শীতে সুস্থ থাকুন

ত্তরাঞ্চলে শীত পড়েছে অনেক আগেই। দেশের অন্যান্য এলাকায়ও শীত পড়তে শুরু করেছে। কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা। সপ্তাহ দুই-একের মধ্যে তা জেঁকে বসবে। শীতে শরীর ফিট রাখতে হলে প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। মেনে চলতে হবে পুরো শীতের সময়।শীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। শুষ্ক আবহাওয়া ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে সহায়তা করে। আর্দ্রতা কমে যায় বলে শ্বাসনালির স্বাভাবিক কর্মপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।


ফলে ভাইরাস সহজেই আক্রমণ করে। দেখা দেয় ইনফ্লুয়েঞ্জা ও সর্দি-কাশি। এ ছাড়া ধুলাবালির পরিমাণ বেড়ে যায়। ঠাণ্ডা, শুষ্ক আবহাওয়া ও ধুলাবালি শ্বাসনালিকে সংকুচিত করে শ্বাসকষ্ট বাড়ায়। বাড়ায় হাঁপানির টান। এ ছাড়া বাড়ে সাইনুসাইটিস, কানের ইনফেকশন, টনসিলাইটিস। ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। পায়ের গোড়ালি ফেটে যায়। মাথায় খুশকির উপদ্রব বাড়ে। ত্বকে দেখা দেয় বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ। হাড়ের রোগ যেমন রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা বাতের ব্যথা প্রকট আকার ধারণ করে।
প্রথমেই আসা যাক সর্দি-কাশি প্রসঙ্গে। ঠাণ্ডাজনিত সর্দি-কাশিতে জ্বর জ্বর ভাব বা জ্বর থাকে, শরীর ম্যাজম্যাজ করে, নাক দিয়ে পানি ঝরে, নাক বন্ধ থাকে, মাংসপেশিতে ব্যথা থাকে, গলায় থাকে খুশখুশ ভাব বা ব্যথা এবং থাকে হাঁচি ও শুকনা কাশি। সাধারণত ভাইরাসের সংক্রমণে এটি হয়ে থাকে। ৫-১০ দিন পর আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায়। তবে শুকনো কাশি অনেকদিন পর্যন্ত থাকতে পারে।
সর্দি-কাশি প্রতিরোধে হাঁচি-কাশি এলে টিস্যু বা রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে নিন। ব্যবহৃত টিস্যু যেখানে সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন। হাঁচি-কাশির পর সাবান-পানি দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলুন। হাত না ধুয়ে চোখ, নাক, মুখ স্পর্শ করবেন না। বাইরে থেকে এসে হাত-মুখ ভালো করে পরিষ্কার করুন। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকুন। কারও সঙ্গে কথা বলার সময় কমপক্ষে এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখুন। যদি সর্দি-কাশি হয়েই যায় তাহলে কুসুম গরম পানির সঙ্গে লেবু, মধু মিশিয়ে পান করুন। তুলসী পাতার রস ও কালিজিরা রোগের উপসর্গ কমাতে পারে। শুকনো কাশি বেশিদিন থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করুন।
ময়েশ্চারাইজার ত্বককে শুষ্কতর হাত থেকে রক্ষা করে কোমল ও মসৃণ রাখে। ত্বকে তেল দিলেও চলে, তবে অলিভ অয়েল ভালো। ময়েশ্চারাইজার বা তেল গোসলের পর শরীর ভালো করে শুকিয়ে মাখতে হবে, গোসলের আগে নয়। শীতকালে ত্বকে অল্প সাবান ব্যবহার করা উচিত। কারণ শীতকালে এমনিতেই ত্বক শুষ্ক থাকে। সাবান ব্যবহারের ফলে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমে গিয়ে আরও শুষ্ক হয়ে পড়ে। শীতের শুরু থেকেই রাতে ঘুমানোর আগে ত্বকে নিয়মিত অলিভ অয়েল ম্যাসেজ করে নিলে ত্বক থাকবে মসৃণ ও নমনীয়।
বাইরে বেরোলে গরম কাপড় পরিধান করুন। মাথা ও কান ভালো করে মাফলারে ঢেকে নিন। শীতকালের শাকসবজি বেশি করে খান। মাঝে মধ্যে কুসুম গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করুন। কুসুম গরম পানি, চা-কফি পান করতে পারেন। ঠাণ্ডা খাবার ও পানীয় বাদ দিন। ঘরে আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করুন। ঘরের মধ্যে বসে না থেকে ব্যায়াম, হাঁটাচলা করুন। ধুলাবালি এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করুন। হাঁপানি ও দীর্ঘদিনের শ্বাসকষ্টে আক্রান্তরা শীতের শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শমতো ইনহেলার বা অন্যান্য ওষুধ সেবন করুন। প্রয়োজনে ইনফ্লুয়েঞ্জার টিকা নিন। শীতে বৃদ্ধরা বেশি কাবু হয়ে পড়েন। তাদের যেন ঠাণ্ডা না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এ সময়ের ঠাণ্ডা থেকে হতে পারে প্রাণহারী নিউমোনিয়া।
ডো. হুমায়ুন কবীর হিমু

No comments

Powered by Blogger.