উত্তম কথা সদকাস্বরূপ by কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক

সুন্দর ও সত্য কথা মনে শান্তির সৃষ্টি করে। বুখারি শরিফের হাদিসে আছে, 'উত্তম কথা সদকাস্বরূপ।' কথাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিল্পও বলা যায়। একই কথা বহুভাবে প্রকাশ করার ক্ষমতা আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন। কথায় বন্ধু শত্রু হয়, আবার শত্রুও মিত্র হয়। কথা মিষ্টির চেয়েও বেশি মিষ্টি, বিষের চেয়েও বেশি বিষাক্ত এবং তেতোর চেয়েও তেতো।


একই কথা কেউ বললে শুনতে ভালো লাগে। আবার অন্যে তা বললে মনে জ্বালা ধরে যায়। বুকে বুলেট বিঁধলে তা অপসারণ করা যায়। কিন্তু কথার বুলেট বুকে আজীবন কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হাতের মারের চেয়ে কথা মারের শক্তি বেশি। তাই কথার অনেক শক্তি। এ শক্তিকে সুন্দরভাবে, সুন্দর কাজে ব্যবহার করা উচিত। পরস্পরের সুন্দর কথা বলার প্রতি নির্দেশ করে সূরা বাকারায় ইরশাদ হয়েছে, 'মানুষের সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলো।'
যে কোনো কথা বলার পূর্বে ভেবেচিন্তে কথা বলা প্রয়োজন। রাসূল (সা.) বলেছেন, 'যে আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে। কঠোর বা কর্কশ কথা আল্লাহ পছন্দ করেন না।' আল্লাহতায়ালা মানুষকে কেবল কথা বলতেই শেখাননি বরং অপরের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হবে সে সম্পর্কেও কোরআনের বিভিন্ন সূরায় বিশদ নির্দেশনা প্রদান করেছেন। সেসব জায়গায় মানুষের সঙ্গে নম্রভাবে কথা বলার প্রতি ইঙ্গিত করে অসার ও মন্দ কথা পরিহার করতে বলেছেন।
সত্য ও সুন্দর কথা বললে, নম্র ও সম্মানসূচক ব্যবহার করলে আল্লাহতায়ালা ভীষণ সন্তুষ্ট হন। মানুষের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। ভালো কাজের কথা বলা, ন্যায়ের কথা বলা, মানুষকে সুপরামর্শ দেওয়া, কথা দিয়ে কথা রক্ষা করা, অহেতুক কথা না বলা ইবাদতের পর্যায়ভুক্ত। অশল্গীল, মন্দ, মিথ্যা ও নিরর্থক কথায় আল্লাহ নাখোশ হন। ইমাম গাজ্জালী (রহ.) বলেছেন, 'অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইবাদত ও নেকির সংরক্ষণ বা ধ্বংস একমাত্র জবানের দ্বারাই সাধিত হয়। কারণ, কথার দ্বারা যেমন তা হিফাজতের ব্যবস্থা হয়, তেমনি একটি কথার দ্বারা তা বিনষ্টও হয়ে যেতে পারে।'
শিশুদের সঙ্গে শিশুসুলভ মনে, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে নম্র ও ভদ্রভাবে, বাবা, মা ও বড়দের সঙ্গে ইজ্জত ও সম্মান সহকারে সুন্দর কথা বলা উচিত। বাবা-মায়ের সঙ্গে নরম ও শান্ত মেজাজে কথা বলার জন্য সূরা বনী ইসরাইলের ২৩নং আয়াতে নির্দেশ এসেছে, 'তাদিগকে উফ্ বলো না এবং তাদিগকে ধমক দিও না; তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বলো।'
খোশ দিলে সুন্দর কথা, হাসিখুশি প্রকৃতির মেজাজ মানুষের দুশ্চিন্তা ও বিভিন্ন রোগ যন্ত্রণার উপশম ঘটায়, মানুষের মনে এক অনাবিল সুখানুভূতি এনে দেয়, মানুষকে হতাশা থেকে মুক্ত করে আল্লাহর প্রতি আস্থা বাড়ায় এবং খোদাভীরু থেকে শিক্ষা দেয়। তাই ইমানদার ব্যক্তিদের প্রধান বৈশিষ্ট্য সরলতা, ভদ্রতা, সত্য ও সুন্দর কথা।
নৈতিকতা, সুন্দর কথা ও বিনিয়োগবোধই সর্বক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনয়ন করে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, 'আল্লাহতায়ালা নিজে বিনয় অবলম্বনকারী, তিনি বিনয়কে পছন্দ করেন এবং তিনি নম্রতা অবলম্বনকারীকে এত বেশি দান করেন যা কঠোরচিত্ত ব্যক্তিকে করেন না।' বিনয়ের সঙ্গে নম্র কথাই সুন্দর কথা। সুন্দর কথায় রয়েছে আল্লাহর রহমত ও শান্তি। সুন্দর কথা ও ভালো ব্যবহারের জন্য কোনো অর্থ খরচ করতে হয় না। বরং সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায়। আল্লাহও খুশি হন। আমরা যদি সামান্য ভালো-মন্দ চিন্তা করে, বিবেক খরচ করে সুন্দর কথা বলে, কথায় ও কাজে মিল রেখে, কথা দিয়ে কাউকে কষ্ট না দিয়ে চলতে পারি, তাহলে সমাজে শান্তি ফিরে আসবে।
শধষধসরফবধ@ুধযড়ড়.পড়স

No comments

Powered by Blogger.