ভৈরব বিদ্যুৎকেন্দ্র-মেঘলা আকাশেও রৌদ্রোজ্জ্বল থাকুক
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে স্থাপিত বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রটির বেহাল দশা নির্দেশের জন্য শনিবার সমকালে ছাপা হওয়া আলোকচিত্রটিই যথেষ্ট। সুইচ না থাকায় যে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিডার লাঠি দিয়ে গুঁতিয়ে চালু করতে হয়, সেই সরবরাহ লাইন কতটা নাজুক_ তা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।
দেশের বাকি অংশে যেখানে বৃষ্টিতে বিদ্যুতের চাহিদা কমে আসে এবং ফলে লোডশেডিং কম হয়; আর আকাশে মেঘ জমলেই ভৈরব বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করে দিতে হয়। ঝড় ও বৃষ্টিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ চলে যায় বলে কর্তৃপক্ষ এ ব্যবস্থা নিয়েছে। ফলে আকাশ মেঘমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হয় ভৈরববাসীকে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার অভিনব সংকট বটে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরবরাহ কেন্দ্রটিতে স্থাপিত আট বছর মেয়াদের ট্রান্সফরমারগুলো ইতিমধ্যে ১৭ বছর পার করেছে। প্রতিটি ব্রেকার মরিচা-জর্জরিত, স্লুইসও কাজ করে না। আমরা প্রশ্ন করতে চাই, দেশের আর কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রের ট্রান্সফরমারের কি মেয়াদ শেষ হয় না? অন্যগুলো সময়মতো সংস্কার বা বদলানো সম্ভব হলে ভৈরব বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের ক্ষেত্রে কী সমস্যা তা বোধগম্য নয়। আসলে বর্তমান পরিস্থিতি যে ধারাবাহিক অবহেলার ফসল, সে ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ সামান্যই। বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিনজন নীতিনির্ধারক যে জেলার প্রতিনিধিত্ব করেন, সেখানকার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্রটির বিদ্যুৎকেন্দ্রের এমন দশা অবিশ্বাস্যও বটে। সমকালের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যাচ্ছে, কেন্দ্রটির ৮০ ভাগ ট্রান্সফরমার মেয়াদোত্তীর্ণ এবং সেগুলো বিকল হলে ঢাকার টঙ্গী থেকে মেরামত করে নিয়ে যেতে হয়। এই দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারও টু-পাইস কামানোর ধান্দা যুক্ত কি-না খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাই। সরকার যখন বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার বিষয়টিকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছে, তখন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের এমন দশা নানা সন্দেহ আর প্রশ্নই উত্থাপন করে। আমরা মনে করি, ভৈরবের পরিস্থিতি উন্নয়নে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক উদ্যোগই যথেষ্ট। মেঘ-বৃষ্টির দিনেও অবশ্যই আলোকোজ্জ্বল ভৈরব সম্ভব।
No comments