অবৈধ ভিওআইপি-বিটিআরসি দায়িত্ব এড়াতে পারে না

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে 'বেড়ায় ক্ষেত খায়' বলে একটি প্রবাদ আছে। ক্ষেত বিনষ্টকারী প্রাণীদের হাত থেকে ক্ষেত রক্ষার জন্যই চাষিরা বেড়া দেন। কিন্তু সবার অলক্ষ্যে যদি বেড়াই ফসল খেতে শুরু করে তবে চাষির আর কোনো উপায় থাকে না। বেড়া ক্ষেত খেতে শুরু করলে বিপুল লোকসান গুনে চাষিকে কপালে হাত দিতে হয়। অবশ্য বেড়া সত্যিই ক্ষেত খেতে পারে কি-না তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে ফসল পাহারার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যে


নিজের ঘরে ফসল তুলতে পারে তা নিশ্চিত। সে ক্ষেত্রে ফসল চুরি প্রতিরোধ করা সবচেয়ে কঠিন। গতকাল সমকালে প্রকাশিত 'অবৈধ ভিওআইপির রমরমা ব্যবসা' শিরোনামের বিশেষ প্রতিবেদনটি যারা পড়েছেন তাদের আবশ্যিকভাবে গ্রামদেশে প্রচলিত প্রবাদটির কথা মনে পড়েছে। এ শুধু চাঞ্চল্যকর নয়, রীতিমতো উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো সংবাদ। ভিওআইপি বা ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল একটি বিশেষ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা। সাশ্রয়ী এই টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে আত্মীয়-বান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। কিন্তু এই যোগাযোগ ব্যবস্থাটিই কিছু মানুষের অবৈধ আয়ের পন্থা হিসেবে কাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে লাইসেন্সধারী বৈধ ভিওআইপি প্রতিষ্ঠান থাকার পরও প্রতিদিন হাজারো কল ট্রান্সফার হচ্ছে অবৈধ পন্থায়। অবৈধ ভিওআইপির দাপটে প্রতিদিন সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে ১০ কোটি টাকার বেশি। মজার ব্যাপার হলো, ভিওআইপি তদারকির দায়িত্ব বিটিআরসি বা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের। অতীতে বিভিন্ন সময় অবৈধ ভিওআইপি বন্ধের জন্য তাদের তৎপরতা দেখা গেছে। বিটিআরসির তৎপরতার কারণে অনেক প্রাইভেট মোবাইল অপারেটরকে ভুগতে হয়েছে। ব্যক্তিমালিকানার ৫টি ল্যান্ডফোন কোম্পানি বিটিআরসির অভিযানের কারণে পুরোপুরি বন্ধই হয়ে গেছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বিটিআরসির ঘরেই ভূতের নিবাস। বিটিআরসির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানার মোবাইল অপারেটর টেলিটক ও ল্যান্ডফোন অপারেটর বিটিসিএলের মাধ্যমে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানায় চললেও অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার টাকাটা কিন্তু রাষ্ট্রীয় খাতে জমা হচ্ছে না, সেটি প্রত্যাশিতও নয়। অবৈধ উপায়ে অর্জিত টাকা চলে যাচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পকেটে। পরিস্থিতি বলছে, সবার নাকের ডগায় এ ব্যবসা পরিচালিত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো ব্যবহার করে এ ব্যবসা চলছে। এমনকি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কলরেকর্ড মুছে দিয়ে চুরি লুকানোর নানা উপায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে। খুব স্পষ্ট যে, একটি সংঘবদ্ধ চক্র দিন-দুপুরে রমরমা অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিটিআরসি প্রত্যাশিত ভূমিকা পালন করতে পারছে না। প্রশ্ন হলো, বিটিআরসি যেখানে প্রাইভেট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পেরেছে সেখানে নিজেদের ঘরের মধ্যে অবৈধ ব্যবসার রমরমায় তাদের অবস্থান এত কোমল কেন? রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সুবিধা ব্যবহার করে এমন চুরির ঘটনা শুধু লজ্জাজনক নয়_ চরম শাস্তিযোগ্য অপরাধ। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আমাদের গর্বের বস্তু। সে প্রতিষ্ঠানগুলোর গায়ে যারা কালিমা লেপন করছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার। নাগরিকরা আশা করে, বিটিআরসি অচিরেই বিটিসিএল ও টেলিটকের অবৈধ ভিওআইপির বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করবে। এ ক্ষেত্রে বিটিসিএল ও টেলিটকের শীর্ষ কর্মকর্তাদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। অবৈধ ভিওআইপির মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রচুর রাজস্ব গচ্চা যাচ্ছে এ কথা যেমন সত্য, তেমনি এটিও সত্য যে, ভিওআইপি নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের নীতিটি নিয়ে বিকল্প ভাবনার অবকাশ আছে। বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরে ভিওআইপি উন্মুক্ত করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। সেটি হলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা উৎসাহী হবে। সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। তা না করে, এ ব্যবস্থাটিকে সীমিত করে রাখলে সবসময়ই কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এটি ব্যবহার করে আখের গোছাতে চাইবে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলকে এখনই বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.