ফুটবলে এত মৃত্যুর মিছিল!

১৯৬৪ সালের ২৩ মে, ফুটবল ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। লিমার আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল পেরু-আর্জেন্টিনা। খেলা দেখতে এসে এদিন মৃত্যুকেই আলিঙ্গন করতে বাধ্য হয়েছিল ৩২০ জন দর্শক! ফুটবল ইতিহাসে আছে এমন কিছু রক্তাক্ত অধ্যায়। মিসরের ঘটনা যে তালিকার সর্বশেষ সংযোজন।


গত তিন দশকে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা—

অক্টোবর ১৯৮২, রাশিয়া: উয়েফা কাপের ম্যাচে মস্কো স্পার্তাক মুখোমুখি হয়েছিল হল্যান্ডের এইচএফসি হারলেমের। ম্যাচ শেষে ভিড়ের ধাক্কাধাক্কিতে নিহত হয় অনেক দর্শক। প্রথমে এ ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল তখনকার সোভিয়েত সরকার। পরে সরকারিভাবে ৬৬ জন নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করা হয়। যদিও হতাহতের আসল সংখ্যাটি আরও বড় হতে পারে বলে অনেকের অনুমান।
মে ১৯৮৫, ব্রিটেন: স্বাগতিক ব্র্যাডফোর্ডের সঙ্গে লিঙ্কন সিটির ম্যাচে গ্যালারির কাঠের স্ট্যান্ডে আগুন ধরে যায়। মারা যায় ৫৬ জন।
মে ১৯৮৫, বেলজিয়াম: ব্রাসেলসের হেইসেল স্টেডিয়ামে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল জুভেন্টাস-লিভারপুল। ম্যাচের আগে দুই দলের সমর্থকদের সংঘর্ষে ৩৯ জন নিহত হয়, যাদের বেশির ভাগই ইতালিয়ান।
মার্চ ১৯৮৮, নেপাল: আকস্মিক শিলাবৃষ্টি শুরু হলে ভয়ে দর্শকেরা ছোটাছুটি শুরু করে। কিন্তু কাঠমান্ডুর জাতীয় ফুটবল স্টেডিয়ামের বেরোনোর পথগুলো বন্ধ থাকায় হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে ৯০ জনের বেশি দর্শক নিহত হয়।
এপ্রিল ১৯৮৯, ব্রিটেন: এফএ কাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল লিভারপুল-নটিংহাম ফরেস্ট। হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে ৯৬ জন লিভারপুল সমর্থক মারা যায়। শেফিল্ডের হিলসবরো স্টেডিয়ামের এ ঘটনা ‘হিলসবরো ট্রাজেডি’ নামে শোকের এক কালো অধ্যায় হয়ে আছে লিভারপুলের ইতিহাসে।
জানুয়ারি ১৯৯১, দক্ষিণ আফ্রিকা: প্রাক-মৌসুম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল কাইজার চিফস-অরল্যান্ডো পাইরেটস। পাইরেটসের এক সমর্থক ছুরি নিয়ে চিফসের সমর্থকদের ওপর হামলা চালালে হুড়োহুড়ি শুরু। পদপিষ্ট হয়ে ৪২ জন মারা যান।
মে ১৯৯২, ফ্রান্স: ফ্রেঞ্চ কাপে বাস্তিয়া-অলিম্পিক মার্শেই ম্যাচ শুরুর আগে ফুরিয়ানি স্টেডিয়ামের একটি স্ট্যান্ড ধসে পড়ে। ১৮ জন নিহত হলেও আহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ৪০০।
অক্টোবর ১৯৯৬, গুয়াতেমালা: বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে কোস্টারিকার বিপক্ষে গুয়াতেমালার ম্যাচ। গ্যালারির ওপরের দিকের দর্শকেরা গড়িয়ে নিচের দিকে পড়ে যায়। ৮২ জন নিহত ও ১৪৭ জন আহত হয়।
এপ্রিল ২০০১, দক্ষিণ আফ্রিকা: আবারও কাইজার চিফস বনাম অরল্যান্ডো পাইরেটস ম্যাচ। আবারও হুড়োহুড়ি। জোহানেসবার্গের এলিস পার্ক স্টেডিয়ামে ৪৩ জনের প্রাণনাশ।
মে ২০০১, ঘানা: বিক্ষুব্ধ দর্শকদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। হিতে বিপরীত হয়। আক্রার ফুটবল স্টেডিয়ামে দর্শকদের হুড়োহুড়িতে ১২৬ জন প্রাণ হারায়। আফ্রিকার ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম কালো অধ্যায়।
মার্চ ২০০৯, আইভরিকোস্ট: বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে মালাবির সঙ্গে ম্যাচে দর্শকদের হুড়োহুড়িতে ১৯ জন নিহত হয়।
ফেব্রুয়ারি ২০১২, মিসর: পোর্ট সৈয়দের ক্লাব আল-মাসরি মিসরের অন্যতম সফল ক্লাব আল আহলিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে দেওয়ার পর সমর্থকদের দাঙ্গা শুরু। ৭৪ জন নিহত এবং ১ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স ও এএফপি

No comments

Powered by Blogger.