সাক্ষাৎকার-মহাজোটের ভুলত্রুটি রয়েছে, শোধরানো সম্ভব by হাসানুল হক ইনু

সাক্ষাৎকার গ্রহণ : সুভাষ সাহা ও মাহফুজুর রহমান মানিক হাসানুল হক ইনু এই সময়ের আলোচিত রাজনীতিবিদদের একজন। তিনি বর্তমানে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের সভাপতি। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম নেতা। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে তার সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে।


বর্তমানে তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি। মাধ্যমিক পরীক্ষায় ইনু মেধা তালিকায় ১৮তম স্থান অর্জন করেছিলেন। তার কলেজ জীবন কেটেছে নটর ডেম কলেজে। এরপর ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে। তবে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তার পেশাগত জীবনের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ৬ মাস। ষাটের দশকে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের গোলরক্ষক হিসেবেও বেশ সুনাম অর্জন করেছিলেন হাসানুল হক ইনু

সমকাল : মহাজোট সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশের প্রথম সারির পত্রিকাগুলো পরিচালিত জনমত জরিপে দেখা গেছে, সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রতি মানুষের সমর্থন গত তিন বছরে ক্রমাগতভাবে কমেছে। এর কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?
হাসানুল হক ইনু : সরকারের শাসন-প্রশাসনে কিছু পীড়াদায়ক ব্যর্থতা আছে। মন্ত্রিপরিষদ এবং সরকারে কিছু সমন্বয়হীনতার ঘটনা ঘটেছে। তার প্রভাব জনজীবনে আছে। ক্ষেত্রবিশেষে জনগণ বিক্ষুব্ধও। যথাসময়ে রাস্তার সংস্কার না করতে পারা এবং শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ আছে। দ্রব্যমূল্য সরকার প্রথম দেড় বছরে একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখতে সক্ষম হলেও শেষের দেড় বছর নিত্যপণ্যের দ্রব্যমূল্য ওঠানামা করেছে। যদিও এর বহু কারণ আছে, কিন্তু সেই কারণ জনগণ শুনবে না। জনগণ অজুহাত শুনতে চায় না।
সরকার কিছু বোকামি অপ্রয়োজনীয় বৈরিতা তৈরি করেছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, তেল-গ্যাস আন্দোলন, মিশুক মুনীর এবং তারেক মাসুদ নিহত হওয়াজনিত পরিস্থিতিতে পদক্ষেপ নিতে গিয়ে কিছু অপ্রয়োজনীয় বৈরিতা সৃষ্টি করেছে। প্রশাসনের কতিপয় পীড়াদায়ক ব্যর্থতা এবং মন্ত্রীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার নেতিবাচক প্রভাব জনগণের ওপর পড়েছে। এতে জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়েছে। কিন্তু সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ, সরকারের প্রতি জনগণ আস্থা উঠিয়ে নিয়েছে_ এ রকম পরিস্থিতি হয়েছে বলে মনে হয় না।
তবে আমরা এখনও গণতন্ত্র সম্পর্কে একটা আস্থা তৈরি করতে পারিনি। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া এখনও তৈরি করে উঠতে পারিনি। এটা সরকারের একার ব্যর্থতা নয়, এটা নির্বাচিত সরকারগুলোর ধারাবাহিক ব্যর্থতা।
সমকাল :সরকারের সাফল্য কী কী?
হাসানুল হক ইনুু : সরকার তিন বছরে অনেক সাহসী, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ থেকে দেশকে বিচ্ছিন্ন করা। জঙ্গিবাদ-বোমাবাজদের দমন করা। তিন বছরে শহীদ মিনার ভেঙে পড়েনি, শাহজালাল মাজারের পুকুরের মাছ বিষে মরা যায়নি অথবা কোনো সাংস্কৃতিক মেলায় বোমাবাজি হয়নি। সুতরাং সেদিক থেকে সরকার যথেষ্ট সফল। গুরুত্বপূর্ণ অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে সরকার। একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা, বঙ্গবন্ধুর খুনি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষির উন্নতি, অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা, ডিজিটাল বাংলাদেশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে যুগান্তকারী কিছু বলিষ্ঠ পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে, যেগুলো সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। দশ হাজার ৫৮০টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর মধ্য দিয়ে গ্রামের গরিব মা-বোন এবং শিশুদের একটা বিরাট স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ উন্মুক্ত হয়েছে। দুই হাজার ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বিদ্যুতের দুরবস্থা থেকে বাংলাদেশকে একটু আলোতে নিয়ে এসেছে। তিন বছরে প্রায় সাড়ে তিন লাখ বাংলাদেশের নাগরিককে বিশ্বের শ্রমবাজারে রফতানি করতে সফল হয়েছে সরকার এবং রেমিট্যান্সের পরিধিও বেড়েছে। কৃষি খাতে ভর্তুকি নীতি, প্রণোদনা নীতি গ্রহণ করার ফলে কৃষি খাতের উৎপাদন বেড়েছে, ভালো ফসল হচ্ছে এবং চাল উৎপাদন ভালো। আর রফতানির ক্ষেত্রে বিশ্বমন্দার ভেতরেও বাংলাদেশের রফতানি তিন বছরে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো_ ইউনিয়ন কাউন্সিল, পৌরসভা, উপজেলা এবং করপোরেশনের হস্তক্ষেপমুক্ত নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে এবং এটা গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য বলে আমি মনে করি।
সমকাল :জরিপে দেখা যায়, বিরোধী দলের কর্মকাণ্ডেও মানুষ খুশি নয়।
হাসানুল হক ইনু : আমাদের বিরোধী দল কিছুদিন আগেও নির্বাচিত স্বৈরাচার ছিল এবং সে সময় তারা আন্দোলনের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। সুতরাং বিএনপি-জামায়াতের মতো বিরোধী দল, যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের, শেখ হাসিনা হত্যা প্রচেষ্টা, আন্তর্জাতিক অপরাধের সঙ্গে বাংলাদেশকে জড়িয়ে ফেলা, কিবরিয়া হত্যা, দশ ট্রাক অস্ত্র পাচার চেষ্টা, ক্ষমতায় থাকাকালে সীমাহীন লুটপাট এবং বাংলাদেশের সংবিধান- নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার অভিযোগ রয়েছে তাদের ওপর মানুষের আস্থা থাকে কী করে?
বিরোধী দলের দায়িত্ব সরকারের ব্যর্থতা, ভুলত্রুটি-বিচ্যুতি তুলে ধরা, চাপ প্রয়োগ করা, সংশোধন করতে বাধ্য করা এ জন্য সংসদকে কাজে লাগানো, রাজপথকে কাজে লাগানো। কিন্তু আমাদের বিরোধী দলকে দেখা যায়, রাস্তা সংস্কারের জন্য আন্দোলনে না নেমে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য হৈচৈ করছে। দেখবেন যখন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী তার বাড়ি রক্ষার জন্য মিছিল করছেন, হরতাল করছেন। শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটন যখন ঘটছে তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া তার পুত্রের লুটপাটের ঘটনা আড়াল করার জন্য মিছিল করছেন। আমি মহাজোটের শরিক হিসেবে যতখানি প্রতিবাদ করেছি, ততখানি প্রতিবাদও বিএনপি করেনি। এই মুহূর্তে বিরোধী দলের মূল এজেন্ডাটা হচ্ছে তার দুর্নীতিবাজ, সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবাদী নেতাকর্মীদের রক্ষা করা, সেই কারণে আমার মনে হয় জনগণ বিরোধী দলের কর্মকাণ্ডে আস্থা প্রকাশ করতে পারছে না।
সমকাল : এখন বিরোধী দল কেয়ারটেকার নিয়ে আন্দোলন করছে। আপনারা এর সংস্কারের কথা বলছেন।
হাসানুল হক ইনুু : তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাঠামোর অধীনে আমরা চারটি নির্বাচন করেছি। কিন্তু কাঠামোটা ত্রুটিপূর্ণ। পাঁচটি ত্রুটি আমরা চিহ্নিত করেছি। সেগুলো বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে। এর সংশোধন করা দরকার। যেহেতু আমরা স্বৈরতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের মাঝপথে আছি তাই অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। তবে তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন হলেই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে তা ঠিক নয়। অতীতে কেয়ারটেকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী ফলকে পরাজিত দল প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারই করুক আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই হোক, তাতে গণতন্ত্র শক্তিশালী করায় সাহায্য হবে না। এ জন্য ঐকমত্য জরুরি।
সমকাল : বিরোধী দল যদি তাদের অবস্থান থেকে না সরে এবং একটা সংঘাতময় অবস্থার সৃষ্টি হয়, তখন গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আপনার মনে হয়?
হাসানুল হক ইনুু : প্রধান বিরোধী দল যদি আলোচনায় না আসে তাহলে সেটা হবে গণতন্ত্রের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। প্রধান বিরোধী দলকে অবশ্যই আলোচনায় আসতে হবে। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় তারা প্রথমদিকে যাবে না বলেছিল। কিন্তু এখন অবস্থান পাল্টে তারা আলোচনায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার বিশ্বাস, তত্ত্বাবধায়ক প্রশ্নেও তারা শেষ পর্যন্ত আলোচনায় যাবেন। আমরা তাদের সংসদীয় কমিটিতে আলোচনায় ডেকেছিলাম কিন্তু তারা সেখানে যাননি। কারণ তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুটি তাড়াতাড়ি নিষ্পত্তি হোক এটা খালেদা জিয়া চাননি। তিনি চান এটা ঝুলিয়ে রাখতে, এটা নিয়ে মাঠ গরম করতে এবং আগামী দু'বছর তিনি এটা ঝুলিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন। যাতে এই মাঠ গরমের উত্তাপে তিনি নির্বাচন করতে পারেন।
সমকাল : পঞ্চদশ সংশোধনী...
হাসানুল হক ইনুু : পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু ধারার বিষয়ে আমার আপত্তি আছে।
সমকাল : আপনারা তো মহাজোটে আছেন। মহাজোটের স্টিয়ারিং কমিটি বা এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা আছে কি?
হাসানুল হক ইনুু : মহাজোটের কোনো স্টিয়ারিং কমিটি নেই। তবে মহাজোটের শীর্ষ নেতারা এক সময় নিয়মিত বসতেন। ইদানীংকালে সেটা অনিয়মিত হয়েছে। তবে আবার বসা শুরু হয়েছে।
সমকাল : বর্তমান সরকারের আমলে কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হবে এবং অপরাধীরা শাস্তি পাবে বলে আপনি মনে করেন?
হাসানুল হক ইনু : প্রথমে বুঝতে হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারটা একটা পুরনো ঘটনার বিচার। সরকার প্রকাশ্য আদালতে বিচার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বলিষ্ঠতা দেখিয়েছে। অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, আপিল করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আদালতে সাংবাদিকরাও বসতে পারছেন। আদালত নিয়মানুযায়ী চলে, এখানে তাড়াহুড়োর জায়গা নেই। তবে সম্প্রতি কয়েকটি চার্জশিট হয়ে যাওয়ার ফলে আমার বিশ্বাস, ২০১২ সালের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের বিচার কাজ সম্পন্ন করা হবে। এতে ২০১৩ সালের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তিও সম্পন্ন হয়ে যাবে এবং অপরাধীদের সাজা কার্যকর হয়ে যাবে।
সমকাল : সরকার বলছে দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীন।
হাসানুল হক ইনু : দুর্নীতি দমন কমিশন আইনগতভাবে এখন যে পর্যায়ে রয়েছে এটা যথেষ্ট নয়। দুর্নীতি দমন কমিশনকে একটি প্রহরী সংস্থা হিসেবে আইনগতভাবে শক্তিশালী এবং স্বাধীন করে দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে ভারতের সিবিআইর মতো কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা করা হোক, যে গোয়েন্দা সংস্থা স্বাধীনভাবে কাজ করবে এবং তারা মন্ত্রী হতে শুরু করে যে কোনো হোমরাচোমরাকে গ্রেফতার করতে পারবে। আর পুলিশ প্রশাসনে প্রসিকিউশন এবং ইনভেস্টিগেশন দু'ভাগ করে দেওয়া উচিত। তাহলে মানুষ ন্যায়বিচার পাবে।
সমকাল : টিপাইমুখ বাঁধ, তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যু ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন করে সন্দেহ এবং অবিশ্বাস জন্ম দিচ্ছে বলে কেউ কেউ মনে করেন।
হাসানুল হক ইনু : ভারত-বাংলাদেশ সস্পর্কে বিরাজিত সমস্যা সমাধানের প্রশ্নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, বিবৃতি বলিষ্ঠ, সাহসী, ইতিবাচক এবং দেশের স্বার্থ রক্ষাকারী। সমস্যাটা দেখা দিয়েছে তার মন্ত্রিসভা এবং উপদেষ্টাদের কিছু অসংলগ্ন কথাবার্তার মধ্য দিয়ে। যেভাবে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করতে হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেভাবেই ভূমিকা রেখেছেন। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে এখনও অবিশ্বাস আছে। এখনও সমস্যা আছে। এখনও কিছু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছে এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব আছে।
আমি মনে করি, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। এর একটা হচ্ছে নিরাপত্তাহীনতা, আরেকটা আস্থাহীনতা। দিলি্লকে প্রমাণ করতে হবে যে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশসহ সব রাষ্ট্র নিরাপদ। দক্ষিণ এশিয়ার জনগণ যাতে দিলি্লর ওপর আস্থা স্থাপন করতে পারে। দিলি্ল কথা দিয়ে কি রাখবে কিনা সে রকম একটা প্রশ্ন আছে। আস্থাহীনতা এবং নিরাপত্তাহীনতা দক্ষিণ এশিয়াকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এর সমাধানও আছে। ভারত একটা বিশাল রাষ্ট্র যার আণবিক দাঁত আছে, বিশাল সেনাবাহিনী আছে। এতবড় প্রতিবেশীর পাশে ছোট ছোট রাষ্ট্র নিরাপত্তাহীনতার মানসিক চাপে ভোগে। এটা দূর করার জন্য ইউরোপের মতো দক্ষিণ এশিয়ায় সার্কের পাশাপাশি যৌথ নিরাপত্তা কাঠামো তৈরি করা দরকার। যৌথ নিরাপত্তা কাঠামো থাকলেই সবার স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত এবং অহেতুক সামরিকায়নের পেছনে অর্থ খরচ করা বন্ধ হবে।
বাংলাদেশের মানুষ আস্থা পাবে পানি নিয়ে রাজনীতি না হলে। পানি নিয়ে সমস্যার সমাধান হলে। ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। তবে শুরুটা করা যায় গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার যৌথ পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা কাঠামো তৈরি করে। এই কাঠামোর সদস্য ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান সবাই হবে। বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে আস্থাহীনতা এবং নিরাপত্তাহীনতা থেকে উপমহাদেশকে মুক্ত করতে যুগান্তকারী নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
সমকাল : সরকারের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?
হাসানুল হক ইনুু : বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিরাপদ করতে হলে, বাংলাদেশকে চিরদিনের জন্য সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, জঙ্গিবাদ ও যুদ্ধাপরাধের ভয়াবহ অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে হবে। এ জন্য ২০১৪ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে মহাজোট বা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তির সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা উচিত। সে জন্য ২০১৪ সালের নির্বাচন হচ্ছে জাতির জন্য অগি্নপরীক্ষা। এ অগি্নপরীক্ষায় জনগণকে উত্তীর্ণ হতে হবে। আমি দেশের রাজনীতিকে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের ঝগড়া মনে করি না। খালেদা জিয়া ঘটনাচক্রে অপরাধী, জঙ্গিবাদী এবং যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তারপরও আমি খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানাব_ অপরাধী, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বন ছেড়ে দিয়ে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করুন। শেখ হাসিনাকে বলব, আপনার অর্জনগুলো ধরে রাখতে প্রশাসনের ব্যর্থতা কাটিয়ে তুলতে হবে। এ জন্য অযোগ্য, অদক্ষ কর্মকর্তা, মন্ত্রীদের কাঁধ থেকে নামিয়ে দিন। ভুলগুলো শোধরান এবং একলা চলো নীতি পরিহার করুন। জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টিকারী নিত্যপণ্যের বাজার আগামী দুই বছর একটা স্থিতিশীল পর্যায়ে রাখার ব্যবস্থা করুন। প্রয়োজনে ভর্তুকি দেবেন। তাহলেই আগামী নির্বাচনের অগি্নপরীক্ষায় পার হওয়া সম্ভব।
সমকাল : জনগণের প্রতি কোনো আহ্বান ...
হাসানুল হক ইনু : জনগণের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, মহাজোটের বিকল্প খালেদা জিয়া কিংবা জামায়াতে ইসলামী নয়। সুতরাং মহাজোটের বিকল্প হিসেবে খালেদা, বিএনপি-জামায়াত যুদ্ধাপরাধী চক্রের সঙ্গে আপনারা যাবেন না। বাংলাদেশকে বাঁচান। দরকার হলে মহাজোটের ভুলত্রুটি সংশোধনে সোচ্চার হোন। ভুলত্রুটি শোধরানো সম্ভব।

No comments

Powered by Blogger.