অপেক্ষার ৫৩ বছর by একরামুল হক শামীম

৫৩ বছর অপেক্ষা করতে হলো ডাক বিভাগের জন্য। ১৯৫৮ সালে পাঠানো চিঠিটি প্রাপক পেয়েছে ২০১১ সালে। এর মধ্যে সারা পৃথিবীতে হাজার হাজার পরিবর্তন হয়ে গেছে। এসেছে ইন্টারনেট পরিসেবা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ই-মেইল করা সম্ভব হচ্ছে।


এই ই-মেইল সুবিধা তখন থাকলে চিঠির প্রেরক ডাক বিভাগের দ্বারস্থ হয়তো হতেন না। ঘটনাটা বিস্তারিত বলা যাক। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ক্লার্ক সি মুরকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিল একজন। তাও আবার যে সে মেইল নয়, প্রেম নিবেদন করে চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রেরক। চিঠির সঙ্গে 'তোমাকে চাই' লেখা একটি টি-শার্টও ছিল। কিন্তু 'তোমাকে চাই' বলা হৃদয়ের বার্তা পেঁৗছতে সময় লাগল ৫৩ বছর। এতদিনে মুরের বয়স ৭০। ১৯৫৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পোস্ট করা চিঠিটি সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পেঁৗছায়। তারপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে চিঠির প্রাপককে খুঁজে বের করা হয়। ঠিক ঠিক সময়ে চিঠি পেঁৗছালে ক্লার্ক সি মুর কী করতেন তা অবশ্য এখনও জানা সম্ভব হয়নি। হয়তো তার জীবনটা ভিন্ন হতে পারত। হয়তো 'তোমাকে চাই' বার্তা পাঠানো বিশেষ একজনের আহ্বানে সাড়া দিতেন। কিন্তু ৫৩ বছরের হিসাব সব পাল্টে দিয়েছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে এই সংবাদটি যখন পড়ি তখন প্রথমেই মনে পড়ে বাংলাদেশের ডাকসেবার কথা। দেশের ডাকসেবা নাকি চলে কচ্ছপগতিতে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের বিরুদ্ধে দেরিতে চিঠি পাওয়ার অভিযোগ খুব নিয়মিতই শোনা যায়। চাকরির ইন্টারভিউ কার্ড, চাকরির পরীক্ষার কার্ড দেরিতে পেঁৗছানোর ফলে অসুবিধায় পড়তে হয় চাকরিপ্রার্থীদের। হয়তো ঠিক ঠিক সময়ে চিঠি পেঁৗছলে চাকরি নামের সোনার হরিণটি ধরা দিত। এমন ক্ষেত্রে ডাক বিভাগের সেবার বদনাম আর নিজের ভাগ্যকে দোষারোপ করা ছাড়া চাকরিপ্রার্থীর আর তেমন কিছুই করার থাকে না। সেবার গতি নিয়ে এমন অভিযোগের ক্ষেত্রে ডাক বিভাগ সান্ত্বনা খুঁজতে পারে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার কাছে। ডাক বিভাগের কেউ কেউ খুব সহজেই বলতে পারেন, যুক্তরাষ্ট্রেই যেখানে চিঠি পেঁৗছাতে সময় লেগেছে ৫৩ বছর, সেখানে আমাদের দেশে তো মাত্র কয়েকদিন কিংবা কয়েক মাস দেরিতে পেঁৗছায়। কিন্তু এই ভেবে সত্যি সত্যিই ডাক বিভাগের কর্মকর্তারা যদি সান্ত্বনা নিয়ে নাক ডেকে ঘুমানোর জোগাড়যন্ত্র করেন, তাহলে তার বিপরীতে আমাদের হতাশ হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না।
ডাক বিভাগের জনপ্রিয়তা দিন দিন কমেই চলছে। ১০ বছর আগেও ডাক বিভাগ বছরে ২২ কোটি চিঠি পরিবহন করত। কিন্তু এখন ডাক বিভাগ বছরে ১৫-১৬ কোটি চিঠি পরিবহন করে। কেউ কেউ এর কারণ হিসেবে কুরিয়ার সার্ভিসের জনপ্রিয়তার কথা বলেন। একথা ঠিক, কুরিয়ার সার্ভিস চালু হওয়ার পর কম সময়ে চিঠি পেঁৗছানের জন্য অনেকেই কুরিয়ার সার্ভিসকে বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু কুরিয়ার সার্ভিসের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত, বাংলাদেশের সব জায়গায় কুরিয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থা নেই; দ্বিতীয়ত, কুরিয়ার সার্ভিসের খরচ ডাক বিভাগের মাধ্যমে পাঠানোর খরচ থেকে কয়েকগুণ বেশি। তাছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসের প্রতি মানুষ ঝুঁকছে সেই সময় ফ্যাক্টরের জন্যই। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ যদি নিষ্ঠা ও দ্রুততার সঙ্গে চিঠি পেঁছানোর দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করতে পারত তাহলে ডাক বিভাগ মানুষের আস্থা হারাত না। ডাক বিভাগ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় নানা আশার বাণী শোনায়। বিশেষ করে ডাক দিবস সমাগত হলে এই বাণী শোনানোর হার জ্যামিতিক হারে বেড়ে যায়। কিন্তু অবস্থা তথৈবচ। তারপরও আমরা আশান্বিত হতে পারি কয়েকটি ক্ষেত্রে। জানা গেছে, ঢাকার প্রতিটি সড়কে পোস্ট অফিস স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, পোস্ট অফিসগুলোতে ইন্টারনেট, প্রিন্টিং, ওয়েব ব্রাউজিংসহ আরও কিছু সুবিধা দেওয়া হবে। আরও আশার কথা, এই সেবাগুলো কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক না করে অন্যান্য জেলা শহরেও ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.