ডায়াবেটিস-প্রয়োজন স্বাস্থ্যসম্মত সুষম খাদ্য

ডায়াবেটিস চিকিৎসায় খাদ্য নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলার মাধ্যমে দুই তৃতীয়াংশ রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবখাদ্য ব্যবস্থা মানে কখনোই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং সব ব্যক্তিকে প্রয়োজনমতো স্বাস্থ্যসম্মত সুষম খাদ্য নিশ্চিত করাই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মূল লক্ষণ। সূষম খাদ্য হলো সেটাই যেখানে খাদ্যের বিভিন্ন উপাদান (শর্করা, আমিষ, চর্বি, আঁশ জাতীয় খাদ্য, ভিটামিন, খনিজ লবণ ইত্যাদি) পর্যাপ্ত বা প্রয়োজনীয় মাত্রায় থাকে।


শর্করা : শর্করা জাতীয় খাবারগুলোকে মূলত দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়।সরল শর্করা : চিনি, গ্গ্নুকোজ, কোমল পানীয়, জ্যাম, জ্যালি, মধু, মিষ্টান্ন, কেক, চকোলেট ইত্যাদি সরল শর্করা। এ ধরনের শর্করা খুব তাড়াতাড়ি পরিপাক ও শোষিত হয় বলে রক্তের গ্গ্নুকোজ হঠাৎ করে খুব বেশি বেড়ে যায়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এসব পরিহার করা ভালো।
জটিল শর্করা : ভাত, রুটি, আলু, চিড়া, মুড়ি, খৈ, ভুট্টা ইত্যাদি জটিল শর্করা, যা ধীরে ধীরে পরিপাক ও শোষিত হয় বলে রক্তের গ্গ্নুকোজ হঠাৎ করে খুব বেশি বেড়ে যায় না। তাই ডায়াবেটিক ব্যক্তির শর্করার উপাদান হিসেবে এগুলো গ্রহণ করা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। দৈনিক ক্যালরি চাহিদার ৫০-৬০% শর্করা থেকে নেওয়া ভালো।
আমিষ :ডায়াবেটিক ব্যক্তিদের অবশ্যই পর্যাপ্ত আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি প্রাণিজ আমিষ এবং ডাল, বাদাম ইত্যাদি উদ্ভিজ্জ আমিষ থেকে দৈনিক ক্যালরি চাহিদার ১০-২০% আসা ভালো।
চর্বি : চর্বি জাতীয় খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ করলে রক্তে চর্বির মাত্রার মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। মোট ক্যালরি চাহিদার ২৫-৩০% চর্বি থেকে আসা ভালো।
ভিটামিন : ভিটামিন স্বাস্থ্যের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় এবং সুষম খাদ্য তালিকায় অবশ্যই সব ধরনের ভিটামিন থাকা জরুরি। ভিটামিনগুলোর মধ্যে ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে চর্বিতে দ্রবণীয় অবস্থায় থাকে আর বি ও সি পানিতে দ্রবণীয়।
খনিজ লবণ : খনিজ লবণ শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন : হাড়, দাঁত, মাংসপেশি, স্নায়ুকোষ এবং রক্তে থাকে। এরা শরীর সুগঠিত করতে ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে জরুরি। তাছাড়া খনিজ লবণ হার্ট ও মস্তিষ্কের কার্যকর অবস্থা অটুট রাখার জন্য জরুরি।
আঁশ জাতীয় খাদ্য : প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ২০-৩৫ গ্রাম আঁশ গ্রহণ করা প্রয়োজন। খাদ্যে আঁশের প্রধান উৎস হলো তুষযুক্ত চাল, গম, ফল, শাকসবজি, ডাল ইত্যাদি। ডায়াবেটিক ব্যক্তির খাদ্য ব্যবস্থা ঠিক করার সময় তার পুষ্টি অবস্থা নির্ণয় করা জরুরি, যা আদর্শ খাদ্য ব্যবস্থা নির্ধারণে সহায়তা করবে। প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয় মোট ক্যালরি ৩টি মূল খাবার, যেমন_ সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার, রাতের খাবার এবং ২-৩টি টিফিন (মধ্য-সকাল, বিকেল ও শোবার আগে) হিসেবে ভাগ করে দেওয়া ভালো। অর্থাৎ একবারে একসঙ্গে বেশি খাবার না খেয়ে ৩-৪ ঘণ্টা পরপর অল্প করে খাবার গ্রহণ করা অনেক বেশি ভালো।
ফোরজানা আনজিন
নিউট্রিশন অফিসার, ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াবেটিক কেয়ার অ্যান্ড এডুকেশন সেন্টার, ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার নেটওয়ার্ক, ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.