অন্বেষার অন্বেষণ by জাফরিন গুলশান

শিল্পী সব সময় অনুসন্ধিৎসু। শিল্পকর্মের সৃষ্টিতে বহমান বলা ভাষ্য, মনের অভিব্যক্তি, সমাজ-সংস্কৃতির মিথস্ক্রিয়া। নতুনত্ব ও ইতিহাসের সঙ্গে সূত্রবদ্ধতা আমাদের বিশ্লেষণের বিষয়। বাংলাদেশের শিল্পচর্চার অঙ্গনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই চলমান সময়ে শিল্পী আবদুস সবুরের চিত্রকর্মগুলো ধরনের দিক থেকে খানিকটা ইতিহাস-প্রতি মনোনিবেশ।


ষাটের দশকে বাংলাদেশের শিল্পচর্চায় যে আধা-বিমূর্তায়ন, কিউবিস্ট ও অভিব্যক্তিবাদ আন্দোলনের প্রভাব দেশীয় ঘরানায় তৎকালীন মেধাবী শিল্পীরা চর্চা করে যাচ্ছিলেন, তার সঙ্গে দারুণ সাযুজ্য শিল্পী আবদুস সবুরের চিত্রপটের রং-রেখা-কম্পোজিশনের নান্দনিক অভিজ্ঞান। প্রায় সব চিত্রকর্মই তেলরংমাধ্যমে করা। ক্যানভাসের উপরিতলে টেক্সচার। অধিকাংশ চিত্রকর্মের নির্মাণকাল ১৯৮০ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে। ‘শিরোনামহীন’ সিরিজের ছবিগুলো নিরীক্ষাপ্রবণ এবং ষাটের দশকের নন একাডেমিক চর্চার আবেগময় রোমন্থন। উজ্জ্বল ও উষ্ণ রঙের ব্যবহার খুব পরিশীলিত। নীল, ধূসর, হলুদ কিংবা মেটে রঙের বিভিন্ন ক্রমবিকশিত স্তরের টোনের মূল্যবিচার আকর্ষণীয়। ক্যানভাসগুলোতে চিত্রের সাধারণ বৈশিষ্ট্য রেখা। চিকন-মোটা রেখার উপস্থাপনে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন জ্যামিতিক আঙ্গিক। জ্যামিতিক আঙ্গিকের অভ্যন্তরে বিকশিত চিত্রের মূল বিষয়ের। মানুষ ও প্রকৃতি বেশ সন্নিবেশিত। কখনো মৌলিক ও কপ্লিমেন্টারি রঙের মিশেলে বিমূর্ত অভিব্যক্তির প্রকাশ। স্থান বিভাজনে রং-রেখার বুদ্ধিদীপ্ততা লক্ষণীয়। প্রদর্শনীর চিত্রকর্মগুলোর ক্যানভাসের ভারী রঙের স্তরসহ ফেটে যাওয়া রেখাগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভালো লাগা তৈরি করেছে। কিছু কম্পোজিশন বিশ্বখ্যাত শিল্পী মন্দ্রিয়ানকে স্মরণ করায়। একধরনের মনস্তাত্ত্বিক আবেগের বিন্যাস ঘটানো প্রদর্শনীর ‘অন্বেষা’ নামকরণ যথাযথই।
প্রায়বিস্মৃত শিল্পী আবদুস সবুরের একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনীটি বেঙ্গল গ্যালারি অব ফাইন আর্টসে ৩১ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। প্রদর্শনীতে মোট চিত্রকর্মের সংখ্যা ২৯টি।

শিল্পী আবদুস সবুর: জন্ম ১৯৩৬ সালে ঢাকায়। ১৯৫৫ সালে ঢাকা আর্ট ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে ফাইন আর্টসে স্নাতক করেন। কর্মজীবন শুরু করেন লাহোরে। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। তিনি বেবী ইসলামের কাছে সিনেমা ফটোগ্রাফি শেখেন। এফডিসির প্রধান শিল্পনির্দেশক ছিলেন। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য তিনি বাচসাস পুরস্কার, জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার, পাঁচটি জাতীয় পুরস্কারসহ বহু সম্মাননা লাভ করেন। শিল্পী আবদুস সবুর ২০০৮ সালে পরলোকগমন করেন।

No comments

Powered by Blogger.