'খালেদা জিয়ার হার্ট ও ফুসফুসে ইনফেকশন হয়েছে'
রোববার রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সাংবাদিকদের তিনি একথা জানান।
এফএম সিদ্দিকী বলেন, গত কয়েক মাস ধরেই উনি খুব ঘন ঘন আক্রান্ত হচ্ছিলেন। আজকে আমরা যে কারণে এখানে (এভারকেয়ার হাসপাতালে) ভর্তি করিয়েছি- সেটা হচ্ছে যে, উনার কতগুলো সমস্যা একসাথে দেখা দিয়েছে। সেটা হচ্ছে, উনার চেস্টে ইনফেকশন হয়েছে।
তিনি বলেন, যেহেতু উনার হার্টের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। উনার হার্টে পারমানেন্ট পেসমেকার আছে এবং হার্টে উনার স্ট্যান্ডিং করা হয়েছিল, রিং পড়ানো হয়েছিল, তারপরেও উনার মাইট্রোস্টেনোসিস নামে একটা কন্ডিশন আছে- সেজন্য চেস্টে হওয়াতে উনার একসাথে হার্ট এবং ফুসফুস দুটোই এ্যাট এ টাইম আক্রান্ত হওয়াতে উনার খুব রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস হচ্ছিল। সেজন্য এখানে আমরা খুব দ্রুত ওনাকে নিয়ে এসেছি।
খালেদা জিয়া ২৪ ঘন্টার নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন জানিয়ে এফএম সিদ্দিকী বলেন, হাসপাতালে আনার পর আমরা খুব তাৎক্ষণিকভাবে দ্রুত যে পরীক্ষাগুলো করা দরকার তা করেছি। আমরা প্রাথমিক যে রিপোর্ট পেয়েছি, সে অনুযায়ী মেডিকেল বোর্ডের সবাই বসে আমরা প্রাথমিকভাবে উনাকে এন্টিবায়োটিক দিয়েছি, উনাকে যেভাবে প্রাথমিক দ্রুত এবং জরুরি চিকিৎসা দেয়ার দরকার হয়, সেটা দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আশা করছি যে, ২৪ ঘন্টার মধ্যে আরো কিছু রিপোর্ট আসবে। উনি আমাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন এবং আমি আমরা মনে করছি যে, নেক্সট ১২ ঘন্টার উনার পরবর্তী পরিস্থিতি কী হয় সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে উনি আমাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা এবং আমরা যেটাকে খুব ভালোভাবে বলি, খুব ইন্টেন্সিভভাবে আমাদের মনিটরিং এর মধ্যে আছেন। কেবিনেই আছেন উনি।
অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেন, মেডিকেল বোর্ডের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ম্যাডামের চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা ডেফিনেটলি সুচিকিৎসার ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে এবং সর্বোচ্চ সর্তকতা অবলম্বন করে নিবিড়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অত্যন্ত উৎকন্ঠিত কোনো বিষয় আমরা মনে করছি না।
তিনি বলেন, আমরা মনে করছি, উনার চিকিৎসাটা যদি এখন যেভাবে শুরু হয়েছে তাহলে আগামী ১২ ঘন্টার পর মেডিকেল বোর্ড আবার বসবেন। বসার পর পরবর্তী উনার স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর পর্যবেক্ষণ করে কি ধরনের চিকিৎসার পরিবর্তন আনা যায় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা বোর্ড নেবেন।
ডা. জাহিদ জানান, গতকাল ভোর রাত থেকে লন্ডন থেকে তারেক রহমান ও উনার সহধর্মিনী জুবাইদা রহমান তাদের ‘আম্মু’র ব্যাপারে সর্বাক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। এছাড়া ম্যাডামের ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর সহধর্মিনী সৈয়দা শর্মিলা রহমান এখানেই আছেন, উনাদের আত্বীয়-স্বজনরা ম্যাডামের চিকিৎসার ব্যাপারে সবসময় সহযোগিতা ও খোঁজ-খবর রাখছেন।
তিনি জানান. ম্যাডাম আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন। যেমনি অতীতেও ম্যাডামের জন্য দোয়া করেছেন দেশবাসী।
রাত ৮টায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধায়নে আছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে হাসপাতালে নেয়ার পরপর বেশ কিছু টেস্ট করা হয়। এরপর অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকাদারের সভাপতিত্বে মেডিকেল বোর্ড বৈঠকে বসে। এই বৈঠকে অধ্যাপক এফএস সিদ্দিকী, ডা. জাফর ইকবাল, ডা. জিয়াউল হক, ডা. মামুন আহমেদ, অব. বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইফুল ইসলাম এবং লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি ডা. জুবাইদা রহমান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে জনহোপকিংস হসপিটালের কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অংশ নেন।
৮১ বছর বয়েসী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।

No comments