রাঙামাটিতে আ'লীগ নেতাকে অপহরণ, প্রতিবাদে ভাংচুর

রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও কৃষক লীগের জেলা সভাপতি অনিল চন্দ্র তংচংগ্যা (৫৭) অপহৃত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে কাপ্তাই উপজেলা থেকে রাঙামাটি শহরে আসার পথে ওয়াগ্গাছড়া ইউনিয়নের দেবতাছড়ি বেইলি ব্রিজ এলাকা থেকে একদল সন্ত্রাসী তাকে অপহরণ করে বলে জানা গেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা রাঙামাটি শহরে প্রতিবাদ মিছিল করেছেন।


মিছিল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ভাংচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে পরিষদ কার্যালয়ে হামলার প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা এক ঘণ্টা রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক অবরোধ করে রাখেন।
জানা গেছে, সকাল ৮টার দিকে অনিল চন্দ্র তংচংগ্যা কাপ্তাইয়ের ওয়াগ্গা থেকে একটি সিএনজিতে রাঙামাটি শহরে আসার সময় কাপ্তাই-ঘাগড়া সড়কের দেবতাছড়ির বেইলি ব্রিজে পেঁৗছলে একদল সন্ত্রাসী তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তিনি জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় যোগদান করতে আসছিলেন। ঘটনার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সম্ভাব্য স্থানে অভিযান শুরু করেছেন।
এদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এই অপহরণ ঘটনার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করা হয়েছে। প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল থেকে সকাল সোয়া ১১টার দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ভাংচুর করা হয়। এতে আঞ্চলিক পরিষদের বেশ কয়েকটি কক্ষের জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। সন্তু লারমা এ সময় পরিষদ কার্যালয়ে ছিলেন। পরে পুলিশ এবং সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে আওয়ামী লীগ জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরের বাইরে সমাবেশ করে। সমাবেশে নেতারা মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে অনিল তংচংগ্যাকে মুক্তি দেওয়ার জন্য আলটিমেটাম দেন। পরে বিকেল ৩টায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান, চিংকিউ রোয়াজা, মোঃ রুহল আমীন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাজি মোঃ কামাল উদ্দীন প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পাহাড়ে যারা শান্তি ও আইনশৃঙ্খলা বিনষ্ট করে পার্বত্য শন্তিচুক্তি বাস্তবায়নে বিঘ্ন ঘটাতে চায় তাদের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা ক্যাডাররা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, এ ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা কেউই জড়িত নন।
জনসংহতি সমিতির প্রতিবাদ
অন্যদিকে আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে ভাংচুরের ঘটনার প্রতিবাদে রাঙামাটি শহরে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন জনসংহতি সমিতি ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নেতাকর্মীরা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি উষাতন তালুকদার পরিষদ কার্যালয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, অনিল চন্দ্র তংচংগ্যাকে কে বা কারা অপহরণ করেছে তা প্রমাণের আগে এ হামলা অগণতান্ত্রিক আচরণের বহিঃপ্রকাশ। আঞ্চলিক পরিষদের সমাজ কল্যাণ কর্মকর্তা বরুণ চাকমা জানান, ইট-পাটকেল নিক্ষেপের সময় সন্তু লারমা অফিস কক্ষে ছিলেন।
রাঙামাটির পুলিশ সুপার মাসুদ উল হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, এ অপহরণের ঘটনাকে নিয়ে রাঙামাটি শহরে যে উদ্ভূত পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল তা পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। অপহৃতকে উদ্ধারের জন্য পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.