আজ বগুড়ায় কাল চাঁপাইয়ে জনসভা

সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আজ মঙ্গলবার ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে রোডমার্চ শুরু হচ্ছে। এই কর্মসূচির আওতায় আজ বিকেলে বগুড়ার আলতাফুননেসা মাঠে এবং কাল চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন এ দুটি জনসভা এবং পাঁচটি পথসভায় বক্তব্য দেবেন। রোডমার্চে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি জনসভায় বক্তব্য দেবেন চারদলীয় জোটের শরিক ও সমমনা দলের নেতারা। গত নির্বাচনের পর এই প্রথম খালেদা জিয়া বগুড়ায় যাচ্ছেন। রাজশাহী বিভাগের এই রোডমার্চ সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে বিএনপি।


এদিকে রোডমার্চ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, 'প্রধানমন্ত্রী নিজেও গাড়িতে চড়ে একসময় রোডমার্চ করেছেন। তাঁরা যখন কোনো কাজ করেন তখন অন্যায় হয় না। জামায়াতকে নিয়েও তাঁরা আন্দোলন করলেন, তখন যুদ্ধাপরাধী বলেননি। জামায়াত যখন আমাদের সঙ্গে আসে তখন যুদ্ধাপরাধী হয়ে যায়!' আজ ও আগামীকালের অনুষ্ঠেয় রোডমার্চেও তিন হাজারের ওপরে গাড়ি থাকবে বলে মন্তব্য করেন নজরুল ইসলাম খান।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরা থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে রোডমার্চ কর্মসূচি। এর আগে সকাল ১০টার দিকে গুলশানের বাসভবন থেকে খালেদা জিয়া রোডমার্চের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন। বিএনপি নেত্রী গুলশান থেকে বনানী, স্টাফ রোড, জিয়া কলোনি, বিশ্বরোড, এয়ারপোর্ট, উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুর, কালিয়াকৈর বাইপাস রোড, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ হয়ে বগুড়ায় যাবেন। বগুড়ায় জনসভা শেষে এখানেই তিনি রাত যাপন করবেন। পরদিন বুধবার বগুড়া থেকে নওগাঁ হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে যাবে রোডমার্চ। চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনসভা শেষে রাতেই রাজশাহী ও নাটোর হয়ে ঢাকা অভিমুখে রওনা হবেন খালেদা জিয়া।
এদিকে গতকাল সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'সিলেটের রোডমার্চে পুলিশ সহযোগিতা করেছে। তাদেরকে আমরা ধন্যবাদ জানিয়েছি। উত্তরাঞ্চলের রোডমার্চ শেষেও তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।' তিনি অভিযোগ করেন, সিরাজগঞ্জের উল্লাহপাড়া থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল সরকারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাঁকে আদালত টাউন জামিন দিয়েছেন। অর্থাৎ সিরাজগঞ্জের পথসভায় তিনি আসতে পারবেন না। উত্তরা থানা এলাকায় লাগানো ব্যানার ফেস্টুন পুলিশ খুলে নিচ্ছে। গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের আচরণ অন্যায়। আশা করব, সরকার এই আচরণ থেকে ফিরে আসবে।' তিনি বলেন, রোডমার্চ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় উত্তরা থেকে শুরু হবে। উত্তরা হাউজ বিল্ডিং থেকে চেয়ারপারসনের গাড়িবহর অতিক্রম করার পরই সিরিয়াল মেনে গাড়ি এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, টঙ্গী, গাজীপুর চৌরাস্তা পার হয়ে কালিয়াকৈরে প্রথম পথসভা হবে। দ্বিতীয় পথসভা হবে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের যমুনা সেতুর পূর্ব স্টেশনের পাশের মাঠে। তৃতীয় পথসভা হবে সিরাজগঞ্জের এরিস্টোক্র্যাট হোটেলের সামনের মাঠে। সেখান থেকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর সরাসরি বগুড়া শহরে চলে যাবে। বগুড়া আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে বিকেল ৩টায় জনসভা হবে। জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়া। অন্যদের মধ্যে চারদলীয় ঐক্যজোট ও বিএনপির সিনিয়র নেতারাও এতে বক্তব্য দেবেন।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে জনসভা শেষে রাতে বগুড়ায় অবস্থান করে পরের দিন বুধবার সকালে রোডমার্চ চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা হবে। সকাল ১১টায় নওগাঁ এটিএম হাই স্কুল মাঠে একটি পথসভা করে সরাসরি চাঁপাইনবাবগঞ্জ চলে যাবেন খালেদা জিয়া। বিকেল ৩টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজমাঠে জনসভা হবে। রাতে সরাসরি নাটোর, রাজশাহী হয়ে ঢাকায় ফিরবেন খালেদা জিয়া।
নজরুল ইসলাম খান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন, নাকি গাড়ির মধ্যে থাকা মানুষের বিরুদ্ধে? যদি গাড়িতে থাকা মানুষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চান তাহলে বলব, গাড়ির ভেতরে যাঁরা থাকেন তাঁরা তো বিএনপির কর্মী। তাঁরা তো অন্য কেউ না যে তাঁদেরকে চেনা যায় না।' অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'যাঁরা প্রতিদিন দামি গাড়ি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আর সচিবালয়ে যান, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী কী ব্যবস্থা নেবেন?'
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবদুস সালাম, হাবিব-উন নবী খান সোহেল, নুরী আরা সাফা, শিরিন সুলতানা প্রমুখ।
টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, আজ মঙ্গলবার টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাশে পথসভায় বক্তব্য দেবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ উপলক্ষে মির্জাপুরের গোড়াই থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের উভয় পাশের বিভিন্ন স্থানে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে অসংখ্য পোস্টার, প্ল্যাকার্ড। সভার সব প্রস্তুতি শেষ বলে দলের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম তোফা জানান। গতকাল সোমবার সকালে দলের পক্ষ থেকে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বলেন, রোডমার্চ সফল করতে সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, সহসভাপতি লুৎফর রহমান মতিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ এতে উপস্থিত ছিলেন।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উত্তরবঙ্গমুখী রোডমার্চের অংশ হিসেবে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে পথসভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করলেও তা ভঙ্গ করে কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি তাৎক্ষণিকভাবে সড়ক অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা করা হবে। গতকাল সোমবার দুপুরে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে জেলা বিএনপি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, রোডমার্চ সমন্বয় কমিটির সদস্য, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও জেলা বিএনপির সভাপতি ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম মোকাদ্দেস আলী, সদর থানা বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান লেবু, আজিজুর রহমান দুলাল, সাইদুর রহমান বাচ্চু, হারুন-অর রশিদ খান হাসান প্রমুখ।
বগুড়া : বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, রোডমার্চে বগুড়া বিএনপি প্রস্তুত থাকলেও প্রস্তুত নয় বগুড়া শহর। ২৫ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে ছয় লাখ মানুষের সমাবেশ ঘটানোর ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বগুড়ায় রোডমার্চের ওই জনসভার ভেন্যু নিয়ে তাই উদ্বিগ্ন প্রশাসন। বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, আজ মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার জনসভার মঞ্চ তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। মাঠের বাইরে আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠকে ঘিরে বগুড়া জিরো পয়েন্ট সাতমাথা অর্থাৎ সাতটি রাস্তার মিলনস্থল, কালিবাড়ী, জজকোর্ট, সার্কিট হাউস এলাকা, জিলা স্কুল ও ইয়াকুবিয়া গার্লস স্কুলের সামনে ছয়টি বড় পর্দার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া এক কিলোমিটার পর্যন্ত ১৫০টি মাইক স্থাপন করা হয়েছে। বগুড়া পৌরসভার মেয়র এবং জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান নিজেও হতাশ। তিনি বলেন, কয়েক লাখ মানুষ মাত্র ২৫ হাজার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন মাঠে কিভাবে অবস্থান নেবেন?
বগুড়া পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয়সংখ্যক পুলিশ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে নিরাপত্তার জন্য র‌্যাবও থাকবে। মাঠের বাইরে রাস্তা বন্ধ করে যাতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখা হবে। বগুড়া জেলা প্রশাসক ইফতেখারুল ইসলাম খান জানান, বিএনপি নেতাদের বলা হয়েছিল শহরের মধ্যে জনসভা না করে সুলতানগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে তা করার, কিন্তু তারা তা শোনেনি।
রাজশাহী অফিস : রাজশাহীতে রোডমার্চ সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। রোডমার্চ উপলক্ষে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সমর্থকদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। আগামীকাল বুধবারের রোডমার্চের জন্য রাজশাহী নগরীকে সাজানো হয়েছে নানা সাজে। নওগাঁ এবং রোডমার্চের প্রবেশদ্বার রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া আমচত্বর থেকে শুরু করে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে শুভেচ্ছা তোরণ। মহানগরীর সব থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রচার মিছিল, গণসংযোগ, পথসভা ও মাইকিং করা হচ্ছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও প্রধান প্রধান সড়কে ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হচ্ছে। রোডমার্চ সফল করতে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের দিয়ে গঠন করা হয়েছে বিভিন্ন কমিটি ও উপকমিটি। গতকাল সোমবার রাজশাহী মহানগর বিএনপি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান মিনু জানান, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে রোডমার্চ আজ মঙ্গলবার ঢাকা থেকে বগুড়ায় গিয়ে জনসভায় মিলিত হবে। বুধবার রোডমার্চ বগুড়া থেকে রওনা দিয়ে নওগাঁয় জনসভা করার পর মোহনপুর, নওহাটা হয়ে রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া আমচত্বরে এসে পেঁৗছাবে। সেখানে খালেদা জিয়াসহ দলীয় নেতা-কর্মীদের ফুল দিয়ে বরণ করবেন মহানগর বিএনপির নেতারা। এরপর রোডমার্চ গৌরহাঙ্গা রেলগেট মোড় ঘুরে সিটি বাইপাস রোড দিয়ে কাশিয়াডাঙ্গা হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে যাবে। সেখানে জনসমাবেশ শেষে রাজশাহী নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা, লক্ষ্মীপুর, সিঅ্যান্ডবি মোড় ও জিরো পয়েন্ট হয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন খালেদা জিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ছিলেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও শ্রমিকদল সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম দুলাল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মহানগর যুবদল আহ্বায়ক মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও মহিলা দল নেত্রী শহিদুন নাহার কাজি হেনা, সাবেক রাবি ভিসি প্রফেসর ফাইসুল ইসলাম ফারুকী, বাউবির সাবেক ভিসি প্রফেসর আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.