বিমা খাতের জন্য পাঁচ নির্দেশনা জারি

বিমা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। একই সঙ্গে সংস্থাটি এ খাতে দক্ষ ও মেধাবী মানবসম্পদ তৈরির প্রতিও তাগিদ দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সময় বেঁধে দিয়ে আইডিআরএ জীবন বীমা করপোরেশন, সাধারণ বীমা করপোরেশন, ৪৩টি সাধারণ বিমা ও ১৮টি জীবন বিমা কোম্পানির জন্য বাধ্যতামূলক পাঁচটি বিষয় পরিপালন করতে বলা হয়েছে।


এগুলো হচ্ছে: মানবসম্পদ নীতিমালা প্রণয়ন, প্রতিনিধি স্তর সীমিত রাখা, জীবন বিমায় অ্যাকচুয়ারিয়াল বিভাগ থাকা, প্রিমিয়ামের সঙ্গে অন্য খরচ সমন্বয় না করা এবং বেতন, কমিশন ইত্যাদি ব্যাংক হিসাবে দেয় চেকের মাধ্যমে প্রদান করা। এর মধ্যে চারটি বিষয় অবশ্য জীবন বিমা খাতের সঙ্গে সম্পর্কিত।
আইডিআরএ গত বুধবার এক প্রজ্ঞাপন জারি করে ‘বিমা খাতের যথাযথ উন্নয়ন নিশ্চিত করার স্বার্থে’ এসব নির্দেশনা দেয়।
এতে করপোরেশন ও কোম্পানি—উভয়ের জন্যই চাকরি বিধিমালা-সম্পর্কিত মানবসম্পদ নীতিমালা থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ জন্য সময় দেওয়া হয়েছে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে তাদের মানবসম্পদ নীতিমালা আইডিআরএর কাছে দাখিল করতে হবে।
বেসরকারি জীবন বিমা কোম্পানিগুলোকে পুরো ইউনিটের প্রতিনিধির স্তর দুইয়ের বেশি না রাখার কথা বলা হয়েছে। এটি কার্যকর হবে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। জানা গেছে, বিমা কোম্পানিগুলোতে বর্তমানে প্রতিনিধিদের পাঁচ থেকে ১০টি করে স্তর রয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, জীবন বিমা কোম্পানিগুলোতে এখন থেকে অ্যাকচুয়ারিয়াল বিভাগ থাকতে হবে। এ বিভাগের দায়িত্ব দিতে হবে অ্যাকচুয়ারিয়াল কাজে ধারণাসম্পন্ন ছাত্রছাত্রীদের। তাঁদের অন্তত অ্যাকচুয়ারিয়াল বিজ্ঞানের একটি অংশ (পার্ট) সম্পন্ন করা থাকতে হবে।
তবে ছাত্রছাত্রীদের অধ্যয়নের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তাঁদের পরীক্ষা পাসের অগ্রগতির প্রতিবেদন ছয় মাস অন্তর আইডিআরএর কাছে পাঠাতে হবে। এ বিষয়টি কার্যকর করতে হবে আগামী ৩০ মার্চের মধ্যে।
বিমা প্রিমিয়ামের সঙ্গে কোনো ধরনের খরচ, প্রাপ্য, দাবি, কমিশন ইত্যাদি সমন্বয় করা যাবে না। এটি কার্যকর করতে হবে আগামী ১ এপ্রিল থেকে।
বেতন ও ভাতা, কমিশন, রিলিজ ও অন্যান্য প্রণোদনা কেবল ব্যাংকের হিসাবে দেয় (অ্যাকাউন্ট পেয়ি) চেকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি বা প্রতিনিধির নিয়োগ করা ব্যক্তিকে দেওয়া যাবে। বর্তমানে নগদ টাকায় দেওয়া হয় বলে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা চলছে বলে জানা গেছে। এটি কার্যকর করতে হবে আগামী ১ জুন থেকে।
গত ২২ ডিসেম্বর বিমা কোম্পানির মুখ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে আইডিআরএ অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতেই এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
যোগাযোগ করলে আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বিমা অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ খাতের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। তবে খাতটি এখনো ততটা সুশৃঙ্খল নয়। গোটা বিমা খাতে স্বচ্ছতা আনার স্বার্থেই প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছে।
একটি বেসরকারি জীবন বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রথম আলোকে বলেন, অ্যাকচুয়ারিয়াল বিভাগ বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে আরও সময় দেওয়ার দরকার ছিল। জন্মগত বেঁটেকে টেনে লম্বা করা যায় না মন্তব্য করে তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘শুরু থেকেই যেখানে বিশৃঙ্খলা চলছে, অল্প দিনে কীভাবে এর সমাধান সম্ভব?’
এদিকে আইডিআরএর নির্দেশনাকে স্বাগত জানিয়েও কিছু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছেন বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন।
প্রথম আলোকে বিআইএর সভাপতি বলেন, ‘অ্যাকাউন্ট পেয়ি চেকের মাধ্যমে বিমা প্রতিনিধিদের প্রাপ্য পরিশোধের বিষয়টি ঠিকই আছে। আর, কোম্পানিতে প্রতিনিধিদের স্তরও বর্তমানে অনেক বেশি। তবে হঠাৎ করে দুইয়ে নামিয়ে আনার কথা বলাটাও খুব সংগত নয়। এ জন্য তাদের যথেষ্ট সময় দেওয়া দরকার।’
প্রিমিয়ামের সঙ্গে খরচ বা কমিশন সমন্বয়ের বিষয়টিও তাঁর কাছে বোধগম্য নয় বলে জানান শেখ কবির হোসেন।

No comments

Powered by Blogger.