শিক্ষামন্ত্রীর প্রত্যাশা ও তারুণ্যের নতুন দায়-সময়ের কথা by অজয় দাশগুপ্ত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট হলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের একটি চমৎকার বক্তৃতা শোনার সুযোগ হয়েছিল ১৬ সেপ্টেম্বর। উপলক্ষ জাতীয় অধ্যাপক রংগলাল সেনের সংবর্ধনা। এর আয়োজনে ছিল জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন। রংগলাল সেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান এবং জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তার কর্মজীবনের শুরু হয়েছিল প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকতা দিয়ে।


তারপর দেশের শ্রেষ্ঠতম বিদ্যাপীঠ হিসেবে স্বীকৃত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হিসেবে অবসর গ্রহণ শেষে এখন জাতীয় অধ্যাপক। এ এক অনন্য পথচলা। সাধারণ পর্যায় থেকে কোটিপতি হওয়ার নজির দেশে-বিদেশে অনেক মিলবে। এর পেছনে কঠোর পরিশ্রম ও বিচক্ষণতা কাজ করতে পারে, আবার অনিয়ম-লুটপাটও থাকতে পারে। সরকারি সুবিধার অপব্যবহার করে কেউ কোটিপতি বনে যেতে পারে। আবার 'কে হতে চায় কোটিপতি' অনুষ্ঠানে ১৩টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েও এমন অর্জন সম্ভব। রংগলাল সেন সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে কর্মজীবন শুরু করে পরম সম্মানিত জাতীয় অধ্যাপকের পদ অলঙ্কৃত করেছেন। তার সামনে অর্থবিত্তের হাতছানি অনেক এসেছে, কিন্তু জ্ঞান আহরণ ও বিতরণ কাজেই নিজেকে রেখেছেন নিয়োজিত।
শিক্ষামন্ত্রী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে ষাটের দশকে স্বাধীনতার জন্য তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুুদ্ধ করায় অধ্যাপক রংগলাল সেন এবং সে সময়ের আরও অনেক শিক্ষকের অসম সাহসী ও দৃঢ়পণ ভূমিকার উল্লেখ করেন। তিনি এ প্রসঙ্গ টেনে বলেন, তরুণ প্রজন্মের অনেকে কিছুটা হতাশার সঙ্গেই বলে থাকে, তারা আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবের অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। এদের অনুভূতি-আবেগের প্রতি সম্মান জানিয়েই তিনি বলেন, স্বাধীনতার জন্য আমাদের সে সময়ের আপামর জনগণ বিশেষ করে তরুণ সমাজ ২৩ বছর লড়েছে। সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করতে হয়েছে ৯ মাস। কিন্তু এর পর ৪০ বছর অতিক্রান্ত হলেও আমরা এখনও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যগুলো পুরোপুরি অর্জন করতে পারিনি। এখন যে তরুণ প্রজন্ম, তারা যদি এ লক্ষ্য অর্জনে সফল হয় সেটাও হবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতোই মহৎ ও গৌরবের বিষয়। এখন প্রজন্মের চ্যালেঞ্জ_ মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যসমৃদ্ধ ও গৌরবের বাংলাদেশ গড়ে তোলা। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্তদের বিচারের দাবিতে এ প্রজন্ম সোচ্চার হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ, তারা বলতে চাইছে_ বিষয়টি তামাদি হয়ে গেছে। এমনকি জামায়াতে ইসলামীর কোনো কোনো নেতা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে বলছে, বিচার প্রক্রিয়া ভণ্ডুল করে দেওয়ার ক্ষমতা তাদের রয়েছে। তারা যে এটা ঠিক বলছে না, সেটা প্রমাণের চ্যালেঞ্জ কিন্তু আমাদের নবীন প্রজন্মের সামনে। এটা সবচেয়ে ভালোভাবে করা যেতে পারে নিজেদের অঙ্গন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিংবা কর্মক্ষেত্রে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তারা এটা যাতে ভালোভাবে করতে পারে তার জন্য বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। উপযুক্ত শিক্ষার আয়োজন এ ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পাঠ্যবই অবশ্যই সহায়ক। এ বই অব্যাহতভাবে যুগোপযোগী করতে হবে। একই সঙ্গে চাই মানসম্পন্ন শিক্ষক। রংগলাল সেনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী এ প্রসঙ্গও টেনেছেন। তিনি বলেন, 'স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-মাদ্রাসা প্রতিটি পর্যায়ে শিক্ষকদের এখন যা বেতন দেওয়া হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি বেতন দিতে চাই আমি। সরকারের সামর্থ্য এখনও সীমিত। পর্যায়ক্রমে এ কাজ করতে হবে।'
তার এ মনোভাবকে স্বাগত জানাবেন শিক্ষক হিসেবে যারা নিয়োজিত রয়েছেন এবং যারা এ পেশায় আসতে চান, তাদের সবাই। বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয় সরকারি তহবিল থেকে। কিন্তু স্কুলের একজন শিক্ষক বিএ-বিএসসি, এমনকি এমএ ডিগ্রি এবং তারপর শিক্ষকতা বিষয়ে ট্রেনিং নেওয়ার পর যে বেতন পান তা সরকারি অফিসের কেরানিদের চেয়ে বেশি নয়। এ অবস্থায় মেধাবীরা কেন শিক্ষকতায় আসবে? মেধা-উদ্যম যাদের রয়েছে তাদের আকৃষ্ট করার মতো অনেক প্রতিষ্ঠান এখন বেসরকারি খাতে গড়ে উঠছে। শিল্প-ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান তাদের টানছে। তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য অনেক দক্ষ কর্মী দরকার। অর্ধশত বেসরকারি ব্যাংক ভালো ব্যবসা করছে। তারা কৃতী ছাত্রছাত্রীদের চাকরি দিতে চায়। গ্রামীণফোনের মতো অনেক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা করছে। সরকার স্কুল-কলেজের জন্য দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক তখনই পাবে, যখন ওইসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বেতনের প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিতে পারবে।
এমন একটি যুক্তি দেওয়া যেতে পারে যে, বর্তমানে স্কুলে ৭-৮ হাজার টাকা মাসিক বেতনের চাকরি পেতে অনেকে ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা ঘুষ দিতে চায় এবং দিতেও হয়। প্রাইমারি স্কুলের মাস্টার হতেও এমন অঙ্কের ঘুষের লেনদেন চলে। এ অবস্থায় শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো হলে ঘুষের অঙ্ক আরও বড় হবে। এ যুক্তি উপেক্ষা করা চলে না। তবে তার প্রতিকারের জন্য চাই নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করা। সরকারের পাশাপাশি দানশীল ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানের কাছ থেকেও শিক্ষা তহবিলে অর্থ সংগ্রহ করা আবশ্যক। শিক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি শিক্ষাকল্যাণ ফাউন্ডেশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। এ তহবিলে কেউ অর্থ দান করলে তা আয়করমুক্ত থাকবে। তবে সরকার আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। যেমন, অর্থদাতাদের প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত করা। এ ক্ষেত্রে অবশ্য তাদেরই মনোনীত করতে হবে, যাদের উপযুক্ত শিক্ষা রয়েছে। রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক স্বার্থে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগানো হবে না_ এমন নিশ্চয়তাও থাকা চাই। সরকারের শিক্ষাকল্যাণ ফান্ডের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবেও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ সংগ্রহের ব্যবস্থা করা যায়। স্কুল-কলেজকে কেন্দ্র করে উপযুক্ত মানের শিক্ষক নিয়োগের জন্য তহবিল গঠিত হতে পারে। কোনো স্কুল যদি এমএ-এমএসসিতে ফার্স্টক্লাস পাওয়া ছাত্রছাত্রীকে মাসে ৩০-৩৫ হাজার টাকা বেতন দিয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে চায়, তাতে আপত্তির কারণ নেই। এ ধরনের পাঁচজন শিক্ষক নিয়োগ দিতে গেলে মাসে হয়তো বাড়তি এক লাখ টাকার মতো ব্যয় পড়বে। স্থানীয়ভাবে এ অর্থের ব্যবস্থা হতে পারে। স্কুলের সাবেক ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যারা প্রতিষ্ঠিত, তাদের এ জন্য অর্থ প্রদানে উৎসাহিত করা যেতে পারে। তবে এ ধরনের কাজের জন্য আবশ্যকীয় শর্ত হচ্ছে স্কুল-কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটিগুলোকে ঢেলে সাজানো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটিকে দুই ধরনের সদস্য রয়েছে_ নির্বাচিত এবং মনোনীত। গণতন্ত্র সম্ভবত সব স্থানে সুফল দেয় না_ স্কুল-কলেজের ম্যানেজিং কমিটিতে যারা নির্বাচিত হয়ে আসেন তাদের অনেকের কর্মকাণ্ড দেখে এমন অভিমত দেওয়াই যায়। মনোনীতদের অবস্থা আরও খারাপ। বিদ্যায় উৎসাহী হিসেবে এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা রয়েছে, যাদের সমাজে পরিচয় জ্ঞানের রাজ্যে অশুভ হানাদার হিসেবে। তারা শিক্ষকদের অপমান করেন যখন তখন। সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দালানকোঠা নির্মাণ, সায়েন্স ল্যাবরেটরির সরঞ্জামসহ নানা ধরনের কেনাকাটা, খেলার মাঠের উন্নয়নসহ বিভিন্ন কাজে যে বরাদ্দ প্রদান করে তাতে এরা ভাগ বসায়। শিক্ষক নিয়োগ তাদের জন্য ঘুষের বড় মওকা। এখন শত শত স্কুলে প্রধান শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। এর একটি কারণ, ম্যানেজিং কমিটি চায় না যে, স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদে উপযুক্ত লোক আসুক। ভারপ্রাপ্তরাই বেশি মন জুগিয়ে চলবে এবং অন্যায় আবদার রক্ষা করবে বলে কমিটির প্রভাবশালী সদস্যরা মনে করেন।
সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে বেশ কিছু ভালো কাজ করেছে। বিনামূল্যে বই প্রদান এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময়ে অনেক ভালো দাবি উত্থাপন করেছে। কিন্তু তাতে সব ছাত্রছাত্রীকে বিনামূল্যে বই প্রদানের দাবি কখনও স্থান পায়নি। বই সরবরাহের নামে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী ছাত্রছাত্রী এবং সরকার উভয়কেই জিম্মি করে রেখেছিল। এ থেকে মুক্তি মিলেছে। লাখ লাখ ছাত্রছাত্রীকে সরকার বৃত্তি দিচ্ছে। ছাত্রীদের উপ-বৃত্তি নিয়ে অতীতে অনেক অনিয়ম হয়েছে। এক ছাত্রী ৫-৬টি স্কুলে নাম লিখিয়ে বৃত্তি তুলেছে_ এমন ঘটনাও ঘটেছে। নজরদারি বৃদ্ধি করায় এ ধরনের ঘটনা এখন কম।
ম্যানেজিং কমিটি এবং সরকারি শিক্ষা বিভাগের কর্মী উভয়ের মূল কাজ হওয়া উচিত শিক্ষার মান বাড়ানো। অন্যথায় সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে যেসব ভালো উদ্যোগ গ্রহণ করছে, তার পুরো সুফল পাওয়া যাবে না। শুধু ম্যানেজিং কমিটি নয়, বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও দলীয় লোক বসানোর মনোভাব পাল্টাতে হবে। যখন যে দল ক্ষমতায়, তারা নিজের লোককে বিভিন্ন পদে বসায়। অনেক ক্ষেত্রেই এর পরিণতি ভালো হয় না। প্রকৃত জ্ঞানের সাধনা যারা করেন, তারা এতে নিরুৎসাহিত বোধ করেন। শিক্ষামন্ত্রী বলছিলেন, আমরা এমন ব্যক্তিকে উপাচার্য কিংবা জাতীয় অধ্যাপক পদে দায়িত্ব দিতে চাই, যিনি তদবির করবেন না। বরং তাকে গিয়ে অনুরোধ-অনুনয় করব এ দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। এমন আদর্শ ব্যবস্থায় আমাদের পেঁৗছাতেই হবে।
তরুণ প্রজন্ম দেশকে ভালোর দিকে বদলে দিতেই পারে। ষাটের দশকের তরুণ প্রজন্ম বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনে যুক্ত ছিল। এখন বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী প্রকৃতপক্ষে 'নিরপেক্ষ'। তাদের ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের সভা-সমাবেশে দেখা যায় না। বাম সংগঠনগুলোর ধারেকাছেও তারা নেই। কিন্তু দেশ নিয়ে তারা ভাবে_ তার প্রমাণ নানাভাবে পাওয়া যায়। সংবাদপত্রের নিউজ দেখে তারা ইন্টারনেটে অভিমত দেয়। বিতর্ক অনুষ্ঠানে চমৎকার যুক্তি দেয়। পত্রিকায় নানা বিষয়ে লেখা পাঠায়। টেলিভিশনের রিয়ালিটি শোতে দলে দলে অংশ নেয়। অঙ্ক বা ভাষা প্রতিযোগিতার মতো 'নিরস আয়োজনে' ভিড় জমায়। দুর্ভাগ্য যে, ছাত্র সংগঠনগুলোর কাজের ধারা এমন হয়ে পড়েছে, তারা এ প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে পারে না। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পাট কবে চুকে গেছে! বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে ছাত্রদল অন্য কোনো সংগঠনকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ছাত্রলীগ একাই নির্বাচন করবে। তবে একা নির্বাচন করে বললে ভুল বলা হবে। ছাত্রলীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে ছাত্রলীগ। ছাত্রদলের প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদল। তারা নিজেদের মধ্যে লড়ে এবং কখনও কখনও রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটায়। যে দেশে ছাত্র আন্দোলনের ঐতিহ্য নিয়ে অনেক গর্ব করা হয়, সেখানে এ কেমন ধারা চালু হয়েছে? এ থেকে বের হয়ে আসার কথা ভাবা হয় না। এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী পড়ছে। সেখানে 'অরাজনৈতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান' যুক্তি দেখিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে দেওয়া হয় না। অথচ ছাত্রদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশের জন্য শুধু নয়, তাদের শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি 'সিলেবাসে নেই' এমন কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য এ ধরনের সংসদ প্রয়োজন।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান এখন দুরূহ। এক একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫-৩০ হাজার ছাত্রছাত্রী। ছাত্র সংখ্যা বছর বছর বাড়ছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে নাকি ৪০ হাজারের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন আয়োজন সহজ কাজ নয়। আমার নিজের প্রস্তাব হচ্ছে : প্রত্যেক ক্লাসে একজন করে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। এভাবে যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে, তাদের মধ্য থেকে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি-জিএস প্রভৃতি পদের নির্বাচনে প্রার্থী হবে। তবে এজন্য আরেক দফায় ভোট নেওয়া হবে, কিন্তু তার আয়োজন হবে ক্লাসে ক্লাসে। ছাত্র সংগঠনকেন্দ্রিক যে নির্বাচনের পদ্ধতি চালু ছিল (প্রায় দুই যুগ ধরে নির্বাচন কার্যত বন্ধ) তা অনুসরণের কোনো যুক্তি এখন আর নেই। এতে সংগঠন করে না এমন শিক্ষার্থীদের (যাদের সংখ্যাই বেশি) মতামত প্রতিফলিত হয় না। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে এসব ছাত্রছাত্রীই যে বেশি প্রয়োজন। তারা দলে দলে এগিয়ে এসেছিল বলেই একাত্তরে বাঙালি জাতি জয়ী হয়েছিল। এখন নতুন মুক্তিযুদ্ধ অর্থাৎ সমৃদ্ধ স্বদেশ গঠনও সম্ভব হবে না, যদি এখনকার তরুণ প্রজন্ম দলে দলে এগিয়ে না আসে।

অজয় দাশগুপ্ত :সাংবাদিক
ajoydg@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.