২০২০ সালে পোশাক রপ্তানি তিন গুণ হবে: ম্যাককিনসে

ন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাককিনসে এক গবেষণায় বলেছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি ২০১৫ সালে বর্তমান সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ ও ২০২০ সালে তিন গুণ হবে। প্রতিবেদনের এই ভবিষ্যদ্বাণী অর্জনযোগ্য মন্তব্য করে দেশের ব্যবসায়ী ও গবেষকেরা বলেছেন, লক্ষ্য অর্জনে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো, বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা, শ্রমিকের দক্ষতা বাড়ানো ও অবকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন। আর প্রয়োজন সরকারের পক্ষ থেকে নীতি-সহায়তা।


বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিইআই) আয়োজিত এক সেমিনারে এ অভিমত ওঠে আসে। রাজধানীর গুলশানে বিইআই মিলনায়তনে সোমবার এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে ম্যানকিনসের প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন ইউএস-বাংলাদেশ অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক শামারুখ মহিউদ্দিন। প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন এখন আর ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে পারছে না। ক্রেতারা এখন উত্তর-পূর্ব চীন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে মনোযোগী হয়েছে। বাংলাদেশ রয়েছে তাদের অগ্রাধিকার তালিকায়।
গবেষণায় অংশ নেওয়া ক্রেতাদের ৮৯ শতাংশের মতে, আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশই হবে তৈরি পোশাক কেনার জন্য এক নম্বর দেশ। ৩৯ শতাংশ ক্রেতা বলেছেন, গত তিন বছরে তাঁরা বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনার পরিমাণ ৩০ শতাংশ বাড়িয়েছেন। কারণ বাংলাদেশের পণ্যের আকর্ষণীয় মূল্য।
আলোচনা: সেমিনারে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান বাজার ধরে রাখা এবং নতুন বাজার সৃষ্টির জন্য লিড-টাইম (পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে জাহাজীকরণ পর্যন্ত সময়) কমিয়ে ফেলতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা কি এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে পণ্যাগার স্থাপন করব নাকি এক স্তরের জিএসপি চালু করব সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখন এসেছে।’
বাণিজ্যসচিব গোলাম হোসেন তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের উদ্দেশে বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে এ বিষয়ে খুব বেশি কিছু আশা করবেন না। অতীতেও তেমন কিছু পাননি। এখনো পাবেন না। আমরা কেবল সহায়কের ভূমিকা রাখতে পারি।’
বাণিজ্যসচিব বলেন, ‘ম্যানকিনসের প্রতিবেদনে শ্রমিকদের দক্ষতা ও বিনিয়োগ নিয়ে কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ জন্য কোনো প্রয়োজনীয় মূল্যায়নের কথা বলা হয়নি। ২০৩০ সালে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি এখনকার চেয়ে তিন গুণ হবে। কিন্তু সে জন্য কী পরিমাণ বিনিয়োগ লাগবে, সেটা কীভাবে হতে পারে, সে বিষয়ে প্রতিবেদনে কিছু বলা হয়নি।’
কিছু নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যেই তৈরি পোশাক কারখানাগুলো পুঞ্জীভূত হয়ে থাকার সমালোচনা করে গোলাম হোসেন বলেন, পোশাক খাতের অন্তত ১০টি ক্লাস্টার হওয়া প্রয়োজন।
তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সমিতি বিজিএমইএর সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘বর্তমান সময়ের আমলাতন্ত্র মানসম্মত নয়। অর্থনৈতিক এজেন্ডা তাদের কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। এটা আমাদের জন্য বড় সমস্যা।’
বিজিএমইএর সভাপতি বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাত নিয়ে আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। চীন যেসব বাজার হারাচ্ছে, সেসব আমরা পাচ্ছি না। বাজার ও বিক্রির ধরনের কারণে সেগুলোর বেশির ভাগই চলে যাচ্ছে উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে।’
জার্মান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকেরা এ দেশের যেসব ব্যাংক থেকে ঋণপত্র খোলেন, তার অনেকগুলোই ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলো গ্রহণ করে না। ম্যাককিনসের এ প্রতিবেদনের ফলে এসব সমস্যা কমবে বলে আশা করা যায়।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন, তৈরি পোশাক খাতের লক্ষ্য পূরণের জন্য বিশাল বিনিয়োগ, দক্ষ পর্যাপ্ত শ্রমিক এবং ব্যবস্থাপনা ভালো করতে হবে। এ জন্য দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুত থাকতে হবে। পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্যও এ দেশের দরজা খোলা রাখতে হবে।
সভাপতির ভাষণে বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট ফারুক সোবহান বলেন, তৈরি পোশাক খাতের জন্য দক্ষ শ্রমিক ও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.