বিট পুলিশিং-নিবিড় নজরদারিতে আন্তরিক হতে হবে

পুলিশ কর্তৃপক্ষ মনে করছে, ওয়ারী বিভাগে বিট পুলিশিং চালু করে ভালো ফল পাওয়া গেছে। সে কারণে উৎসাহিত হয়ে রাজধানীর ৪১টি থানাকে ৬০০ ছোট ছোট অঞ্চলে ভাগ করে পুলিশ বিটব্যবস্থা চালু করেছে। এ ব্যবস্থা অনুযায়ী প্রতিটি থানাকে ১৫টি পৃথক বিটে ভাগ করা হয়েছে।


বিটে থাকবেন একজন করে বিটপ্রধান এসআই, সঙ্গে একজন এএসআই এবং তিন থেকে চারজন কনস্টেবল। থানার পরিদর্শক বিট পুলিশের কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকবেন এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কার্যক্রম সমন্বয় করবেন।
তাঁদের কাজের পরিধিতে আছে, বিটপ্রধানরা অপরাধীদের সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ করবেন। চিহ্নিত অপরাধী, ছিনতাইকারী, অবৈধ অস্ত্রধারী, বখাটে, নারী উত্ত্যক্তকারীদের গ্রেপ্তার থেকে শুরু করে পরোয়ানা তামিল এবং সন্দেহভাজনদের তালিকা পর্যন্ত তৈরি করবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন।
পুলিশের এ ব্যবস্থাটি যথোপযুক্ত বলে আমরা মনে করি। কারণ চিরাচরিত ব্যবস্থায় ঘনবসতিপূর্ণ এই মহানগরীতে সঠিকভাবে নজরদারি সম্ভব হয়ে উঠছিল না। এখন অপরাধীদের অপরাধের ধরন পাল্টেছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিনে দিনে আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে। পারিবারিক কলহ থেকে শুরু করে নানা ধরনের সংঘাত দেখা যাচ্ছে প্রতিটি মহল্লায়। অব্যবস্থাপনার কারণে এই মহানগরীতে মানুষের আইডেনটিটি তথা পরিচয় নিয়েও বড় ধরনের নানা জটিলতা রয়েছে। পুলিশ সঠিকভাবে কাজ করলে এ সমস্যাগুলো অনেকটা দূর হওয়া সম্ভব। এ ছাড়া পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের যে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকার কথা বলা হয়েছে, তা তাঁদের অধিক দায়িত্বশীল করে তুলবে। তবে সব কিছুর ঊধর্ে্ব পুলিশকে সততা ও আন্তরিকতা বাড়াতে হবে। তা না হলে এ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে পুলিশকে রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কারণ যত দিন পুলিশ প্রশাসনকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা পুরোপুরি বন্ধ না হবে, তত দিন পর্যন্ত এ প্রশাসন দিয়ে কাঙ্ক্ষিত কাজ আদায় করা সম্ভব হবে না। অন্যদিকে পুলিশের বাড়তি কাজে লোকবলের যেন ঘাটতি না পড়ে, সে দিকটাও বিবেচনায় রাখা দরকার। সত্যি কথা, পুলিশের চেইন অব কমান্ড অনেক বিভাগের চেয়ে এখনো ভালো।
এ নতুন ব্যবস্থায় চেইন অব কমান্ড যেন আরো সুদৃঢ় হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। পুলিশের এ উদ্যোগে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেলে অন্যান্য শহরেও এ ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। পুলিশের এ ধরনের নিবিড় নজরদারি থাকলে সমাজে অপরাধের পরিমাণও কমবে বলে আমরা মনে করি। রমজান ও ঈদের মৌসুমে অপরাধ হ্রাস পেলে সাধারণ মানুষ অনেক বেশি শান্তি ও স্বস্তি পাবে। তাই মানুষ অবশ্যই এ ব্যবস্থাকে স্বাগত জানাবে।

No comments

Powered by Blogger.