ঢাকা না ভেঙে নির্বাচন দিন আমি প্রার্থী হব না : খোকা

রাজধানী ঢাকাকে অবিভক্ত রাখার স্বার্থে আগামীতে প্রার্থী না হওয়ার অঙ্গীকার করেছেন বর্তমান মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দ্বিখণ্ডিত না করে অবিলম্বে নির্বাচন দিন। আমি পরবর্তী নির্বাচনে প্রার্থী হব না। সরকার চাইলে এ বিষয়ে তিনি আলোচনার জন্য প্রস্তুত বলে জানান।গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে খোকা এ অনুরোধ ও অঙ্গীকারের কথা জানান। তিনি বলেন, সিটি


করপোরেশনকে ভাগ করার মানে নগরবাসীর হৃদয়কে দুই ভাগ করে দেওয়া। ঢাকাকে দুই ভাগ করা হলে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ঢাকার অখণ্ডতা ফিরিয়ে আনা হবে। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে মেয়র পদে থাকা খোকা সংবাদ সম্মেলনে তাঁর মেয়াদে নানা উন্ন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি নানা ব্যর্থতার দায়ও স্বীকার করেন।
খোকা বলেন, 'সুশীল সমাজ, ডিসিসির সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নগরবাসীর আকাঙ্ক্ষার প্রতি সম্মান জানিয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি ঢাকাকে বিভক্ত না করে অবিলম্বে নির্বাচন দিন। আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব না। এটিই আমার আকুতি। এ বিষয়ে আমি প্রস্তাব তুলে ধরেছি। সরকার চাইলে এ বিষয়ে আমি আলোচনার জন্য প্রস্তত আছি।'
শুক্রবার রাত থেকে গুঞ্জন ছিল ঢাকা দ্বিখণ্ডিত করার প্রতিবাদে সাদেক হোসেন খোকা মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের কথা নাকচ করে খোকা বলেন, তিনি অবিভক্ত ঢাকার মেয়র। আইনগতভাবে যত দিন দায়িত্ব পালন করা সম্ভব, তিনি তা করবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত ঢাকা মহানগরী দ্বিখণ্ডিত হবে না, ততক্ষণ তিনি মেয়র হিসেবে থাকবেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই পদত্যাগ করবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, সরকারের এ সিদ্ধান্ত তুঘলকি কাণ্ড। তাদের এ 'উদ্ভট' পদক্ষেপ নাগরিকদের জন্য সহায়ক হওয়ার পরিবর্তে বিপর্যয় ডেকে আনবে।
দুপুর সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগেই করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কমিশনাররা প্রেসক্লাবে জড়ো হতে শুরু করেন। তাঁদের উপস্থিতিতে খোকা বলেন, সরকার 'বিনা মেঘে বজ্রপাতের' মতো সিটি করপোরেশনকে দুুই ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিটি করপোরেশনকে ভাগ করা মানে নগরবাসীর হৃদয়কে দুই ভাগ করে দেওয়া। সরকারের এ সিদ্ধান্তে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেন ঢাকা মহানগরী বিএনপির আহ্বায়ক খোকা।
সাদেক হোসেন খোকা বলেন, 'সাংবাদিক বন্ধুরা, ব্যাপারটা এমন নয় যে এ জন্য আমি বেদনা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছি। এ শহরের ধুলাবালি মেখে আমি বড় হয়েছি, আমার চোখের সামনে ঢাকা কোটি মানুষের শহরে পরিণত হয়েছে। শুধু আমরা যাঁরা ঢাকায় বড় হয়েছি তাঁরা নয়, যারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢাকায় এসে বসত গড়েছে তারাও ঢাকাকে গভীরভাবে ভালোবাসে। তাই সরকার কেন গণমানুষের ভালোবাসাকে দ্বিখণ্ডিত করে সিটি করপোরেশনকে ভাগ করছে_তা রহস্যজনক বলে মনে হচ্ছে আমার।'
বিএনপির এই নেতা দাবি করেন, দীর্ঘদিন কোনো জনপ্রতিনিধি ক্ষমতায় থাকলে তাঁর জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। আর আমার ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টো। এ জন্য সরকার নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে। আমাকে সরিয়ে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ সম্ভব নয়। তাই আমার জনপ্রিয়তাকে ভয় পেয়ে সরকার এ কাজ করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেদের লোক বসাতে চায় বলেই সিটি করপোরেশন ভাগ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র ছিলেন মোহাম্মদ হানিফ। ২০০২ সালের ১৫ মে দ্বিতীয় মেয়র নির্বাচিত হন খোকা। তাঁর মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নির্বাচন না হওয়ায় এখনো মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান। মেয়াদের প্রায় দ্বিগুণ সময় মেয়র থাকার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে খোকা বলেন, 'মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের অন্য সিটি করপোরেশনগুলোর নির্বাচন সম্পন্ন করলেও ঢাকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়নি। নির্বাচন কমিশন ঢাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রায় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলেও সরকার সহযোগিতা না করায় নির্বাচন সম্ভব হয়নি।'
গত ৯ বছরে ঢাকার অনেক উন্নয়নকাজ হয়েছে দাবি করে খোকা বলেন, ২০০২ সালের ১৫ মে দায়িত্ব গ্রহণের সময় এ সিটি করপোরেশন ৬৩১ কোটি টাকা দেনার দায়ে আবদ্ধ ছিল। ওই দেনা শোধ করে বর্তমানে তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকার নগদ স্থিতি রয়েছে করপোরেশনের ফান্ডে।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার কাজী আবুল বাশার, ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার মকবুল আহমেদ আকন্দ, ৫১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আবদুল লতিফ, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার শামসুল হুদা প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগ করতে গত ২৩ নভেম্বর জাতীয় সংসদে একটি বিল উত্থাপন করা হয়। এর আগে এ প্রস্তাবে সম্মতি দেয় মন্ত্রিপরিষদ। ঢাকার ৯২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৫৬টি নিয়ে দক্ষিণে একটি এবং ৩৬টি ওয়ার্ড নিয়ে উত্তরে আরেকটি সিটি করপোরেশন গঠনের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। বিলটি পাস হলে বর্তমান সিটি করপোরেশন বিলুপ্ত হবে এবং পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত দুটি সিটি করপোরেশনের জন্য দুজন প্রশাসক নিয়োগ হবে। এর ফলে বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলররা আর তাঁদের পদে বহাল থাকতে পারবেন না।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ১৬০৮ সালে ঢাকার গোড়াপত্তন হয়। তখন ঢাকার নাম ছিল জাহাঙ্গীরনগর। ১৮৬৪ সালে ঢাকা পৌরসভায় উন্নীত হয়। ১৯৭৮ সালে পৌরসভা থেকে মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন হয় ঢাকা। ১৯৯০ সালে ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের নাম হয় ঢাকা সিটি করপোরেশন।

No comments

Powered by Blogger.