা আশা রাখতে পারি। তবে জাতীয় ও বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত বাদশা দেখিয়েছেন কেবল উৎপাদক হিসেবেই নয়, উদ্ভাবক হিসেবেও একজন কৃষক অবদান রাখতে সক্ষম। ফসলি জমি ব্যবহার না করে পতিত জমিতে ফলের আবাদ করা সম্ভব বলে অনেকেই এতে উৎসাহী হবেন। এখন প্রয়োজন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কৃষির সঙ্গে জড়িত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ইচ্ছুক কৃষকদের প্রতি সাহায্যের হাত প্রসারিত করা।
 

No comments

Powered by Blogger.