চট্টগ্রামে বেগম জিয়ার ভাষণ-ইতিবাচক রাজনীতির পূর্বাভাস

ট্টগ্রামের জনসভার মধ্য দিয়ে শেষ হলো বিএনপির রোডমার্চ কর্মসূচি। কুমিল্লা ও ফেনীতে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তেমন কোনো অঘটন ঘটেনি। চট্টগ্রাম থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। রাজশাহী ও খুলনার মতো চট্টগ্রাম অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচিও ছিল শান্তিপূর্ণ। চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে গত সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে বক্তব্য রেখেছেন, তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

তাঁর বক্তব্যে ইতিবাচক রাজনীতির ইঙ্গিত রয়েছে। এমনিতে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়। কিন্তু চট্টগ্রামের জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা অত্যন্ত গঠনমূলক। মহাজোট সরকারের গত তিন বছরের শাসনের কড়া সমালোচনাই করেছেন তিনি। তবে সেই সমালোচনায় উসকানি ছিল না, ছিল যুক্তি। আগামী দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে গিয়ে তিনি সরকারের ভর্তুকি নীতির সমালোচনা করেছেন। সরকারও ভর্তুকি তুলে দেওয়ার পক্ষে। ভর্তুকি যে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে, সেটা সরকারও স্বীকার করে নিয়েছে। গত তিন বছরে নির্বাচনী ওয়াদা যে সবটুকু পূরণ করা সম্ভব হয়নি, সেটা প্রধানমন্ত্রী নিজেও স্বীকার করেছেন। বাংলাদেশের সামনে এখন দুটি বড় আন্তর্জাতিক সমস্যা রয়েছে_একটি হচ্ছে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি, অন্যটি টিপাইমুখ বাঁধ। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সই হয়নি। অন্যদিকে টিপাইমুখ বাঁধের ব্যাপারে বাংলাদেশ আপত্তি করেছে। বেগম জিয়া অধিকারের ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, 'ভারতের সঙ্গে আমাদের কোনো বিভেদ নেই।' আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বর্তমান সময়ের গুম-খুনের কথা উল্লেখ করেছেন। বিএনপির এই সমাবেশ থেকে কোনো হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। এটাও দেশের রাজনীতির জন্য ইতিবাচক একটি দিক।
চট্টগ্রামের জনসভার সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে অতীতের ভুল সংশোধনের বিষয়টি। বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, '...আমরা মানুষ, ফেরেশতা নই। আমাদের সময়ে ভুলত্রুটি হয়ে থাকতে পারে। কথা দিচ্ছি, সেসব ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আগামীতে কাজ করব, আর ভুল হবে না।' আমাদের দেশের রাজনীতির ইতিহাস বলে, অতীত থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। নিজেদের ভুল স্বীকারের সংস্কৃতিও আমাদের দেশের রাজনীতিতে বিরল। সেদিক দিয়েও তাঁর বক্তৃতাটি আমাদের দেশের আগামী দিনের রাজনীতির জন্য ইতিবাচক। তিনি আগামী ফেব্রুয়ারিতে সারা দেশে গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশের কথা উল্লেখ করেছেন। একই সঙ্গে ১২ মার্চ ঢাকায় শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে আবারও নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
বর্তমান সরকার সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করেছে। বিএনপি চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পুনর্বহাল। এই দাবিতেই আন্দোলন বিএনপির। সেই আন্দোলনের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। চট্টগ্রামের জনসভা থেকে খালেদা জিয়া কর্মসূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে সেই গঠনমূলক এবং ইতিবাচক রাজনীতিরই ইঙ্গিত দিলেন।

No comments

Powered by Blogger.