প্রতিক্রিয়া-এটি দেশি-বিদেশি চক্রের চক্রান্ত —হারুন-অর-রশিদ

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশিদ বলেছেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা নেওয়ার জন্যই সেনা অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হয়েছে। এ ধরনের চেষ্টা আগেও হয়েছে। এটা দেশি-বিদেশি চক্রের চক্রান্ত। সাম্প্রতিক সেনা অভ্যুত্থান-চেষ্টার বিষয়ে সেনাসদরের সংবাদ সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় হারুন-অর-রশিদ এ কথা বলেন। তিনি বর্তমানে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক।


২৪ ডিসেম্বর ২০০০ থেকে ১৬ জুন ২০০২ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।হারুন-অর-রশিদ বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেনাবাহিনীতে আর কোনো অভ্যুত্থান
হয়েছে বলে জানা নেই। তবে বিডিআরের ঘটনাকেও সাম্প্রতিক অভ্যুত্থান-চেষ্টার সঙ্গে মিলিয়ে দেখা দরকার। কেননা, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তা সরকারের বিরুদ্ধে যায়। এতে অশুভ শক্তিই লাভবান হয়।
হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘পুরো প্রক্রিয়ার লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করা। এর আগে কয়েকবার এমন ঘটনা সফল হয়েছিল। এ কারণে দেশের গণতান্ত্রিক-প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তও হয়েছে। তবে এবার সেনাবাহিনী সেই চেষ্টা নস্যাৎ করে দিতে পেরেছে। এ জন্য সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই। এ ঘটনা সেনাবাহিনীর পেশাদারি ও দায়িত্বশীল আচরণের প্রকাশ।’
সেনা অভ্যুত্থান-চেষ্টার কারণ সম্পর্কে সাবেক এই সেনাপ্রধান বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে বহুপ্রতীক্ষিত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ শুরু করে। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এ বিচারকাজ এখন পূর্ণতা পেয়েছে। জোরেশোরেই পুরো কার্যক্রম চলছে। যুদ্ধাপরাধীরা বুঝতে পেরেছে, তাদের বিচার হবেই। দোষী প্রমাণ হলে শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ কারণে তারা ভিত হয়ে পড়েছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে তারা গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতের চেষ্টা চালিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীরা মনে করছে, এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে না পারলে তারা রক্ষা পাবে না। এ জন্য তারা সাবেক ও বর্তমান কিছু ধর্মান্ধ সেনা কর্মকর্তাকে দিয়ে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালিয়েছে। তিনি বলেন, এই ধর্মান্ধরা হলো তারা, যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছে, ব্যবসা করছে এবং ধর্মের অপব্যবহার করছে। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। এদের গতিবিধির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। এদের সঙ্গে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে যুক্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে। মূলত এরা সবাই একই মতাদর্শের।
সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, এ পক্ষটি গণতান্ত্রিক শক্তিকে ভয় পায়। যখনই গণতান্ত্রিক পন্থা আসে, তাকে নস্যাৎ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এবারের অভ্যুত্থান-চেষ্টা সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৪ থেকে ১৬ জনের এ চেষ্টা পুরো সেনাবাহিনীর খুবই ক্ষুদ্র অংশ। শুরুতেই বিষয়টি চিহ্নিত করায় অঘটন ঘটেনি। সেনাবাহিনীকে এখন থেকে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অভ্যুত্থান-চেষ্টা প্রকাশ করা প্রসঙ্গে হারুন-অর-রশিদ বলেন, এটা ভালো হয়েছে। তা না হলে নানা ধরনের কথা ছড়াত। অনেকে অনেক কিছু আন্দাজ করে নিত, যা মোটেই ভালো হতো না। সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি হতে পারত।
সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান বন্ধ করতে হলে প্রথমত, দেশের সাধারণ মানুষ, সরকার ও সেনাসদস্যদের অপশক্তির বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনতে হবে। সেনাসদস্যদের গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করতে হবে, সে ধরনের পাঠ্যসূচি থাকতে হবে। গণতন্ত্রমনা হতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তৃতীয়ত, সেনাবাহিনীতে নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাদের নিয়োগ হবে, তাদের অতীত ইতিহাস খুঁজে দেখতে হবে। দেখতে হবে, তারা এমন কোনো সংগঠন করছে কি না, যা দেশের গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়।

No comments

Powered by Blogger.