আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে শেখ হাসিনা-যুদ্ধাপরাধী দুর্নীতিবাজ ও লুটপাটকারীদের রক্ষায় মাঠে নেমেছেন খালেদা জিয়া

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো রাখঢাক ছাড়াই যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া প্রকাশ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় তার অবস্থান স্পষ্ট হয়ে গেছে। দুর্নীতিবাজ ও লুটপাটকারীদের বাঁচাতে চাইছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সরকারের অঙ্গীকার পূরণে নারীদের সহযোগিতা কামনা করেন। শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।


জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নতুন পাঁচ সদস্যপদে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু করেছে সরকার। বিরোধী দল তাদের রক্ষায় মাঠে নেমেছে; কিন্তু সরকার এ বিচার কাজ শেষ করবেই।
শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরে হত্যা, লুটপাট, অগি্নসংযোগ ও ধর্ষণকারী মানবতাবিরোধী অপরাধীদের রক্ষায় বিরোধী দলের নেতা মাঠে নামবেন_ এটাই স্বাভাবিক। তার স্বামী জিয়াউর রহমান '৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে স্বাধীনতাবিরোধীদের পুনর্বাসন করেন। রাজাকারকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বানান। সাত খুনের আসামিকে ছেড়ে দেন। খালেদা জিয়া এখন একই কাজ করছেন। আগে কিছুটা রাখঢাক করলেও এখন আর তা নেই। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলের বিবরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময় হত্যা, সন্ত্রাস, লুটপাট ছিল প্রতিদিনের ব্যাপার। বাংলাভাই, জঙ্গিবাদ তাদেরই সৃষ্টি। বিরোধী দলের নেতাকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারি কোষাগার থেকে টাকা নিয়ে ছেলেদের কী শিক্ষা দিয়েছেন? দুর্নীতি, লুটপাট, বিদেশে টাকা পাচার_ এসব শিক্ষা দিয়েছেন। এফবিআই সদস্যরা এ দেশে এসে আপনার ছেলেদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু হতে পারে না।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটনে
কাজ করছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের নারীসমাজকে সরকারের লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে আসতে হবে। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক শুরু হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ ও ওবায়দুল কাদের। বিশেষ আমন্ত্রণে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুল মান্নান খান।
মাত্র পাঁচটি আসনের বিপরীতে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা ১৭৯ হওয়ায় সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের পরিবর্তে একেক করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী গণভবনের ব্যাঙ্কুয়েট হলে এসে অপেক্ষমাণ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নিয়ে বসেন। সেখানে সৈয়দ আশরাফ মনোনয়নপত্র জমা দানকারী ১৭৯ প্রার্থীর সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী প্রার্র্থীদের উদ্দেশে বক্তৃতা দেওয়ার পর আবার সংসদীয় বোর্ডের রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। এ রিপোর্ট লেখার সময় রাতে এ বৈঠক চলছিল। পরে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের গণভবনে নৈশভোজে আপ্যায়িত করা হয়।
এর আগে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। মাত্র পাঁচটি আসনের জন্য ১৭৯ জন আবেদন করেছেন। এটা দেখে মনে হচ্ছে, জাতীয় সংসদে আগামীতে সমানে সমান নারী-পুরুষ সদস্য পাওয়া যাবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে স্থানীয় সরকারে নারীদের জন্য সংরক্ষিত সদস্যপদ রাখার বিধান করা হয়েছিল। ভবিষ্যতে সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন বৃদ্ধি ও প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মাত্র ৫টি আসনের জন্য এত নারীর আগ্রহই প্রমাণ করে, আমরা নারী উন্নয়নে কাজ করছি। যার ফলে নারী জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে।
শেখ হাসিনা সবাইকে সংগঠনের জন্য কাজ করা ও সরকারের সফলতাগুলো মানুষের মধ্যে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা মনোনয়ন পেতে আগ্রহী, আবেদন করেছেন, আপনারা প্রত্যেকেই যোগ্য ও দক্ষ। দলে আপনাদের অবদান রয়েছে। তাদের ভেতর থেকে মনোনয়ন দেওয়া কঠিন কাজ। তবে যারা দলের রাজনীতিতে আন্দোলন-সংগ্রামে অবদান রেখেছেন ও বিভিন্ন দিক থেকে যোগ্য, বিশেষ করে ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সময়ে যারা মাঠে ছিলেন সার্বিক বিবেচনায় আমরা এ ধরনের পাঁচজনকে মনোনয়ন দেব।
সূচনা বক্তব্যে সৈয়দ আশরাফ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আগামীতে সরাসরি নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে। নারীরা অধিক সংখ্যায় নির্বাচনে অংশ নেবেন।

No comments

Powered by Blogger.