পার্বত্য চুক্তি-অবাস্তবায়িত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ by অরুণ কর্মকার ও বুদ্ধজ্যোতি চাকমা

রকার পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অবাস্তবায়িত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ জোরদার করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে গত সোমবার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমার সঙ্গে বৈঠক করেছেন।


কাল রোববার চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। কমিটির সভাপতি ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সংসদ ভবনের কার্যালয়ে এই সভা হবে। সভায় সন্তু লারমা উপস্থিত থাকবেন বলে জেএসএসের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও জেএসএস সূত্র জানায়, গণভবনে শেখ হাসিনা ও সন্তু লারমার মধ্যে সোমবারের বৈঠকে চুক্তি বাস্তবায়নে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই বিষয়গুলো চূড়ান্ত করে বাস্তবায়ন পর্যায়ে নিয়ে যেতে কালকের সভায় চূড়ান্ত করা হবে। এই বিষয়গুলোর মধ্যে ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন জাতীয় সংসদের আসন্ন অধিবেশনে সংশোধন করা হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিধিমালা প্রণয়ন করা হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পার্বত্য চট্টগ্রামের বন, ভূমিসহ সাতটি বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব জেলা পরিষদগুলোর হাতে হস্তান্তর করা হবে, যাতে ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি আইন সংশোধনের পর কার্যকর হলে ভূমির মালিকানা নির্ধারণ ও হস্তান্তরে কোনো সমস্যা না হয়।
এ ছাড়া সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের আর্থিক কার্যক্রম নিয়মিত নিরীক্ষা করারও একটি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করবে।
সূত্র জানায়, জেএসএস পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্যাপারে সরকারি যে পদক্ষেপ দাবি করছে, গণভবনের বৈঠকে তা-ও আলোচিত হয়। এর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাংসদেরাও এই দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেএসএসের সূত্রগুলো জানায়, পার্বত্য চুক্তির অবাস্তবায়িত ধারা ও বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। সরকারের শীর্ষপর্যায়ের সঙ্গে জেএসএসের আলোচনা এবং চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির রোববারের সভার পর এই কাজে আবার গতি সঞ্চার হবে বলে জেএসএস আশা করছে।
এ বছর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পঞ্চদশ বছরে পড়েছে। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ওই চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে স্বায়ত্তশাসনকামী পাহাড়িদের সঙ্গে সত্তরের দশকের মাঝামাঝি থেকে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটে। কিন্তু গত ১৪ বছরে চুক্তির একটি মৌলিক বিষয়ও বাস্তবায়িত না হওয়ায় এ বছর আবার সেই স্বায়ত্তশাসনের দাবি উঠেছে। চুক্তির বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জেএসএস ওই দাবি তোলে।
এ ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বেড়ে চলেছে। অবৈধ অস্ত্র ছড়িয়ে পড়েছে। জেএসএস এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগোষ্ঠী মনে করে, চুক্তি বাস্তবায়িত না হলে সেখানকার পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
যা ঝুলে আছে: চুক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি অবাস্তবায়িত অবস্থায় ঝুলে আছে তা হলো, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমিবিরোধ নিরসন এবং জুম্ম শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন। এ ছাড়া চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতি-অধ্যুষিত বিশেষ অঞ্চলের স্বীকৃতি দেওয়া এবং এই বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণের কোনো পদক্ষেপ সরকার এখনো নেয়নি। আঞ্চলিক পরিষদের দায়িত্ব ও ক্ষমতাও কার্যকর করা হয়নি।
আঞ্চলিক পরিষদ বিধিমালাসহ অন্যান্য বিধিও প্রণয়ন করা হয়নি। আঞ্চলিক ও জেলা পরিষদের নির্বাচনও হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী তিন জেলার অস্থায়ী সেনাক্যাম্পও সরানো হয়নি। এ ধরনের প্রায় ৫০০ ক্যাম্পের মধ্যে বর্তমান সরকার ৩৫টি এবং এর আগে আরও ৩১টি ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সূত্রগুলো জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও সন্তু লারমার বৈঠকের আলোচনা অনুযায়ী পদক্ষেপ গৃহীত হলে এগুলোর মধ্যে অনেক বিষয়ের বাস্তবায়ন-প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হতে পারে বলে সরকারি ও জেএসএসের সূত্রগুলো জানায়।

No comments

Powered by Blogger.