নতুন কম্পানি আইন আসছে-শেয়ার কিনতে পারবেন না মনোনীত পরিচালকরা by আবুল কাশেম

ম্পানি আইন ১৯৯৪ সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন এই আইনের খসড়া তৈরির দায়িত্ব পেয়েছে বিদেশি সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)। জানা গেছে, খসড়ায় মনোনীত পরিচালকদের শেয়ার কেনার অযোগ্য ঘোষণা করা হচ্ছে। একক মালিকানাধীন বা পাবলিক লিমিটেড কম্পানির জন্য এজিএম না করার বিধান থাকছে। এ আইনে আদালতের সম্পৃক্ততা যতটা সম্ভব কমানো হবে। আরো বেশি ক্ষমতা দেওয়া হবে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কম্পানিজ ও ফার্মকে।


এ ছাড়া খসড়ায় একক মালিকানাধীন কম্পানিকে এ আইনের আওতায় আনা, আদালতের অনুমতি ছাড়া শেয়ার কমানোর সুযোগ রাখা, পরিচালকদের দায়িত্ব নির্দিষ্টকরণ, অনুমোদিত মূলধনের সুযোগ না রাখা, লভ্যাংশ পরিশোধে বিধি-নিষেধ আরোপ, কোনো ধরনের আপত্তি না জানানোর বিধান রাখা ও বিকল্প পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রও স্পষ্ট করা হচ্ছে। নতুন কম্পানি আইনের খসড়া তৈরির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা আইএফসি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করে খসড়া আইনে এসব বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)-এর সহায়তায় বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ফান্ড এ আইনের খসড়া তৈরি করছে। এ জন্য কম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার তানজিব-উল আলমকে প্রধান কনসালটেন্ট নিয়োগ করেছে সংস্থাটি। এর বাইরে কানাডার সংশ্লিষ্ট একটি প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ৯ বছর কাজ করা রিচার্ড শ'সহ দেশি-বিদেশি আরো কয়েকজন কনসালটেন্ট কাজ করছেন।
সম্প্রতি আইএফসি ও কনসালটেন্টরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে কম্পানি খসড়া প্রণয়নের অগ্রগতি জানান। তাতে বলা হয়েছে, নতুন কম্পানি আইনের খসড়া তৈরির কাজ তাঁরা শুরু করেছেন। এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, আইসিএসবি, আইসিএবি, এসএমইএফ ও সিসিসিআইয়ের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে আইএফসি। শিগগিরই বিএবি, এবিবি, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশনের সঙ্গেও মতবিনিময় সভায় বসবেন তাঁরা। নতুন কম্পানি আইনের খসড়া তৈরির ক্ষেত্রে আইএফসির নিয়োগ দেওয়া কনসালটেন্টরা ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার কম্পানি আইন বিশ্লেষণ করছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আইএফসি জানিয়েছে, মতবিনিময় সভাগুলোয় ব্যবসায়ীরা নেতারা, বাংলাদেশে ব্যবসা-বিনিয়োগ সহায়ক একটি কম্পানি আইন প্রত্যাশা করেছেন। তাঁরা আপত্তি জানানোর অনুচ্ছেদ পুরোপুরি প্রত্যাহার না করার অনুরোধ করেছেন। বাণিজ্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা আদালতের সম্পৃক্ততা যতটা সম্ভব কমানো ও রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কম্পানিজ ও ফার্মকে আরো বেশি ক্ষমতা দেওয়া, পরিচালকদের দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। এ ছাড়া এ আইনের মাধ্যমে যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য করা সহজতর হয় ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠা পায়, তার ওপরও গুরুত্ব দেন তাঁরা।
বাণিজ্যসচিব মো. গোলাম হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, কম্পানি আইনের খসড়া তৈরির কাজ করছে ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)। সংস্থাটির সহায়তায় কনসালটেন্টরা আমাদের জানান, খসড়া আইন তৈরিতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা ও মতবিনিময়ের ৭০ শতাংশ কাজ তাঁরা সম্পন্ন করেছেন। তবে আমার মতে, প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ তাঁরা করেছেন। কারণ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় করলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, আইনজীবী, শিক্ষাবিদদের সুপারিশ নেওয়া হয়নি। তাঁদের সুপারিশ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সচিব জানান, খসড়াটি আগামী ডিসেম্বর মাসের শেষ নাগাদ মন্ত্রণালয়ের কাজে জমা দেওয়ার কথা। তারপর তা পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে। খসড়া আইনে ৪২৬টা অনুচ্ছেদ থাকছে।
কম্পানি আইনের খসড়া তৈরির জন্য আইএফসি বাংলাদেশের কম্পানি আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার তানজিব-উল আলমকে প্রধান কনসালটেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি আরো কিছু কনসালটেন্ট ব্যারিস্টার তানজিবের সহায়তাকারী ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। কালের কণ্ঠের সঙ্গে আলাপকালে ব্যারিস্টার তানজীব-উল আলম জানান, এখন ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক বেশি সম্প্রসারিত হয়েছে। আর শেয়ারবাজারও কম্পানি আইনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিদ্যমান কম্পানি আইন ১৯৯৪ এসব বিষয় সামাল দিতে পারছে না। তাই নতুন আইনে ব্যবসা-বিনিয়োগ ও বাণিজ্যকে সহজতর করাসহ সম্প্রসারিত নতুন নতুন ব্যবসাকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, গত জুলাই মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ছয় মাস সময় দিয়ে আইএফসিকে খসড়া তৈরির দায়িত্ব দেয়। কম্পানি আইনের মতো বিশাল একটি কর্মযজ্ঞ সুষ্ঠুভাবে তৈরির জন্য এটি কম সময়। তার পরও আমরা চেষ্টা করছি। আশা করি, ডিসেম্বর মাসের শেষ নাগাদ আইনটির খসড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দিতে পারব।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কম্পানি আইনের খসড়া চূড়ান্ত করার জন্য বাণিজ্যসচিব মো. গোলাম হোসেনের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। খসড়াটি ওই কমিটি পর্যালোচনা করে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধনের পর চূড়ান্ত করবে। বর্তমান সরকারের মেয়াদকালেই এটি জাতীয় সংসদে উত্থাপনের মাধ্যমে আইনে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

No comments

Powered by Blogger.