জেনেভায় ডবি্লউটিও সম্মেলন শুরু-বাংলাদেশের প্রাপ্তি নিয়ে আশা-নিরাশার দোলাচল

ড়া নিরাপত্তার মধ্যে জেনেভার আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডবি্লউটিও) মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৮টা) সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ডবি্লউটিও চেয়ারম্যান নাইজেরিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী ওলো সেগান আগানগা। মূল সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি)


মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন ডবি্লউটিওর মহাপরিচালক প্যাসকেল লামি। বৈঠক শেষে বাংলাদেশের মন্ত্রী ফারুক খান অনেক আশাবাদের কথা জানিয়েছেন। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উন্নত দেশের বিশেষত আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে এ সম্মেলনে কোনো অগ্রগতি হবে না। এলডিসির মন্ত্রীরা যেসব বৈঠক করেছেন, সেখানে এ ব্যাপারে অভিন্ন অবস্থান নির্ধারিত হয়নি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডবি্লউটিওর মহাপরিচালক প্যাসকেল লামিসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরই শুরু হয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন, যেখানে প্রত্যেক দেশের মন্ত্রী তিন মিনিট করে বক্তব্য রাখেন। পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতা মন্ত্রী ফারুক খান বলেন, স্বল্পোন্নত দেশগুলো দোহা আলোচনা থেকে সুষম ফল পেতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করেছে। এ কারণে আমরা দোহাকে ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। আমাদের অবশ্যই দোহা আলোচনার অচলায়তন ভাঙতে হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, নিয়মভিত্তিক বহুপক্ষ বাণিজ্য ব্যবস্থা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর স্বার্থের জন্য খুবই প্রয়োজন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নাইজেরিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী বিশ্ববাণিজ্য বাড়ানো ও উন্নয়নের স্বার্থে দোহা আলোচনা শেষ করার তাগিদ দেন। প্যাসকেল লামি বলেন, রাজনৈতিক বহুমাত্রার কারণে বহুপক্ষীয় বাণিজ্য আলোচনার অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। তবে উন্নয়নের স্বার্থে একে এগিয়ে নিতে হবে। আজ অনুষ্ঠিত হবে কয়েকটি কর্মঅধিবেশন। তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের শেষ দিনে চেয়ারম্যান সামগ্রিক আলোচনার ভিত্তিতে একটি বিবৃতি দেবেন।
ডবি্লউটিওর এবারের সম্মেলন সম্পর্কে গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য (জেনেভায় অবস্থানরত) বলেন, এবারের সম্মেলন খুবই জটিল প্রেক্ষাপটে হচ্ছে। ইউরো অঞ্চলের অর্থনৈতিক সংকট, উন্নত দেশগুলোতে বেকারত্বের হার বেড়ে যাওয়া, বিকাশমান অর্থনৈতিক দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া এবং এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা অনেক বেড়ে গেছে। আমি মনে করি, দোহা আলোচনা এখন মৃতপ্রায়। সে বিবেচনায় এবারের সম্মেলন এক প্রকার নিয়মরক্ষার। তারপরও যদি ইতিবাচক কিছু বেরিয়ে আসে তাহলে মন্দের ভালো।
তিনি বলেন, দোহা আলোচনা শেষ হওয়ার দিকে বেশি মনোযোগ না দিয়ে বাণিজ্যসংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ের প্রতি বেশি মনোযোগ দিতে হবে। আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে ডবি্লউটিও সম্মেলনে আলোচনা করে কোনো ফায়দা হবে না। বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে ওয়াশিংটনের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবারের সম্মেলন থেকে খুব বেশি কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে সেবা খাতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে ছাড় দেওয়ার বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক। বাণিজ্যসংক্রান্ত মেধাস্বত্ব আইনের প্রয়োগ থেকে এলডিসি দেশগুলোকে দেওয়া ছাড়ের সময় বাড়ানোর বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি হলে তাতেও লাভবান হবে বাংলাদেশ।
গতকাল সকালে ডবি্লউটিও মহাপরিচালক প্যাসকেল লামি স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি এলডিসিগুলোকে ডবি্লউটিওর সদস্য হিসেবে আরও সক্রিয় হওয়ার তাগিদ দেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রী ফারুক খান সমকালকে বলেন, এলডিসি দেশগুলোর মধ্যে কিছু ইস্যুতে অভিন্ন অবস্থান নেওয়া সম্ভব হয়েছে। এবারের সম্মেলনে বাংলাদেশের নেতৃত্বে এলডিসিগুলো কিছু পেতে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.