নিলামে ছয় দলের বিকিকিনি

শোকের চাদরে মোড়া থাকল পুরো আবহ। অনুষ্ঠানের বিনোদনমূলক পর্ব ছেঁটে ফেলা হলো। হলো এক মিনিট নীরবতা পালন। অনেকে বাহুতে লাগালেন কালো ব্যাজ। সবকিছু বলছিল, জীবনের গতি থেমে না থাকলেও একটা বড় ছন্দপতন ঘটে গেছে। বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুর আহমেদের আকস্মিক মৃত্যু কাল বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি নিলাম অনুষ্ঠানের আলোটা কমিয়ে দিয়েছিল অনেক।


কে কত টাকায় কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনল, সেসব বাদ দিয়ে সবার মুখে মুখে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অকৃত্রিম এক বন্ধুকে হারানোর আক্ষেপ। কে একজন স্বগতোক্তি করলেন, ‘বেঁচে থাকলে হয়তো আজ এখানেও থাকতেন মনজু ভাই...!’ মনজুর আহমেদ ছিলেন না। তবে জীবনের পথচলা তাতে থামল না। শোকাবহ পরিবেশেই রাজধানীর এক হোটেলে হয়ে গেল বিপিএলের ছয় ফ্র্যাঞ্চাইজির নিলাম। ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়েছে চট্টগ্রাম। এস কিউ স্পোর্টস ১.২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নিয়েছে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা।
এস কিউ স্পোর্টস ছাড়াও চট্টগ্রামের ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য দরপত্র ফেলেছিল ডিজিটাল অটো কেয়ার ও পার্ল ট্রেডিং। ডিজিটাল অটো কেয়ার দাম প্রস্তাব করেছিল ১ মিলিয়ন ডলার ও পার্ল ট্রেডিং ১.০৫ মিলিয়ন ডলার। চট্টগ্রামের মালিকানা তাই শেষ পর্যন্ত এস কিউ স্পোর্টসের অধিকারেই গেছে। তবে সর্বোচ্চ দামে দল কিনেও আনন্দটা সেভাবে প্রকাশ করেননি প্রতিষ্ঠানের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা আলী আহসান মাহবুব। বিসিবির প্রয়াত প্রধান নির্বাহী এস কিউ স্পোর্টসের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ঠজন। আনন্দের চেয়ে শোকটাই কাল বেশি গ্রাস করল তাঁদের।
এস কিউ স্পোর্টস সবচেয়ে বেশি দামে দল কিনতে পারে, তবে তুলনামূলক কম দামে ভালো দল কিনেছে ওরিয়ন গ্রুপ ও ডিজিটাল অটো কেয়ার। ১.১০ মিলিয়ন ডলারে খুলনা ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা কিনেছে ওরিয়ন গ্রুপ। খুলনার জন্য সাউদার্ন ইন্টারন্যাশনাল দর ধরেছিল ১.০৩ মিলিয়ন ডলার ও পার্ল ট্রেডিং ১.০২ মিলিয়ন ডলার। খুলনায় সুন্দরবন আছে, আছেন সাকিব আল হাসান। দলটাকেও সুন্দরবনের মতো সুন্দর আর সাকিবের মতো সফল করে তোলার আশা ওরিয়ন গ্রুপের মহা-ব্যবস্থাপক তানভীর কামরুল ইসলামের, ‘সাকিব ব্যাটিং-বোলিং দুটোতেই সেরা। এটা আমাদের জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণা হবে।’
পার্ল ট্রেডিং রাজশাহীর জন্য দর প্রস্তাব করেছিল ১.০২ মিলিয়ন ডলার। ইউরো ইমপ্যাক্স দিয়েছিল ১.০৫ ডলার। সর্বোচ্চ ১.০৭ মিলিয়ন ডলার দাম ধরে ফ্র্যাঞ্চাইজি কেনার লড়াইয়ে তাদের হারিয়ে দিয়েছে ডিজিটাল অটো কেয়ার। বিপিএলে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির বাড়তি সুবিধা, তাদের সঙ্গে আছেন জাতীয় দলের সাবেক তিন ক্রিকেটার। আতহার আলী প্রধান উপদেষ্টা ও সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমেদ ম্যানেজার। সম্ভাব্য কোচ খালেদ মাসুদ। এ ছাড়া জাতীয় দলের সাবেক ফিল্ডিং কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকেও দেখা যেতে পারে রাজশাহীর তাঁবুতে। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানের এজিএম মুশফিকুর রহমান আশাবাদী, বিপিএলে খুব ভালো একটা দল দাঁড় করাতে পারবে তাঁদের ফ্র্যাঞ্চাইজি।
টুর্নামেন্টের বেশির ভাগ ম্যাচ হবে ঢাকায়। ইউরোপা গ্রুপ সে কারণে ঢাকার প্রতিই বেশি মনোযোগী ছিল। ডিজিটাল অটো কেয়ার ও ইউরো ইমপ্যাক্স ১ মিলিয়ন ডলার করে দাম ধরলেও ১.০৫ মিলিয়নে ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনেছে ইউরোপা। পারিবারিক এই প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারেরা খেলাধুলার সঙ্গে আগে থেকেই সম্পৃক্ত। ইউরোপার কর্মকর্তা ও বাস্কেটবল ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি শিহাব এইচ চৌধুরী বলেছেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমরা খেলাধুলায় আছি। সেটার ধারাবাহিকতাতেই বিপিএলে আসা। ঢাকার দর্শক-সমর্থক আমাদের বড় শক্তি।’ প্রধান উপদেষ্টা হয়ে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির সঙ্গে আছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও নির্বাচক হাবিবুল বাশার।
১.০৬ মিলিয়ন ডলারে সিলেটের ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনেছে ওয়ালটন। এই ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য ইউরোপার ভগ্নি সংগঠন শিহাব ট্রেডিং দর প্রস্তাব করেছিল ১.০৩ মিলিয়ন ডলার ও সাউদার্ন ইন্টারন্যাশনাল ১.০২ মিলিয়ন ডলার। সিলেটের ফ্র্যাঞ্চাইজি পেয়ে দারুণ খুশি ওয়ালটনের পরিচালক মিজানুর রহমান জানালেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ বিনিয়োগে হাইপ্রোফাইল দলই গঠন করবেন তাঁরা।
সবচেয়ে কম দামে এবং কম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিক্রি হয়েছে বরিশালের ফ্র্যাঞ্চাইজি। নিলামের প্রারম্ভিক মূল্য ছিল ১ মিলিয়ন ডলার। আর আলিফ গ্রুপ বরিশালকে কিনেছে ১.০১ মিলিয়ন ডলারে। এই ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠান ছিল আর মাত্র একটিই—সাউদার্ন ইন্টারন্যাশনাল। কিন্তু প্রারম্ভিক মূল্যের চেয়ে কম দাম (.৯০ মিলিয়ন ডলার) প্রস্তাব করায় বাতিল হয়ে যায় তাদের দরপত্র। দরপত্রে অংশ নেওয়া মোট নয়টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সাউদার্ন ইন্টারন্যাশনালসহ তিন প্রতিষ্ঠান কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনতে পারেনি। অন্য দুটি প্রতিষ্ঠান হলো পার্ল ট্রেডিং ও ইউরো ইমপ্যাক্স।
বরিশালের প্রতি বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই ছিল অনাগ্রহী। আলিফ গ্রুপ তার পরও খুশি এই ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক হতে পেরে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান আজিজুল ইসলাম ব্যাখ্যা করলেন কারণটা, ‘বরিশাল দলের মাধ্যমে আমরা শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের নামটা আরও উঁচুতে তুলে ধরার চেষ্টা করব।’
বিপিএল আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বের কাছে বিজ্ঞাপিত করা। সেদিক দিয়ে আয়োজকদের চিন্তাভাবনার সঙ্গে মিলে যাচ্ছে আলিফ গ্রুপের উদ্দেশ্য।

No comments

Powered by Blogger.