ওয়ারেন বাফেটের বিনিয়োগ ভাবনা-অর্থনীতি by হাসান মাহ্মুদ বিপ্লব

আপনাকে অবশ্যই বাফেটের নীতি অনুসরণ করে ভালো শেয়ারে অধিকাংশ বিনিয়োগ করতে হবে। সাহসী হয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগকারীর আদর্শ অনুসরণ করে অল্প কিছু ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করেই দেখুন। জীবন পাল্টে যাবে। বাফেটের মতে,


১৫ পিইর ঊধর্ে্ব শেয়ারে বিনিয়োগ কখনও ভালো বিনিয়োগ হতে পারে না এবং অসৎ শিল্পপতিদের কোম্পানির ক্ষেত্রেও তার মত একই


অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের প্রতি উপদেশ দেন যে, তারা যেন শেয়ার বিনিয়োগে বহুমুখিতার নীতি অবলম্বন করেন। যার অর্থ তারা শেয়ার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের কোম্পানির শেয়ারের মাধ্যমে তাদের পোর্টফোলিওটি যেন সাজান। এতে ধারণা করা হয়, তাদের বিনিয়োগে ক্ষতির পরিমাণ কম হওয়ার একটি সম্ভাবনা থাকবে।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই বহুমুখিতার ব্যাপারে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট বলেন, এটি শেয়ার বিনিয়োগের অনিবার্য সঠিক নীতি হতে পারে না। তিনি সবসময় অল্প কিছু শেয়ারে বরং বৃহৎ আকারে বিনিয়োগে আগ্রহী। বাফেট মনে করেন, আপনি যদি সঠিক কোম্পানিটি পেয়ে যান, তাহলে কেন বিনিয়োগকারী হিসেবে আপনি অল্প টাকা সেই শেয়ারে বিনিয়োগ করবেন। তিনি বিশ্বাস করেন ম্যাক ওয়েস্টস দর্শনমতে, একটি ভালো শেয়ারে সর্বোচ্চ বিনিয়োগই সবচেয়ে ভালো পন্থা। বাফেট শেয়ার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবসময় বহুমুখিতার নীতিবিরোধী, এটাই বিনিয়োগকারী হিসেবে সাফল্যের ইতিহাস। এটা সত্যিই সবার কাছে অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার যে, Wall Street এই প্রথাবিরোধী। সে ক্ষেত্রে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বিনিয়োগকারী হিসেবে এই বহুমুখিতার নীতি কতটা ভুল নীতি হতে পারে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না, যেখানে ভালো শেয়ারের সংখ্যা হাতে গোনা যায়।
এখানে অধিকাংশ ব্রোকার বিনিয়োগকারীদের এই পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে, আপনার পোর্টফোলিওর ক্ষেত্রে এক ঝুড়িতে সব ডিম রাখা ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিকর। অথচ বিষয়টি ভেবে দেখার বিষয়। আপনি যদি অনেক কোম্পানির শেয়ার দিয়ে আপনার বিনিয়োগ সাজান, তাহলে সেটা কম ঝুঁকিপূর্ণ হবে, এটি বাংলাদেশের অধিকাংশ ব্রোকারের মতো। অথচ বাফেট সারাজীবন এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তার মতে, বিনিয়োগকারীরা যদি কেবল ৫টি ভালো কোম্পানিতে সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে পারেন, তাহলে তার সঠিক বিনিয়োগের মাধ্যমে আর্থিকভাবে যে কেউ লাভবান হতে পারেন। এখন আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে_ব্রোকারদের কথামতো ২০টি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করবেন, নাকি সফল বিনিয়োগকারী বাফেটকে অনুসরণ করবেন?
বাফেট যখন নিজের জীবনে একটি ভালো কোম্পানির সঠিক দামের সন্ধান পেয়েছেন, তিনি তার সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তিনি Coca-cola কোম্পানির শেয়ারের ক্ষেত্রে এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছিলেন, যা ছিল কোকোকোলার ২০০ মিলিয়ন শেয়ার। American Express -এর শেয়ারের ক্ষেত্রে ১৫১ মিলিয়ন শেয়ার, petro-china:china oil company র ক্ষেত্রে তিনি বিনিয়োগ করেছিলেন ৪৮৮ মিলিয়ন ডলার। আজকে যার বাজারমূল্য ১.২ বিলিয়ন বা ১২০০ মিলিয়ন ডলার। ২০০৪ সালে Berkshire hathaway ১০টি কোম্পানির শেয়ারে তাদের বিনিয়োগ করেছিল, যা ছিল তাদের কোম্পানির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি কোম্পানিতে বিনিয়োগ। যদিও অধিকাংশ সময় বাফেটের এই কোম্পানি মাত্র ৫টি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করত। তিনি মনে করেন, সঠিক মূল্যে আপনি যদি একটি ভালো কোম্পানির শেয়ারে সর্বোচ্চ টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন, তাহলে তা আপনাকে সবচেয়ে ভালো আর্থিক ফল দেবে।
Charlie Munger যিনি বাফেটের দীর্ঘদিনের সহকর্মী, তিনিও মনে করেন, অল্প কয়েকটি ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগই সঠিক বিনিয়োগ, যা বিনিয়োগকারীর জীবন পাল্টে দিতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে আপনার ধৈর্য বা সঠিক কোম্পানি নির্বাচন সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। ধারণা থাকতে হবে পুঁজিবাজার সম্পর্কে। তার মতে, বাফেটের এই সাফল্যের জন্য শেয়ারের বহুমুখিতার নীতি গ্রহণ না করাই তাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগকারীর সম্মান এনে দিয়েছে। যখন অধিকাংশ ব্রোকারের ধারণা অল্প কিছু শেয়ারে বিনিয়োগ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, তখন আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, বাফেট ৪৪ বিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছেন, তার Berkshire hathaway -এর ৪,৭৪,৯৯৮টি শেয়ারে বিনিয়োগ করে এবং শুধু এই একটি কোম্পানিতে বিনিয়োগের মাধ্যমেই তা ঘটেছে। বাফেটের গুরু বেঞ্জামিন গ্রাহামের Geico Insurance কোম্পানির বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটনা ঘটেছিল। আপনি বিনিয়োগকারী হিসেবে যদি একটি ভালো কোম্পানি পান, তবে কেন আপনি আপনার অধিকাংশ বিনিয়োগ সেই কোম্পানিতে করবেন না, তার বদলে দুর্বল ২০টি কোম্পানিতে আপনার অর্থ বিনিয়োগ করবেন?
আপনাকে অবশ্যই বাফেটের নীতি অনুসরণ করে ভালো শেয়ারে অধিকাংশ বিনিয়োগ করতে হবে। সাহসী হয়ে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগকারীর আদর্শ অনুসরণ করে অল্প কিছু ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ করেই দেখুন। জীবন পাল্টে যাবে। বাফেটের মতে, ১৫ পিইর ঊধর্ে্ব শেয়ারে বিনিয়োগ কখনও ভালো বিনিয়োগ হতে পারে না এবং অসৎ শিল্পপতিদের কোম্পানির ক্ষেত্রেও তার মত একই। ডিএসইর বিনিয়োগকারীরা ২০১০ সালে যে ক্ষতির দেখা পেয়েছেন, বাফেটের নীতির বাইরে গিয়ে কখনও তারা সেই ক্ষতি থেকে পরিত্রাণ পাবেন না। আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ অনুসরণ করলে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগকারী বাফেটকে অনুসরণ করাই যথেষ্ট। বাফেটের সফলতা প্রমাণ করে, অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের বাইরে গিয়েও সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।

হাসান মাহ্মুদ বিপ্লব :শেয়ারবাজার বিশ্লেষক

No comments

Powered by Blogger.