এবার চাপের মুখে ভেঙে পড়েনি দক্ষিণ আফ্রিকা

চাপের মুখে ভেঙে পড়ার অপবাদে 'চোকার' নামটা সেঁটে আছে দক্ষিণ আফ্রিকার গায়ে। মাঝে মাঝে চাপ জয়ের গল্প যে নেই তাও নয়। ২০০৬ সালেই যেমন জোহানেসবার্গে অস্ট্রেলিয়ার ৪৩৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল সিরিজের পঞ্চম ওয়ানডেটা। পরশু সেই জোহানেবসার্গে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় টোয়েন্টি টোয়েন্টি জিততে একটা পর্যায়ে করতে হতো তেমন কিছুই। কেননা অস্ট্রেলিয়ার ৮ উইকেটে ১৪৭ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৪.৪ ওভারে ৮৪ করতেই ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল হাশিম আমলার দল। জয়ের জন্য ৩২ বলে তখন দরকার ৬৪।


ক্রিজে দুই টেলএন্ডার রাস্টি থেরন এবং ওয়েন ওয়ালিদ পারনেল থাকায় সিরিজ জয়ের সুবাসই পাচ্ছিলেন ক্যামেরন হোয়াইট। কিন্তু হায়! এই দুজনের বীরত্বে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে জিতে যায় দক্ষিণ আফ্রিকাই, তাও আবার ৫ বল হাতে রেখে।
স্টিভ ও'কিফের করা ১৮তম ওভারে দুটি ছয় আর একটি বাউন্ডারি মেরেছিলেন থেরন। সেই ওভারে ১৮ রান আসায় শেষ ১২ বলে জয়ের লক্ষ্যটা কমে দাঁড়ায় ১৯-এ। কামিন্সের করা ১৯তম ওভারে থেরন-পারনেল ১৩ নেওয়ায় শেষ ওভারে দরকার পড়ে মাত্র ৬ রানের। ডেভিড হাসির করা সেই ওভারের প্রথম বল মিডউইকেট দিয়ে গ্যালারিতে পাঠিয়ে ৩ উইকেটের জয়ে সিরিজে ১-১ সমতা নিশ্চিত করেন থেরন। ম্যাচসেরা থেরন ১৬ বলে ৩ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৩০ আর পারনেল অপরাজিত থাকেন ১১ বলে ৩ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ২৯ রানে। টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে দুজনেরই কিন্তু এটা সেরা স্কোর!
বল হাতে ২৮ রানে ২ উইকেট নেওয়ার পর ক্যারিয়ারসেরা ইনিংসে দলকে জেতাতে পারায় ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন থেরন, 'কী বলব, ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। কোচিং স্টাফরা নেটে ব্যাটিংয়ে সাহায্য করেছেন আমাকে, এ জন্য তাঁদের ধন্যবাদ। কৃতিত্ব পাওনা পারনেলেরও। ওর ১১ বলে ২৯-এ চাপটা কমে গিয়েছিল অনেক। আমরা আশা ছাড়িনি শেষ পর্যন্ত।' দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক হাশিম আমলাও প্রশংসায় পঞ্চমুখ থেরন-পারনেলের, 'ওরা একই সঙ্গে ছিল বিধ্বংসী আবার হিসেবি। শট খেলার পাশাপাশি ইনিংসটাও টেনে নিয়ে গেছে দুজন। দলের প্রত্যেকে উপভোগ করেছে এই জয়টা।'
টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই কোনো রান না করে ফিরেছিলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। চ্যাম্পিয়নস লিগে জোড়া সেঞ্চুরির পর এটা তার জোড়া শূন্য! ওয়াটসন না থাকায় ওপেন করতে নামা উইকেটরক্ষক ম্যাথু ওয়েডও ১৩ বলে আউট হন ১০ করে। শুরুতে তাই রানের গতিটা বাড়েনি সেভাবে। তবে অধিনায়ক ক্যামেরন হোয়াইটের ২৬ বলে ৩৯, অভিষিক্ত মিচেল মার্শের ২১ বলে ৪ ছক্কায় ৩৬ আর তাঁর বড় ভাই শন মার্শের ২৩ বলে ২৬-এ ৮ উইকেটে ১৪৭ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। জবাবে আমলা (৪), ইনগ্রাম (৫), ডুমিনি (০) তেমন কিছু করতে না পারায় ১৮ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল প্রোটিয়ারা। স্মিথ (২২ বলে ২৪) ও বোথা (২৮ বলে ৩৪) প্রতিরোধ গড়লেও তাঁদের ফেরার পর দেখতে দেখতেই ৮৪ রানে ৭ উইকেটে পরিণত হয়েছিল তাঁরা। এরপরই থেরন-পারনেলের সেই ঝড়, যাতে লণ্ডভণ্ড অস্ট্রেলিয়ার সিরিজ জয়ের স্বপ্ন। তাই হোয়াইটের হতাশা, 'ম্যাচটা জেতা উচিত ছিল আমাদের কিন্তু শুরুর দাপটটা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারিনি আমরা। এই দলটা তারুণ্যনির্ভর। তাদের ভালো একটা অভিজ্ঞতা হলো এই ম্যাচে।' ক্রিকইনফো, এপিপি

No comments

Powered by Blogger.