মাঈনউদ্দিনের বিরুদ্ধে মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ও সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপহরণের অভিযোগ-আলবদরের সহযোগী এখন যুক্তরাজ্যে বড় মুসলিম নেতা

যুক্তরাজ্যের শীর্ষস্থানীয় মুসলিম নেতা ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান মুসলিম এইডের ট্রাস্টি চৌধুরী মাঈনউদ্দিনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হবে। তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।


মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত সংস্থার সদস্য ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ব্রিটেনের দ্য সানডে টেলিগ্রাফকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, ‘বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে চৌধুরী মাঈনউদ্দিন জড়িত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই অভিযোগ আনা হবে।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তের জন্য গঠিত তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান বলেন, প্রাথমিকভাবে চৌধুরী মাঈনউদ্দিনের বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এই বিচার থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো সুযোগ তাঁর নেই।
আবদুল হান্নান খান বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আগামী জুনে মাঈনউদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ আনা হবে।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় মাঈনউদ্দিন জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ছিলেন। ওই সময় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে পাকিস্তানিদের সহায়তা দিতে গঠিত আলবদর বাহিনীর অন্যতম সহযোগী ছিলেন তিনি। এ ছাড়া তিনি পূর্বদেশ পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবেও কাজ করেন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর স্ত্রী ডলি চৌধুরী তাঁর স্বামীর অপহরণকারীদের একজন হিসেবে চৌধুরী মাঈনউদ্দিনকে শনাক্ত করেন। ডলি চৌধুরী জানান, মাঈনউদ্দিন ওই সময় ছাত্র ছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর কয়েকজনের সঙ্গে মিলে তাঁর স্বামীকে অপহরণ করতে আসেন। এ সময় চৌধুরী মাঈনউদ্দিন স্কার্ফ দিয়ে মুখমণ্ডল ঢেকে রাখেন। একপর্যায়ে তাঁর স্বামী ওই স্কার্ফ সরিয়ে দিলে তিনি মাঈনউদ্দিনকে চিনতে পারেন। ডলি চৌধুরী আরও জানান, তাঁর স্বামী, দেবর ও ননদ—সবার সঙ্গে মাঈনউদ্দিনের খুব ভালো পরিচয় ছিল।
শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের স্ত্রী নুরজাহান সিরাজও অভিযোগ করেন, মাঈনউদ্দিনসহ কয়েকজন তাঁর স্বামীকে অপহরণ করেন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর নিজ বাড়ি থেকে অপহরণ করা হয় সাংবাদিক সিরাজুদ্দীনকে।
মাঈনউদ্দিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনা হচ্ছে। মাঈনউদ্দিনের আইনজীবী টবি ক্যাডম্যান গত শনিবার বলেন, তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তাই এ ব্যাপারে কিছু বলা ঠিক হবে না।
সত্তরের দশকের শুরুতেই বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্য চলে যান চৌধুরী মাঈনউদ্দিন। পরে তিনি ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৮৯ সালে সালমান রুশদির বই দ্য স্যাটানিক ভার্সেস-এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারী নেতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। জামায়াতে ইসলামীর ইউরোপীয় শাখা ইসলামিক ফোরাম অব ইউরোপ (আইএফই) গঠনেও তিনি সহায়তা করেন, যারা ইউরোপে শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ২০১০ সালে জিম ফিৎজপ্যাট্রিক তাঁর বিরুদ্ধে লেবার পার্টিতে অনুপ্রবেশ করার অভিযোগ তোলেন।
চৌধুরী মাঈনউদ্দিন ২০১০ সাল পর্যন্ত আইএফই-নিয়ন্ত্রিত পূর্ব লন্ডন মসজিদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের সঙ্গেও তিনি সম্পৃক্ত। এই কাউন্সিলও আইএফই-নিয়ন্ত্রিত। বর্তমানে মুসলিম এইডের ট্রাস্টি তিনি। মুসলিম এইডের সঙ্গেও আইএফইর সম্পৃক্ততা রয়েছে। মাঈনউদ্দিন যুক্তরাজ্যে ইসলামি উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান মার্কফিল্ড ইনস্টিটিউটের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। ডেইলি টেলিগ্রাফ।

No comments

Powered by Blogger.