হাসপাতালের অব্যবস্থা দূর করতে হবে-বিএসএমএমইউতে সেবাবঞ্চনা

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগের প্রায় অর্ধেক শয্যা দিনের পর দিন খালি থাকছে। অথচ বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে বহু মানুষকে সেবা পেতে অন্যদের ডিঙিয়ে জায়গা করে নিতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে। প্রমাণ পেতে বেশি দূরে যাওয়ার দরকার পড়ে না।


এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সেবা নিচ্ছে শয্যাসংখ্যার তিন গুণ রোগী। দেশের প্রধান দুই হাসপাতালে প্রসূতিসেবার এই বিপরীত চিত্র স্বাস্থ্যসেবা খাতের দুরবস্থারই দুই রূপ। এক হাসপাতালে রোগীর অত্যধিক চাপে মানসম্মত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না, অন্যটিতে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও রোগীরা বঞ্চিত হয় ব্যবস্থাপনায় সমস্যা অথবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়বদ্ধতার অভাবের জন্য।
গত বৃহস্পতিবারের প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, অধ্যাপকেরা তাঁদের নিয়ন্ত্রণাধীন শয্যাগুলোয় সপ্তাহে এক দিন রোগী ভর্তি করান। রোগীরা সাধারণত ভর্তির তিন দিন পর হাসপাতাল ছেড়ে গেলে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোয় সেসব শয্যায় আর কোনো রোগী উঠতে পারে না। ফলে তারা বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে বাধ্য হয়। এভাবে স্বাস্থ্যসেবা থেকে কেন দেশের জনগণকে বঞ্চিত করা হবে? এর মাধ্যমে সম্পদের অপচয়ও হয়। এই অপচয়ের দায় কে নেবে?
সম্প্রতি চিকিৎসকদের মধ্যে জনসেবার মানসিকতার স্থলে ব্যক্তিগত ব্যবসার মানসিকতা প্রধান হয়ে ওঠার ব্যাপারে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। এমনকি সরকারপ্রধানও বেশ কয়েকবার এ ব্যাপারে সরব হয়েছেন। কিন্তু দেশের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হাসপাতালেরই যেখানে এ অবস্থা, সেখানে অন্যান্য জায়গার অবস্থা যে কী, তা সহজেই অনুমেয়। এ অব্যবস্থা দূর করার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা দরকার।
বিএসএমএমইউয়ের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতি বিভাগে শয্যা ফাঁকা থাকার ব্যাপারে উপাচার্য বিরক্ত। তবে শুধু বিরক্ত হওয়া কাজের কথা নয়। উপাচার্য হিসেবে এ অব্যবস্থা দূর করার দায় তাঁর ওপরই পড়ে। দায়িত্বহীন যেসব অধ্যাপক সেবাপ্রার্থীদের বঞ্চিত করেছেন, তাঁদের ওপর আবারও ভরসা রাখা যায় কি না, তা-ও ভেবে দেখা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.