পালিয়ে গেল বর by শাহজাহান সোহেল,

ন কুয়াশা ভেদ করে অন্ধকার রাতে একটি পাজেরো জিপ ছুটে চলেছে গ্রামের আঁকাবাঁকা মেঠোপথ ধরে। গন্তব্য একটি বিয়েবাড়ি। পাজেরো জিপের যাত্রী ছিলেন তিনজন সরকারি কর্মকর্তা, চারজন পুলিশ এবং একজন মিডিয়াকর্মী। সবার একই উদ্দেশ্য। ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে পাজেরো জিপটি বিয়েবাড়িতে পেঁৗছামাত্রই ভোঁ দৌড়ে পালিয়ে গেল বর আর কাজী। এর সঙ্গে বিয়েবাড়ির আরও অনেকেই এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। আর এতেই বন্ধ হলো


জেএসসি পরীক্ষার্থী আমিনা আক্তারের বাল্যবিয়ে। ঘটনাটি গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার পশ্চিম ক্ষোর্দকোমরপুর গ্রামের। এভাবেই নিজ উদ্যোগে মাত্র চারদিনের ব্যবধানে দু'জন জেএসসি পরীক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মওলা। বাল্যবিয়ে থেকে মুক্তি পেয়ে ওই দুই শিক্ষার্থী যথানিয়মে পরবর্তী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে হতদরিদ্র পরিবারের এই দু'কন্যা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মওলা বলেন, জেএসসি পরীক্ষার্থী আমিনা আক্তার (১৩) স্থানীয় ক্ষোর্দকোমরপুর বহুমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী। তার ক্লাস রোল নম্বর এক। এবারের জেএসসি পরীক্ষা চলাকালীন গত ১৩ নভেম্বর আমিনা আক্তারের বিয়ের সংবাদ পেয়ে আমি তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হই। পরে সবাইকে বুঝিয়ে এই বাল্যবিয়ে বন্ধ করি। তবে বর পালিয়ে যাওয়ায় তাকে বোঝানো সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন, ঠিক এর চারদিন পরেই এমনি আরেক জেএসসি পরীক্ষার্থী শারমিন আক্তারের (১৩) বিয়ের দিন ধার্য ছিল গত ১৮ নভেম্বর। সংবাদ পেয়ে ওই বাড়িতে গিয়ে শারমিন আক্তারের বাল্যবিয়ে বন্ধ করি। শারমিন আক্তার উপজেলার উত্তর মন্দুয়ার গ্রামের শাহাদত হোসেনের মেয়ে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুস সাত্তার সরকার বলেন, জেএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড অনুযায়ী আমিনা আক্তারের জন্মতারিখ ২৪ এপ্রিল ১৯৯৮। আর শারমিন আক্তারের জন্মতারিখ ৩ ডিসেম্বর ১৯৯৮। এই শিক্ষার্থীদের বয়স বাড়িয়ে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু বাল্যবিয়ে বন্ধে সমাজের মানুষ বাধা না দেওয়ায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিয়েবাড়িতে গিয়ে দুই শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছে। তার মতে, সমাজের মানুষ সচেতন হলে অনায়াসে বাল্যবিয়ে রোধ করা সম্ভব।
জেএসসির সাদুল্যাপুর বহুমুখী পাইলট উচ্চ বালক বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য অফিসার আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বাল্যবিয়ের কবল থেকে মুক্তি পেয়ে আমিনা আক্তার ও শারমিন আক্তার তাদের পরবর্তী পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করেছে। কেন্দ্রের সবাই তাদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে সাহস জুগিয়েছে।
দুই শিক্ষার্থী সমকালকে বলে, পরিবারে অভাবের কারণেই তারা বিয়েতে রাজি হয়েছিল। বিভিন্ন সমস্যার কারণে দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের পড়ালেখা বেশি দূর এগোয়নি। তবে লেখাপড়ার সুযোগ পেলে ভালো কিছু করে দেখাতে পারবে বলে তারা বিশ্বাস করে। 

No comments

Powered by Blogger.