নারী ক্রিকেটে অর্জন-২৪-১১-১১ by অর্ক জ্যোতি

তারিখটি তাই নারী ক্রিকেটের জন্য ঐতিহাসিক দিন। বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার পর বাংলাদেশ দলের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল ওয়ানডে মর্যাদা অর্জন। যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েদের হারিয়ে বাংলাদেশ সেই যোগ্যতা অর্জন করেছে লক্ষ্য ছিল ওয়ানডে স্ট্যাটাস ও বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন। প্রথমটা পূরণ হলেও দ্বিতীয় লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পেয়েছেন সালমারা। অর্জনের নিরিখে ২৪-১১-১১ তারিখটি তাই নারী ক্রিকেটের জন্য ঐতিহাসিক দিন।


বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার পর বাংলাদেশ দলের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল ওয়ানডে মর্যাদা অর্জন। যুক্তরাষ্ট্রের মেয়েদের হারিয়ে বাংলাদেশ সেই যোগ্যতা অর্জন করেছে। প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তি মিলে যাওয়ায় উৎসব করাটা তাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু সালমাদের দলে সেই উৎসবের মাত্রাটা ছিল সীমিত। বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন উঁকি দিয়ে হারিয়ে যাওয়ায় সম্ভবত তারা হতাশ। খেলা শেষে বাংলাদেশ দলের ওপেনার শুকতারার কণ্ঠে ছিল হতাশার অভিব্যক্তি। ওয়ানডে স্ট্যাটাসকে বড় অর্জন ধরে নিয়ে শুকতারা বলেছেন, 'ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ায় ভালো লাগছে। আমাদের টার্গেটই ছিল একদিনের ক্রিকেটে যোগ্যতা অর্জন। তবে বিশ্বকাপে খেলতে পারলে আরও ভালো লাগত। না পারায় আমরা হতাশ।' কিন্তু খুব হতাশ হওয়ার কারণ বোধ হয় নেই। ব্যাপারটা এমন_ পেলে ভালো হতো, না পেলেও ক্ষতি নেই। বাংলাদেশে প্রমীলা ক্রিকেটের পরিকাঠামো বলে কিছু নেই। অনাদর-অবহেলায় তারা বেড়ে ওঠে। এরপর সমাজের নানা প্রতিকূল মনোভাব উপেক্ষা করে তারা মাঠে নামে। এরপর যেটুকু সাফল্য আসে তা-ই তো সোনার হরিণ হওয়া উচিত। তবে প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের কোচ রবিন সিং যখন বলেন, দলগুলোর গুণগত পার্থক্য উনিশ-বিশ, তখন কিন্তু আফসোস হয়। আসলে সীমিত পরিকাঠামো নিয়েই আমরা বিশ্বকাপে খেলতে পারতাম, যদি ভাগ্য সহায় থাকত, যদি সংগঠকরা আরও দক্ষ হতেন। যা হোক, অপ্রাপ্তি নিয়ে দুঃখ করে লাভ নেই। বরং প্রাপ্ত সাফল্য নিয়ে সন্তুষ্ট থাকাই ভালো। এটা বুঝেই বাংলাদেশের কোচ মমতা মাবেন বলেছেন, 'এটা সবার জন্যই গর্বের ব্যাপার। মহিলা ক্রিকেটকে এভাবে সমর্থন দেওয়ার জন্য বিসিবিকে ধন্যবাদ। আমরাও কঠোর পরিশ্রম করেছি। মেয়েরা সেটার ফল পেয়েছে।'
কিন্তু ওয়ানডে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলেই হবে না, সেটা রক্ষাও করতে হবে। প্রমীলা ক্রিকেটে ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার চেয়ে এখন ধরে রাখাটাই বেশি কঠিন হবে। বাংলাদেশের কোচও জানেন সেটা, তাই মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি, 'ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার পর এখন এটা ধরে রাখতে হবে। এ জন্য প্রচুর ম্যাচ খেলতে হবে এবং এটা বাধ্যতামূলক। আমি মনে করি, এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে।'
বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সালমা আশাবাদী। ওয়ানডে দল হিসেবে তারা নিজেদের অবস্থানটা পাকাপোক্ত করতে পারবেন বলেই মনে করেন তিনি। বলেছেন, 'আমার বিশ্বাস, আমরা ওয়ানডে মর্যাদা ধরে রাখতে পারব, ভালোভাবেই পারব।' তাদের এই সাফল্য দেশের প্রমীলা ক্রিকেটে জাগরণ আনার ক্ষেত্রে আগ্রহী ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন অধিনায়ক, 'অনেক মেয়েই এখন ক্রিকেট খেলায় আগ্রহী হবে। ক্রিকেটে মেয়েরা যত বেশি আসবে, ততই আমাদের জন্য ভালো।'
এমন অর্জনের দিনে বিসিবির কাছে দাবি জানাতেও ভোলেননি লতা মণ্ডলরা। নিজেদের অভাবের প্রতি দৃষ্টি ফেরাতে তিনি বলেছেন, 'মেয়েদের ক্রিকেটে সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো দরকার। মেয়েদের জন্য আলাদা মাঠ হলে ভালো হয়। অনেক সময় ছেলেদের সঙ্গে আমাদের একই মাঠে খেলতে হয়েছে।'
কিন্তু এসব কিছুর চেয়ে জরুরি সার্বিকভাবে প্রমীলা ক্রিকেট সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদল। নারী ক্রিকেট সম্পর্কে মানুষের মধ্যে নতুন মনোভাব সৃষ্টির ক্ষেত্রে বিসিবি কী ভূমিকা গ্রহণ করে সেটাই এখন দেখার।

No comments

Powered by Blogger.