হোয়াইট হাউসে মামদানির সঙ্গে বৈঠক কি ট্রাম্পের একটি কৌশল
হোয়াইট হাউসে মামদানিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যদিও গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প দাবি করেন, মামদানিই তাঁর সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন। হোয়াইট হাউসে স্থানীয় সময় বেলা তিনটায় এ বৈঠক হওয়ার কথা। বাংলাদেশের হিসাবে তখন সময় হয় দিবাগত রাত দুইটা। মেয়র নির্বাচনে মামদানির প্রতি ট্রাম্পের বারবার চড়াও হওয়ার কারণে এ বৈঠক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আগ্রহ রয়েছে।
প্রথমে দেখে নেওয়া যাক সাম্প্রতিক দিনগুলোয় কী কী সংকটের মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। তিনি হয়তো শুনেছেন যে এক দশক ধরে রিপাবলিকান পার্টির ওপর তাঁর প্রবল প্রভাব ফিকে হয়ে আসছে। কুখ্যাত যৌন নিপীড়ক জেফরি এপস্টেইন নিয়ে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। আর জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে সহানুভূতি দেখানোর চেষ্টা করে উল্টো হাস্যকর অবস্থার মুখে পড়েছেন।
তাই বোঝাই যাচ্ছিল—ক্রমেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা ট্রাম্প নতুন কোনো সংঘাতের কৌশল খুঁজবেন। তিনি পেয়েও গেছেন। সম্প্রতি একটি ভিডিওতে কয়েকজন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাকে সেনাসদস্যদের মনে করিয়ে দিতে দেখা যায় যে অবৈধ কোনো আদেশ মানার বাধ্যবাধকতা নেই তাঁদের। এ নিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ওই আইনপ্রণেতারা রাষ্ট্রদ্রোহমূলক আচরণ করেছেন, যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
এমন মন্তব্য নিয়ে এরই মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে ডেমোক্র্যাট শিবিরের সংঘাত শুরু হয়েছে। ওই ভিডিওতে থাকা ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা ক্রিসি হলাহ্যান বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথা বলেছেন। আর তা তিনি বলেছেন শুধু এ জন্য যে আমি এবং আরও কয়েকজন একটি ভিডিওতে আইন মানার কথা বলেছি।’
এখন কথা হচ্ছে, ট্রাম্প কেন এসব লড়াই পছন্দ করেন। স্বাভাবিক রাজনীতিতে এ ধরনের আচরণ একজনের রাজনৈতিক জীবন নষ্ট করে দিতে পারে। কিন্তু ট্রাম্প উল্টো এসব থেকে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যমগুলো ট্রাম্পের পক্ষে প্রচার শুরু করে। দলের রক্ষণশীল সমর্থকেরা তাঁর পক্ষে একত্র হয়। আর এটি সংকট থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে বড় সহায়তা করে।
ট্রাম্পের এই কৌশল নতুন নয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বিরুদ্ধে বর্ণবাদী প্রচারণা, সিনেটর জন ম্যাককেইনের যুদ্ধের রেকর্ড নিয়ে উপহাস কিংবা ২০২০ সালের নির্বাচনে জয়ের মিথ্যা দাবি—এসব ট্রাম্পকে জনপ্রিয় থাকতে সাহায্য করেছে। তবে এখন প্রশ্ন—যুক্তরাষ্ট্র যখন অর্থনৈতিক দুর্বলতার মুখে এবং ট্রাম্পের সমর্থন হ্রাস পাচ্ছে, তখন এই কৌশল কতটা কাজে লাগবে।
আজ হোয়াইট হাউসে মামদানির সঙ্গে বৈঠক ট্রাম্পের আরেকটি কৌশল। নিজের নানা ভুল থেকে নজর ঘোরাতে মামদানিকে তিনি একহাত নেবেন, এমন আশঙ্কা রয়েছে। দুজনই নিউইয়র্কের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়েছে উঠেছেন। তবে ট্রাম্পের বয়স ৭৯। তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা শেষের দিকে। অপর দিকে মামদানির বয়স মাত্র ৩৪। তিনি তরুণদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়।
ট্রাম্প মামদানির মাধ্যমে সব ডেমোক্র্যাটকে ‘চরমপন্থী’ রূপে দেখাতে চাচ্ছেন—বিশেষ করে আগামী বছরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে। ট্রাম্প মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট মেয়র’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। যদিও মামদানি কমিউনিস্ট নন। তিনি নিজেকে প্রকাশ্য গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। মামদানির নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
আজকের বৈঠক মামদানির জন্য বড় একটি পরীক্ষা। অতীতেও হোয়াইট হাউসে ডেকে নিয়ে অতিথিদের সবার সামনে চরম অপমান করতে দেখা গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। আজ মামদানির জন্য সবচেয়ে জরুরি বিষয়টি ছিল এটা প্রমাণ করা যে তিনি ট্রাম্পের সামনে দাঁড়াতে সক্ষম এবং নিউইয়র্কের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সংঘর্ষ মোকাবিলা করতে পারবেন।
![]() |
| মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নিউইয়র্ক শহরের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি (ডানে) ছবি: এএফপি |

No comments