রুমানাদের আলোয় জয় দিয়েই অভিষেক

কাল দুপুরে প্র্যাকটিস শেষে মহিলা বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের ফাইনাল দেখতে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে গিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিমরা। বসতে না বসতেই দেখলেন ওয়েশু ইন্ডিজের ডিয়ানড্রা ডটিন একই ওভারে চার চারটা ছক্কা মেরেছেন। মুগ্ধতার পাশাপাশি জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মাঝে এ গবেষণাও শুরু হয়ে গেল যে তাঁদের কেউ এমন কাণ্ড করার সামর্থ্য রাখেন কি না! অতটা না পারলে, একই সময়ে বিকেএসপির দুই নম্বর মাঠে


আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের পঞ্চম স্থান নির্ধারণী ম্যাচে রুমানা আহমেদের ব্যাটিংও তো কম বিনোদনের খোরাক জোগাচ্ছিল না।
৪৯তম ওভারে আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক ইসোবেল জয়েসকে টানা চার বলে চারটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ২১০ রান করায় রুমানার অবদানই যে সবচেয়ে বেশি। পরে বল হাতেও ২ উইকেট তুলে নিয়ে খুলনার এ তরুণী নিজেও হয়ে গেলেন ইতিহাসের অংশ। মেয়েদের ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ আর তাতে ৮২ রানে জেতার পর ব্যাটে-বলে উজ্জ্বল রুমানা পেলেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। যেমনটা ১৯৯৮ সালের ১৭ মে হায়দরাবাদের লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে বাংলাদেশকে প্রথম ওয়ানডে জয় এনে দিয়ে পেয়েছিলেন মোহাম্মদ রফিক।
সেই ম্যাচে কেনিয়ার ২৩৬ রান তাড়া করতে নামা বাংলাদেশ আতহার আলী খানের সঙ্গে পিঞ্চ হিটার মোহাম্মদ রফিককে ওপেন করতে পাঠিয়ে পেয়েছিল ১৩৭ রানের উড়ন্ত সূচনা। কী আশ্চর্য মিল দেখুন, কাল বিকেএসপিতে প্রথম এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা মেয়েদের দলও ওপেনিংয়ে পরিবর্তন করে নামল। ক্রমাগত ব্যর্থতায় আয়েশা আক্তারের জায়গায় শুকতারা রহমানের ওপেনিং সঙ্গী হিসেবে শারমীন আক্তার সুপ্তাকে পাঠাতেই চলে এল শতরানের পার্টনারশিপ। অথচ আগের রাতে ঠিকমতো ঘুমাতেই পারেননি সুপ্তা, 'রাতে ঘুমই আসছিল না। ভোর ৫টায় আমাদের জাগতে হয়। অথচ আমার ঘুম ভেঙে গেছে সাড়ে ৪টায়।' মাঠে নামতেই অবশ্য টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামা এবং অভিষেকের উত্তেজনা চাপা দিয়ে নতুন ইতিহাসের পাতায় লিখে ফেললেন আরেকটি ইতিহাস। ছেলেদের ক্রিকেটে আজহার হোসেন শান্টুর আর মেয়েদের ক্রিকেটে প্রথম ফিফটি বিকেএসপিতে পড়ুয়া সুপ্তার।
আয়ারল্যান্ডের ত্রয়োদশী লেগস্পিনার এলিনা টাইসের ফ্লাইটেড ডেলিভারি এক পা বেরিয়ে এসে খেললেন। বোলারের মাথার ওপর দিয়ে স্ট্রেইট ড্রাইভে বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে ফিফটিতে পেঁৗছে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর একই আনন্দে ভাসতে দেখলেন শুকতারাকেও। ১১৯ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৫৩ রানের ইনিংসটি সাজানো শুকতারা ফিফটিতে পেঁৗছান জিল হোয়েলানের বল কাভারে ঠেলে সিঙ্গেল নিয়ে। আর ১১১ বলে সুপ্তার ৫২ রানের ইনিংসে ছিল ছয়টি বাউন্ডারির মার। তাঁদের সৌজন্যে ১১৩ রানের সূচনা পাওয়া বাংলাদেশকে এরপর ২০০ পার করায় রুমানার ৩১ বলে অপরাজিত ৩৬ রানের ঝড়ো ইনিংস।
এরপর আয়ারল্যান্ড নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকলেও বাংলাদেশের গলার কাঁটা হয়ে ছিলেন ওপেনার সিসিলিয়া জয়েস (৪২)। নিজের লেগস্পিনে তাঁকে বোল্ড করা রুমানার বোলিং বিশ্লেষণও দেখার মতো : ১০-৩-১০-২! আইরিশদের ৪১ রানের ওপেনিং জুটি ভাঙা অধিনায়ক সালমা খাতুনের (৩/৩৪) সমান সফল দলের ফিল্ডাররাও। তাঁরা যে তিন তিনটি রান আউটে হারার আগেই আইরিশদের হার লিখে ফেলেছিলেন। বিকেএসপিতে উপস্থিত থাকলে এমন সম্মিলিত পারফরম্যান্স থেকেও নিশ্চয়ই পাকিস্তান সিরিজের আগে অনুপ্রেরণা খুঁজতে পারতেন মুশফিকরা!

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২১০/৭ (শুকতারা ৫৩, শারমীন সুপ্তা ৫২, ফারজানা ১৩, সালমা ৪, লতা ২৭, রুমানা ৩৬*, সাথীরা ১, অতিরিক্ত ২৪; লরা ২/৩৪, জিল হোয়েলান ৩/৩১)
আয়ারল্যান্ড : ৪৫.৪ ওভারে ১২৮/১০ (সিসিলিয়া ৪২, ওয়ালড্রন ২৫, অতিরিক্ত ১৮; সালমা ৩/৩৪, কুবরা ১/১৬, রুমানা ২/১০)
ফল : বাংলাদেশ ৮২ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা : রুমানা আহমেদ (বাংলাদেশ)

No comments

Powered by Blogger.