কিডনি পাচার মামলার তদন্ত-কর্মকর্তাকে হঠাৎ বদলি

য়পুরহাটে কিডনি পাচার মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বদলির নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম এখনো মাঝপথে। এ অবস্থায় এই বদলির নির্দেশে বিস্ময় প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। তাদের আশঙ্কা, কিডনি পাচারচক্রের হোতাদের আড়াল করতেই প্রভাবশালী মহলের ইন্ধনে তদন্ত কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে।কিডনি পাচার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালাই থানার ওসি ফজলুল করিমের বদলির নির্দেশ এসেছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে। গত ১২ অক্টোবর ফ্যাঙ্যোগে এই বদলির আদেশ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আসে। কিন্তু এতে জেলার নাম ভুল থাকায় তা সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত পাঠানো হয়েছে।


বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হক।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১২ অক্টোবর পাঠানো বদলি আদেশটি পুলিশ হেডকোয়ার্টারের সংস্থাপন এআইজি ১৯ সেপ্টেম্বর ইস্যু করলেও সেখানে দুই জায়গায় প্রশাসন বিভাগের অতিরিক্ত আইজিপির স্বাক্ষরে তারিখ রয়েছে ২০ আগস্ট। জনস্বার্থে বদলির কথা উল্লেখ করে সেখানে জেলার নাম জয়পুরহাটের জায়গায় লেখা হয়েছে রাজশাহী। ২০ আগস্ট স্বাক্ষর করা প্রত্যাহার আদেশ ১৯ সেপ্টেম্বর ইস্যুর পর ১২ অক্টোবর জয়পুরহাটে ফ্যাঙ্যোগে পাঠানোয় বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্র জানায়, দারিদ্র্য আর সরলতার সুযোগ নিয়ে একটি দালালচক্র জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ১৫ গ্রামের অর্ধশতাধিক মানুষকে কিডনি বিক্রিতে প্রলুব্ধ করে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। গোপনে এ খবর জানার পর গত ২৮ আগস্ট ওসি ফজলুল করিম কিডনি পাচারচক্রের স্থানীয় তিন দালালকে গ্রেপ্তার করেন। পরদিন থানার উপপরিদর্শক নৃপেন্দ্রনাথ ঘোষ বাদী হয়ে মামলা করেন। এরপর দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ এই চক্রের হোতাসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে ছয় আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এতে বেরিয়ে আসে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত দেশের স্বনামধন্য বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও কয়েকটি নামকরা হাসপাতালের নাম, যাদের নেটওয়ার্ক দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও বিস্তৃত। এসব ঘটনা গণমাধ্যমে প্রচারের পর হৈচৈ পড়ে যায় সারা দেশে।
একাধিক সূত্রের অভিযোগ, গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি ফজলুল করিম তদন্ত শুরু করলে পাচারচক্রে সংশ্লিষ্ট রাজধানীর ওই সব চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় নিজেদের বাঁচাতে তারা তৎপরতা শুরু করে। এর ফলেই তদন্তের মাঝপথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বদলির নির্দেশ।
কালাই থানার মাত্রাই ইউনিয়নে কিডনি পাচারচক্রের বেশি তৎপরতা ছিল। স্থানীয় চেয়ারম্যান আ ন ম শওকত হাবিব তালুকদার লজিক বলেন, তদন্ত সমাপ্ত হওয়ার আগেই কর্মকর্তা বদলির বিষয়টি সাধারণ মানুষ সন্দেহের চোখে দেখছে। তিনি মামলার ভবিষ্যৎ নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন। পাশের উদয়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম টুকু বলেন, তদন্ত শেষ না হতেই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে বদলির ঘটনায় মামলাটি বাধাগ্রস্ত হবে।
ওসি ফজলুল করিম বলেন, ২৯ আগস্ট এ মামলা দায়েরের পর এ পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ছয়জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। তিনি দাবি করেন, মামলার তদন্ত কাজ ৮০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয়েছে। বদলির বিষয়ে মন্তব্য না করে তিনি বলেন, এখানে রাখা না রাখার এখতিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের।
কিডনি পাচারে জড়িত রাঘব বোয়ালদের বাঁচাতেই ওসি ফজলুল করিমকে বদলি করা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, কিডনি পাচার মামলার সঙ্গে এর যোগসূত্র নেই। জনস্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁকে বদলির আদেশ পাঠিয়েছে। আদেশ আসামাত্রই তাঁকে প্রত্যাহার করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.