বিজয় উৎসব-বাতাসে বাতাসে আজ মুক্তির আনন্দ

রাধীনতার শৃঙ্খল-মুক্তির আনন্দের পাশাপাশি স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে জাতি উদযাপন করছে বিজয়ের ৪০তম বার্ষিকী। বিজয়ের উল্লাসে মেতে উঠবে জাতি। বাতাসে বাতাসে আজ মুক্তির আনন্দ। নানা আয়োজনে উল্লাস প্রকাশের পাশাপাশি জাতি ধিক্কার জানাবে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি। নগরীর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার মধ্য দিয়ে আজ বিজয়ের ৪০ বছর উদযাপন করছে। মঞ্চে মঞ্চে উচ্চারিত হবে বিজয়ের গান। বিজয় দিবসের প্রাক্কালে


গতকাল বৃহস্পতিবার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের বিজয় উৎসবের তৃতীয় দিনে ছয়টি মঞ্চে শামিল হয় সাংস্কৃতিক কর্মী, মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে
শহীদ মিনারে জড়ো হয় সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে। তাদের হাতে ছিল পতাকা। শহীদ মিনারে এদিন দলীয়সঙ্গীত পরিবেশন করে উদীচী, আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী ও বহ্নিশিখা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন মলয় কুমার গাঙ্গুলী, শিবু রায়, রূপু খান, সালমা চৌধুরী, মাহবুব রিয়াজ, শেখ আওয়াল হক, শামীম আল মামুন, আবিদা রহমান সেতু, সফিউল আলম রাজা ও মহাদেব ঘোষ। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করেন চারুকণ্ঠ ও সংবৃতা। একক আবৃত্তি করেন ফয়জুল্লাহ সাঈদ, আরিফ হায়দার ও আলোক বসু। দৃষ্টিপাত নাট্যসংসদ ও মৈত্রী থিয়েটার মঞ্চস্থ করে পথনাটক। দেখানো হয় মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র 'জীবন থেকে নেয়া'। ভাষাসৈনিক মুক্তিযোদ্ধা শিল্পী ইমদাদ হোসেন মঞ্চে (রবীন্দ্রসরোবর) দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ঋষিজ, ক্রান্তি, পঞ্চভাস্বর ও রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন রূপু খান, নিলুফার জাহান চিনু, সমর বড়ূয়া, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি, প্রিয়াংকা গোপ, সানজিদা মঞ্জুরুল হ্যাপি, এরফান হোসেন ও মহুয়া মঞ্জরী সুনন্দী। একক আবৃত্তি-লায়লা আফরোজ, মাসুদুজ্জামান, মনিরুজ্জামান ও মাসুদ আহমেদ। আবৃত্তি সংগঠন আবৃত্তি একাডেমী, ঢাকা স্বরকল্পন, স্বরচিত্র ও উৎসব। নৃত্য পরিবেশন করে নটরাজ। পথনাটক মঞ্চস্থ করে উদীচী ও নাট্যদীপ।
বাংলা একাডেমী : একাডেমীর বিজয় উৎসবের অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার রবীন্দ্রচত্বরে ছিল আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মীয় জঙ্গিবাদ এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার' শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেলিম। আলোচক ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) হারুন অর-রশিদ বীরপ্রতীক, আবেদ খান, ড. মুহাম্মদ সামাদ, অধ্যাপক ড. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক এএফ সালাহউদ্দীন আহমদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করার জন্য পূর্বনির্ধারিত বাংলা একাডেমীর সভাপতি প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে আসন শূন্য রাখা হয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন কল্যাণী ঘোষ, নমিতা ঘোষ, ফকির আলমগীর, শেখ জমিরউদ্দিন, শ্রেয়সী রায়, আমজাদ দেওয়ান, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস প্রমুখ।
শিল্পকলা একাডেমী : বিজয়ের অনুষ্ঠানমালার পঞ্চম দিনে একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা, জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে ছিল গান, নৃত্য, শিশুতোষ পরিবেশনা, প্রতিবন্ধী শিশুদের সঙ্গীত পরিবেশনা, একক আবৃত্তি, বৃন্দ আবৃত্তি, লোকসঙ্গীত ও জাদু প্রদর্শন। পরীক্ষণ থিয়েটার হলে পালাকার মঞ্চস্থ করে 'রাইফেল'। স্টুডিও থিয়েটার হলে শিল্পকলা একাডেমী মঞ্চস্থ করে 'মুক্তি মুক্তি'। একাডেমীর উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে থিয়েটার (নাটক সরণি) মঞ্চস্থ করে পথনাটক 'আমরা সবাই চোর'। দেখানো হয় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র 'রক্তাক্ত বাংলা'। জাতীয় চিত্রশালা গ্যালারিতে চলছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর : বিজয় উৎসবের ষষ্ঠ দিনে বৃহস্পতিবার জাদুঘর প্রাঙ্গণে ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যপাঠ ও চরমপত্র পাঠ। চরমপত্র পাঠ করেন শহীদুল ইসলাম নাজু, দেবব্রত সরকার ডিউক ও তামান্না সারোয়ার নীপা। সাংস্কৃতিক পর্বে অংশ নেয় যশোরের বুরুজাবাগান মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও রংপুরের পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। চন্দ্রাবতীয় কথন ও গান পরিবেশন করে কিশোরগঞ্জ সংস্থা। মিরপুরের জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠের অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিনে সাংস্কৃতিক পর্বে অংশ নেয় কথাসুর সাংস্কৃতিক সংগঠন, ঝিনুক শিশু-কিশোর সংগঠন, বধ্যভূমির সন্তানদল, চক্রবাক সঙ্গীত একাডেমী, সঙ্গীতাঙ্গন কল্যাণপুর, উচ্চারণ-মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং মিরপুর সাংস্কৃতিক ঐক্য ফোরাম।
শিশু একাডেমী :বিজয় দিবস উপলক্ষে শিশু একাডেমী গতকাল বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। সকালে ছিল শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, দেশাত্মবোধক সঙ্গীত প্রতিযোগিতা। বিকেলে একাডেমীর মূল মঞ্চে ছিল আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল-ইসলাম।
রবি-চ্যানেল আই বিজয়মেলা : চ্যানেল আই তাদের নিজস্ব কার্যালয়ের খোলা প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী 'রবি-চ্যানেল আই বিজয় মেলা'র আয়োজন করেছে। আজ সকাল ১১টায় ৪০টি শান্তির প্রতীক কবুতর উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করা হবে। মেলা চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তবে সরাসরি সম্প্রচার ২টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.