নিজের শহরে কি ভাগ্য বদলাবে তামিমের?

মুম্বাইতে খেলা হলো, তো শচীন টেন্ডুলকারকে বরণ করে নেওয়ার জন্য চারদিকে সাজসাজ রব। কলকাতায় খেলা হলো তো বাঙালি বাবু সৌরভ গাঙ্গুলীর দাদাগিরি দেখার উন্মাদনায় উন্মুখ থাকতেন সবাই। দিলি্লতে বীরেন্দর শেবাগ কিংবা হায়দরাবাদে ভিভিএস লক্ষ্মণ এখনো পান তেমন ভিআইপি সম্মান। এগুলো যে তাঁদের ঘরের মাঠ। এসব স্টেডিয়ামের ঘাসেই যে তাঁদের ক্রিকেটীয় সত্তার নাড়ি পোঁতা।বাংলাদেশে তেমন কিছু হতে পারল কই! মুশফিকুর রহিমের বগুড়া কিংবা মাশরাফি বিন মর্তুজার খুলনা তো মাসুল দিচ্ছে বিসিবি কর্তাদের অকারণ আক্রোশের।


ওসব ভেন্যুতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আয়োজন এখন ডুমুরের ফুল। রইল বাকি চট্টগ্রাম। যেটি আগে ছিল আকরাম খান, মিনহাজুল আবেদীনদের স্পর্শধন্য। মাঝে আফতাব আহমেদ হয়ে এখন তা পুরোপুরি তামিম ইকবালের। যখনই সমুদ্রপারের শহরটিতে খেলা হয়, এই বাঁহাতিকে ঘিরে প্রত্যাশার পারদ উঠে যায় আকাশে। আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডের আগেও চিত্র্যটা ভিন্ন নয়। জ্বলে উঠতেই হবে তামিমকে। চট্টগ্রামের তামিমকে।
এমনিতে তামিমের ফর্ম খুব একটা সুবিধার না। জিম্বাবুয়েতে গিয়ে ব্রায়ান ভিটোরিকে 'অর্ডিনারি' হিসেবে অভিহিত করার পর থেকে তাঁর নিজের ব্যাটিংটাই হয়ে গেছে অর্ডিনারি। ৪, ৩, ৪৪, ৬১, ৪৫_জিম্বাবুয়ে পাঁচ ওয়ানডেতে এই ওপেনারের স্কোর। শেষ তিনটি ম্যাচে দুঃসময় কাটানোর ইঙ্গিত ছিল। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলতি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে মাত্র ২১ ও ১ রান করে তা দীর্ঘায়িত করলেন আরো। সেটি কি ঘরের মাঠে আজ দুঃসময়কে কবরচাপা দেওয়ার জন্যই?
মিরপুরে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৩৮ বলে ২১ রান করেছিলেন তামিম। ইনিংসে ছিল মাত্র দুটি বাউন্ডারি। ধুঁকে ধুঁকে ২১ করার পর দেবেন্দ্র বিশুকে প্রথম বলেই উপহার দিয়েছেন উইকেট। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলকে কাট করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হয়ে। দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় বলে শরীর থেকে অনেক দূরের বল তাড়া করতে নেমে ক্যাচ দিয়েছেন থার্ডম্যানে। আরেকবার উইকেট ছুড়ে আসা বলতে যা বোঝায় আর কী!
প্রথম দুই ম্যাচে তামিমকে মোটেও তামিমের মতো লাগেনি। বাংলাদেশও তাই পায়নি প্রত্যাশিত বিস্ফোরক সূচনা। প্রথম ওয়ানডের পর অধিনায়ক মুশফিকুর ঢাল হয়েছিলেন তামিমের। আর চট্টগ্রামে খেলা বলে এই ওপেনারের প্রেরণা হতে পারে ইতিহাস। নিজের চেনা এই মাঠে ৮ ওয়ানডেতে ২৭৪ রান করেছেন ৩৪.২৫ গড়ে। যাঁর মধ্যে জ্বলজ্বল করছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮২ এবং জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৯৫ রানের ইনিংস দুটো। পাঁচ টেস্টের ১০ ইনিংস মিলিয়েও করেছেন ঠিক ২৭৪ রান। ২৭.৪ গড়ের পারফরম্যান্সের মধ্যে ঔজ্জ্বল্য ছড়াচ্ছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৬ রানের বিস্ফোরক ইনিংসটি।
ঘরের মাঠে তামিমের কেবল সেঞ্চুরিটাই নেই। সেটি আজ হয়ে গেলে প্রথম দুই ম্যাচের বিবর্ণতা ঝেড়ে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথটাও আরো মসৃণ হয়। ঘরের মাঠে পরিচিত মুখদের সামনে তামিম কি তা পারবেন না?

No comments

Powered by Blogger.