স্মরণীয় শিক্ষাবিদ আযীম উদ্দিন আহমেদ by এসকে মজিদ মুকুল

ধ্যক্ষ আযীম উদ্দিন আহমেদ ছিলেন মানুষ গড়ার কারিগর। ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী ব্যক্তিত্ব অধ্যক্ষ আযীম উদ্দিন আহমেদ আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃত 'ইংরেজি' শিক্ষার বিকাশে তিনি ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে স্নাতক শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠ্য ইংরেজি গ্রামার ও ফাংশনাল ইংলিশ বই লিখেছেন, যা ব্যাপকভাবে প্রশংসনীয় ও সমাদৃত হয়েছে। ১ অক্টোবর তার জন্মদিন।


১৯০৪ সালে ১ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানার এক অজপাড়াগাঁয়ে জন্মগ্রহণকারী আযীম উদ্দিন আহমেদ। বাগেরহাট প্রফুল্লচন্দ্র কলেজের পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ও বাংলা বিষয়ে মাস্টার্স করেন আযীম উদ্দিন আহমেদ। তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে যোগদানের মধ্য দিয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। শুরু হয় তার সুশিক্ষা দানের মাধ্যমে মানুষ গড়ার কাজ। পরে সুশিক্ষার বিকাশ ও বিস্তৃতি ঘটাতে পর্যায়ক্রমে করটিয়া সা'দত কলেজ ও জামালপুরের আশেক মাহমুদ কলেজে অধ্যাপনার পর শুরু হয় তার অধ্যক্ষ জীবন। সুনাম ও সুখ্যাতির সঙ্গে পর্যায়ক্রমে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, বাগেরহাট প্রফুল্লচন্দ্র কলেজ, সাতক্ষীরা কলেজ, মুন্সীগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজ এবং সবশেষে ভূয়াপুর কলেজে দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে অবসর গ্রহণ করেন। তার বড় ছেলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। সুসন্তান গড়ার কারিগর তার পাঁচ ছেলে, ছয় মেয়েকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়েছেন।
অধ্যক্ষ আযীম উদ্দিন আহমেদ একাধারে মানুষ গড়ার জন্য শিক্ষাদানে যেমন দায়িত্ব ও কর্তব্যপরায়ণ ছিলেন, তেমনি দক্ষ প্রশাসকও ছিলেন। একইভাবে তিনি ছিলেন সৎ, উদার ও আধুনিক মানুষ। তাই তো তিনি যখনই যে কলেজে যোগ দিয়েছেন সে কলেজের ফল অতীতের সব রেকর্ডই অতিক্রম করেছে। তিনি এত দূরদর্শী ছিলেন যে, ভবিষ্যতে যাতে পরিবেশের ভারসাম্যে বিঘ্ন না ঘটে, সে জন্য তিনি প্রতিটি কলেজ প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ করেছেন। পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে প্রকৃতিপ্রেমী এ শিক্ষক রোপিত মহুয়াগাছ ও মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজের জামগাছ আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আপন গৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। তার ব্যক্তিজীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের যদি অনুসন্ধান করি তাহলে প্রথমেই আসে আরেক অমর ব্যক্তিত্ব বারডেম হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. ইব্রাহিমের নাম। এ দুই পরিবারের মধ্যে সখ্য গড়ে উঠেছিল। দু'পরিবারের মধ্যে যাওয়া-আসা ছিল নিয়মিত ব্যাপার।
আযীম উদ্দিন আহমেদ আজীবন ভালো থেকেছেন এবং বয়সের কারণে নিজে যুদ্ধে অংশ নিতে না পারলেও দু'দুটি সন্তানকে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন। সন্তানদের যুদ্ধে পাঠানোর সময় বলেই দিয়েছিলেন_ 'তোমরা জীবন না দিলে দেশ, এই মাটি ও মানুষ মুক্তি পাবে না, স্বাধীনতা অর্জিত হবে না। তার এমন ভূমিকা, শিক্ষা ও উপদেশ যারা জানেন, শুনেছেন ও জানবেন তাদের কাছে তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন, অমর থাকবেন। তিনি ইংরেজি ও বাংলায় শিক্ষা অর্জন করলেও তিনি পরিবেশ ও সমাজ গবেষকও। তাই তো সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার-সংস্কৃতি বিকাশে তিনি নাটককে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তিনি নাট্যবিশারদ উপাধিতে ভূষিত হন। পঞ্চাশের দশকে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান 'পেন' (চঊঘ) আয়োজিত প্রতিযোগিতায় তার লেখা 'মা' নাটক প্রথমস্থান লাভ করে। মৈমনসিংহ গীতিকার মহুয়া গীতিকাব্য অবলম্বনে তার রচিত 'মহুয়া' নাটকটি ষাটের দশকে এত জনপ্রিয়তা লাভ করে যে, পূর্ব বাংলার (বাংলাদেশ) নাট্যমঞ্চে তা একাধিকবার মঞ্চস্থ হয়। তার শিক্ষা, তার উপদেশ, তার ক্ষুরধার লেখনী তাকে অমর করে রেখেছে। আযীম উদ্দিন আহমেদের মৃত্যু নেই।
 

No comments

Powered by Blogger.