সৌদি নারীমুক্তির আলোকবর্তিকা by কনিকা হক

খুব সামান্য পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগলেও কঠোর অনুশাসনে আবদ্ধ এখনও সৌদি নারীর জীবন। সারা বিশ্বে নারীরা এগিয়ে গেলেও সৌদি নারীরা আছেন পর্দার অন্তরালে। ২২ অক্টোবর মারা গেছেন সৌদি রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স সুলতান। তাতে রক্ষণশীলদের পাল্লাটা কিছুটা ভারী হয়ে উঠেছে। এর ফলে সৌদি নারীদের সামান্য এগিয়ে যাওয়ার যে শুরু তা কি থেমে যাবে_ এমন প্রশ্ন উঠে আসছে সামনে। কিন্তু এমন আশঙ্কার মাঝে 'আমরা নারীরা


সমঅধিকার চাই, সমমর্যাদার নাগরিক হিসেবে সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই'_ এমন বক্তব্যে আশার আলো জাগছে সৌদি নারীদের মনে। কে তিনি, যার কথায় সৌদি নারীদের মনেপ্রাণে আশার সঞ্চার ঘটছে? তিনি প্রিন্সেস আমিরা আল-তাবিল। সৌদি ধনকুবের প্রিন্স আল-ওয়ালিদ বিন তালাল, যিনি বাদশাহ আবদুল্লাহর ভাইপো, তার স্ত্রী। ধনকুবেরের স্ত্রী হলেও প্রগতিশীল আমিরা নারী সমাজের উন্নয়নে কাজ করতে প্রবল আগ্রহী। তার সামাজিক মর্যাদা এবং খ্যাতিকে কাজে লাগিয়ে ইতিমধ্যে তিনি কাজ শুরু করেছেন। ২৭ বছর বয়সী আমিরা 'টুইটার প্রজন্মের' একজন সক্রিয় সদস্য। উল্লেখ্য বাদশাহ আবদুল্লাহ নারী অধিকার সম্প্রসারণে পরীক্ষামূলক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন বেশ কয়েক বছর হলো। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীদের সহশিক্ষা কার্যক্রম চালুর নির্দেশ দেন তিনি দু'বছর আগে। এছাড়া অফিস-আদালতে নারীদের কাজের অনুমতি এবং অতি সম্প্রতি নারীদের ভোটদানের অধিকার দিয়ে উদারপন্থীদের প্রশংসা অর্জন করেন। তবে এসব কার্যক্রমে রক্ষণশীলরা বড় বেশি নাখোশ হয়ে আছেন। তাই প্রিন্স সুলতানের মৃত্যুর পর নারীদের উন্নয়নের ধারা পিছিয়ে পড়বে_ এমন আশঙ্কা রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলনের কর্মীদের। কিন্তু প্রিন্সেস আমিরা যেন আশার আলো সঞ্চার করছেন তাদের মনে তার দৃঢ় মন্তব্যে এবং কিছু কার্যকলাপে। তার স্পষ্ট কথা, 'সৌদি নারীরা পিছু হটা কিছুতেই মেনে নেবে না।' তিনি বলেন, 'সুযোগ তৈরি করে আমি অবশ্যই চেষ্টা করব মানুষের জন্য বিশেষ করে মেয়েদের জন্য কিছু করতে।' তিনি কি তবে রাজনীতিতে নামছেন?
সৌদি নারীমুক্তি আন্দোলনের একজন কর্মী বলেন, তার অবস্থানের জন্য তিনি এমন সাহসী কথা বলতে পারছেন। তবে সবাই তা বলেন না। সে ক্ষেত্রে তিনি ব্যতিক্রম। আমরা আশাবাদী এবং খুশি, কারণ এমন অবস্থান থেকে নারীদের কথা ভাবা হলে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন নিশ্চয়ই ঘটবে। প্রিন্সেস আমিরা নারী অধিকার আন্দোলনে ব্যবহার করছেন সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট টুইটার। সৌদি নারীবাদীদের সঙ্গে নিয়মিত টুইটারে যোগাযোগ করছেন তিনি। তিনি সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, 'গাড়ি চালানোর সঙ্গে জড়িত রয়েছে অর্থনীতি, রোমান্স নয়।' তাছাড়া বলেন, গাড়ি চালকদের হাতে অনেক নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। নারীরা গাড়ি চালালে বরং তারা অনেক নিরাপদে থাকবেন। সব প্রতিবন্ধকতা দূর করে নারীরা সামনে এগিয়ে যাবেন_এমন ইচ্ছায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তিনি।

No comments

Powered by Blogger.