৬১ জেলা পরিষদে প্রশাসক হলেন আওয়ামী লীগ নেতারা

হান বিজয় দিবসের আগ মুহূর্তে গতকাল রাতে দলীয় বিবেচনায় ৬১ জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসকদের সবাই সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতা। এর ফলে জেলা পরিষদ আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পরিণত হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, ক্ষমতায় আসার তিন বছর পর দলের মাঠ নেতাদের মূল্যায়ন করল সরকার। সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে পরিষদের নির্বাচন হবে বলে


স্থানীয় সরকার বিভাগ জানিয়েছে। এই ৬১ জেলার মধ্যে পার্বত্য ৩ জেলা নেই।নিয়োগ পাওয়া প্রশাসকরা হলেন— পঞ্চগড়ে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো. আবু বকর সিদ্দিক, ঠাকুরগাঁওয়ে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাদেক কোরাইশী, দিনাজপুরে জেলা সভাপতি
আজিজুল ইসলাম চৌধুরী, নীলফামারীতে জেলা সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল ইসলাম, লালমনিরহাটে জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, রংপুরে অ্যাডভোকেট রোজিনা রাজ্জাক, কুড়িগ্রামে জেলা সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমিন, গাইবান্ধায় জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ শামসুল হক হিরু, জয়পুরহাটে জেলা সাধারণ সম্পাদক এসএম সোলায়মান আলী, বগুড়ায় ডা. মকবুল হোসেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মইনউদ্দিন মণ্ডল, নওগাঁয় জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি, রাজশাহীতে মাহবুব জামাল ভুলু, নাটোরে জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট সাজেদুর রহমান খান, সিরাজগঞ্জে আব্দুল মজিদ মণ্ডল, পাবনায় জেলা সহ-সভাপতি মো. সাইদুল হক চুন্নু, মেহেরপুরে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী, কুষ্টিয়ায় জাহিদ হোসেন জাফর, চুয়াডাঙ্গায় মেজর (অব.) আলিমুজ্জামান জোয়ার্দার, ঝিনাইদহে ওয়াহেদ জোয়ার্দার, যশোরে শাহ হাদিউজ্জামান, মাগুরায় জেলা সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ শফিকুল ইসলাম, নড়াইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র বোস, বাগেরহাটে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান টুকু, খুলনায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুন অর রশিদ, সাতক্ষীরায় সহ-সভাপতি মনসুর আহমেদ, বরগুনায় জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর কবির, পটুয়াখালীতে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, ভোলায় জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মমিন টুলু, বরিশালে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মোখলেসুর রহমান, ঝালকাঠিতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরকার মোহাম্মদ শাহ আলম, পিরোজপুরে অ্যাডভোকেট মো. আকরাম হোসেন, টাঙ্গাইলে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান ফারুক, জামালপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, শেরপুরে অ্যাডভোকেট হালিম, ময়মনসিংহে অ্যাডভোকেট জহিরুল হক, নেত্রকোনায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান, কিশোরগঞ্জে জিল্লুর রহমান, মানিকগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মহিউদ্দিন, মুন্সীগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ, ঢাকায় আওয়ামী লীগ নেত্রী হাসিনা দৌলা, নরসিংদীতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, গাজীপুরে ডাকসুর সাবেক ভিপি মো. আখতারুজ্জামান, নারায়ণগঞ্জে আব্দুল হাই, রাজবাড়ীতে আকবর আলী মির্জা, ফরিদপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী জায়নুল আবেদীন, গোপালগঞ্জে কাজী রশীদ, মাদারীপুরে মেরাজউদ্দিন খান, শরীয়তপুরে সহ-সভাপতি মজিবুর রহমান মাস্টার, সুনামগঞ্জে ব্যারিস্টার মোহাম্মদ ইমন, সিলেটে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান, মৌলভীবাজারে আজিজুর রহমান, হবিগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. মুশফিক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ একেএম এমদাদুল বারী, কুমিল্লায় মো. ওমর ফারুক, চাঁদপুরে লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী, নোয়াখালীতে বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. এবিএম জাফরুল্লাহ, লক্ষ্মীপুরে জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কামাল, চট্টগ্রামে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম এবং কক্সবাজারের জেলা সহ-সভাপতি মোশতাক আহমেদ।
জেলা পরিষদে প্রশাসক পদে রাজনৈতিক নিয়োগ দিতে গিয়ে সরকার জেলা পরিষদ আইন ২০০০-এ কয়েকটি সংশোধনী আনে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ৬১ জন জেলা প্রশাসকের জন্য অত্যাধুনিক পাজেরো জিপ, আসবাবপত্র সংগ্রহ ও আনুষঙ্গিক কাজের জন্য তারা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ২শ’ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ পেতে যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, দলটি ক্ষমতায় আসার পর আদি নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়নি বলে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ক্ষোভ নিরসনে ক্ষমতার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পূর্বক্ষণে আদি ও আসল নেতাদের মূল্যায়ন করল আওয়ামী লীগ।
অবশ্য জেলা পরিষদে দলীয় লোকদের প্রশাসক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগ সংসদীয বোর্ডের বৈঠকে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জেলা পরিষদ প্রশাসক পদে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে সিদ্ধান্ত ছিল, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং পৌরসভা মেয়রসহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে নিয়োগের সুযোগ পাবেন না। প্রশাসক হিসেবে নিয়োগের বেলা মনোনয়নবঞ্চিত নেতা এবং রাজনৈতিক বিবেচনার পাশাপাশি যোগ্যতা, দক্ষতা ও সততাকে প্রাধান্য দেয়া হবে। সবার আগে আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের বিবেচনায় আনা হবে। সেই ক্ষেত্রে যেসব সাংগঠনিক জেলায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন তারা প্রাধান্য পাবেন। সংসদীয় কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি কার্যকর হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.